যশোরে ২১ দিনের লকডাউন শেষ হয়েছে। এরপর বৃহস্পতিবার আবার সারাদেশের মতো সাতদিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। তবে সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী আছে। জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দেড়শ’ ছাড়াল।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও ৭ জনের মৃত্যুতে এ সংখ্যা ১৫২ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় উপসর্গ নিয়ে আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৪২ জনের। ৫৩৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে সনাক্তের এই সংখ্যা পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার সাতদিনের কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে যশোরে মাঠে নেমেছে ১১ প্লাটুন সেনা ও বিজিবি সদস্য। এরমধ্যে যশোরের আট উপজেলায় ৮ প্লাটুন সেনা ও ৩ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং পুলিশের শতাধিক চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
যশোর সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য কর্মকর্তা ডা. মো. রেহেনেওয়াজ জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার ৫৩৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৪২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারে ২৭৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪৮ জন, জিন এক্সপার্ট পরীক্ষায় ১৮ জনের মধ্যে ১০ জন এবং র্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষায় ২৪১ জনের মধ্যে ৮৪ জন করোনা পজিটিভ হয়েছেন। শনাক্তের হার ২৬ শতাংশ।
এই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৭ জন। এছাড়া এই সময়ে করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলায় মোট করোনা সনাক্ত হয়েছে ১২ হাজার ৫০৭ জনের। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৭ হাজার ৪৬৯ জন। জেলায় মোট মৃত্যু ১৫২ জনের।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আরিফ আহমেদ জানিয়েছেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৪ জন। এছাড়া উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। যশোর হাসপাতালের রেড জোনে এখন ভর্তি আছেন ১০৩ জন। এছাড়া উপসর্গ নিয়ে ইয়েলো জোনে ভর্তি আছেন আরও ৬১ জন।
লকডাউনের সার্বিক বিষয় নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে যশোর কালেক্টরেট চত্বরে ব্রিফিং করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে দেশজুড়ে নতুন করে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ করছে সিভিল প্রশাসন। আজ তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। জেলাজুড়ে ম্যাজিস্ট্রেটরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে মানুষকে ঘরে রাখতে ভূমিকা পালন করছেন।
যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার বলেন, করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে যশোরে মোট ৬০টি টিম কাজ করছে; যার মধ্যে সেনাবাহিনী ও বিজিবির দশটি করে টিম রয়েছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউই বাইরে বের হতে পারবেন না। কেউ যদি নির্দেশনা অমান্য করেন, তার বিরুদ্ধে প্রয়োজন হলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেনাবাহিনীর ৯ বেঙ্গল এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীন আলম বলেন, করোনা মহামারি মোকাবেলায় সেনাবাহিনী জনসচেতনতায় মাঠে আছে। ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের জিওসির নির্দেশনা মোতাবেক সেনাবাহিনীর কর্মতৎপরতা চলছে।
ব্রিফিং শেষে জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান, যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, সেনাবাহিনীর ৯ বেঙ্গল এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীন আলম, ৪৯ বিজিবি অধিনায়ক লে.কর্নেল সেলিম রেজা যশোর শহরের লকডাউন পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন।