নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
স্বয়ংক্রিয় কাচের দরজা টেনে ধরে রেখেছেন নিরাপত্তাকর্মী। দোকানের দরজা থেকে ভেতর পর্যন্ত মানুষের ভিড়। ছেলেদের কেউ দেখছেন পাঞ্জাবি-পায়জামা, কেউ বা শার্ট-প্যান্ট, টি-শার্ট। আবার মেয়েরা দেখছেন থ্রি-পিস, লং ড্রেসসহ নানা আইটেম। আবার কোনো দোকানে ১০ জন কর্মী থাকলে, সেখানে ক্রেতা আছেন ৬ জন। কোনো দোকানের কর্মী ভালো বিক্রি হচ্ছে জানালেও আবার কোনো দোকানের কর্মী জানিয়েছেন কম বিক্রির কথা। সবমিলিয়ে ঈদ উপলক্ষ্যে ব্যান্ড শপগুলোতে ক্রেতারা ভিড় করতে শুরু করেছেন।শনিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেএবং বিভিন্ন ব্র্যান্ড শপ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শপিং কমপ্লেক্সের আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিংয়ে গাড়ির ব্যাপক জটলা। পার্কিং থেকে একটি গাড়ি বের হচ্ছে তো আরেকটি ঢুকছে। আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে লেভেন সিক্স পর্যন্ত; প্রতিটি ফ্লোরেই ওঠানামা করছেন মানুষ। আর শপিং কমপ্লেক্সে ঢুকতেই প্রথম তলায় বিশাল খালি জায়গায় মানুষের বেশ সমাগম দেখা যায়। কেউ এস্কেলেটরে দোতলায় উঠছেন, আবার কেউ সিঁড়ি বেয়ে, কেউ কেউ ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে ফ্লোরের কোণায় বসে বিশ্রাম করেছেন; প্রতিটি ফ্লোরেই মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।
নিচতলার ব্র্যান্ড শপ রিচম্যানে দেখা যায়, ক্রেতার চেয়ে কর্মীর সংখ্যা বেশি। তাদের ওখানে রয়েছে পোলো টি-শার্ট, ক্যাজুয়াল শার্ট, ফরমাল শার্ট, ডেনিম প্যান্টসহ নানা আইটেম। কয়েকজন ক্রেতা থাকলেও তারা ঘুরে ঘুরে দেখছেন। তাদের সময় দিচ্ছেন বিক্রয়কর্মীরা।শপটির ম্যানেজার নুরুল ইসলাম বলেন, এখানের সব আইটেম ঈদকে ঘিরে আনা হয়েছে। রোজার শুরু থেকে তেমন ক্রেতা না এলেও গত শুক্রবার থেকে উপস্থিতি বাড়ছে। তবে বিক্রি এখনো আশানুরূপ শুরু হয়নি।
তার পাশেই রয়েছে ব্র্যান্ড শপ জেন্টেল পার্ক। সেই দোকানে একটু ভিন্নতা দেখা গেছে। ক্রেতার সমাগম কিছুটা বাড়তি মনে হয়েছে। জেন্টেল পার্কের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আরাফাত আহমেদ শুভ বলেন, আমাদের এখানে নতুন ডিজাইনের পাঞ্জাবি, টি-শার্ট আনা হয়েছে। ক্রেতারা শুক্রবার থেকে আসতে শুরু করছেন। সামনে তাদের সমাগম আরও বাড়বে বলে আশা করছি।
জেন্টেল পার্কের অদূরেই ব্র্যান্ড শপ ইয়েলো। সেখানে স্বয়ংক্রিয় কাচের দরজা টেনে ধরে রেখেছেন নিরাপত্তাকর্মী। দোকানের দরজাসহ ভেতর পর্যন্ত মানুষের ভিড়। হাঁটাচলা করার জায়গা নেই ভেতরে। ছেলেরা দেখছেন পাঞ্জাবি-পায়জামা, শার্ট-প্যান্ট, টি-শার্ট। আবার মেয়েরা দেখছেন থ্রি-পিস, লং ড্রেসসহ নানা আইটেম। আর কাউন্টারে কাপড়ের বিল করতে আসা মানুষের সিরিয়াল। মূলত এখানে এসেই বোঝা গেছে, ইদ সন্নিকটে।
ইয়েলোর ম্যানেজার (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, আগের পণ্যগুলো ক্লিয়ার সেলের মাধ্যমে ছাড়া হয়েছে। আর ইদ উপলক্ষ্যে নতুন ডিজাইনের অনেক প্রোডাক্ট আনা হয়েছে। এখন যত প্রোডাক্ট দেখছেন, সব ঈদকে কেন্দ্র করে আনা। ইয়েলো একটা ব্র্যান্ড, তাই মানুষের ভিড় এখানে বেশি।
ইয়েলো শপে কথা হয় ক্রেতা জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ইয়েলোর পাঞ্জাবি ও শার্ট আমি ভালো পেয়েছি। ওদের পোশাকের দাম সাধ্যের মধ্যেই। আজ এতো ভিড় হবে, বুঝতে পারিনি। এখানে হাঁটা-চলার মতো অবস্থা নেই।দ্বিতীয় তলায় এক্সেলেটেরের পাশেই ব্র্যান্ড শপ লুবনান। যেটি পাঞ্জাবির জন্য ব্যাপক পরিচিত। দোকানটিতে গিয়ে দেখা গেছে— নতুন কালেকশন নিয়ে তারা এবার হাজির হয়েছে। দোকানের ডিসপ্লেতে থাকা পাঞ্জাবিগুলো নারী-পুরুষ উভয়েই উল্টোপাল্টে দেখছেন। পছন্দ ও দামে মিললে কিনছেনও।
লুবনানের ম্যানেজার রিয়াজ হোসেন রাজু বলেন, আমাদের এখানে দুই হাজার ৫৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১২ হাজার ৯৯০ টাকা পর্যন্ত দামের পাঞ্জাবি আছে। দেশি ও ভারতীয় কাজের উপর নতুন অনেক কালেকশন আনা হয়েছে। ক্রেতা সমাগম শুক্রবার থেকেই বেড়েছে। ছুটির দিন হওয়ায় ক্রেতারা বেশি আসছেন। তবে এখনো সেই তুলনায় বিক্রি শুরু হয়নি।
শপিং কমপ্লেক্সের লেভেল ৪-এ রয়েছে দেশীয় তাঁত ও কারুশিল্পীদের তৈরি পোশাকের ব্র্যান্ড শপ ‘দেশী দশ’। এছাড়াও এখানে রয়েছে স্বনামধন্য ১০টি ফ্যাশন ব্র্যান্ড নিপুণ, কে ক্রাফট, অঞ্জনস, রং বাংলাদেশ, বাংলার মেলা, সাদাকালো, বিবিআনা, দেশাল, নগরদোলা ও সৃষ্টি। এসব দোকানে ক্রেতাদের ব্যাপক সমাগম দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে সাদাকালো, অঞ্জনস, রঙ বাংলাদেশ ও সৃষ্টির অংশে। এখানে রয়েছে ছেলেদের পাঞ্জাবি, শার্ট, ফতুয়া, মেয়েদের শাড়িসহ নানা আইটেম। সেখানের বিক্রয়কর্মীরাও জানিয়েছেন, গত দুই দিনে ভিড় বেশি ছিল। এছাড়া সবসময় কম-বেশি ভিড় লেগে থাকে।
অঞ্জনসের সামনে কথা হয় ক্রেতা আফসানা হক লিজার সঙ্গে। তিনি বলেন, ওদের সেলোয়ার কামিজ ও শাড়িগুলো ভালো হয়। নিজের ও পরিবারের জন্য আজ শপিংয়ে আসা। শুরুর দিকে আসলে ভালো ডিজাইনগুলো পাওয়া যায়। শেষের দিকে ভালো ডিজাইন বা সাইজগুলো পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়।হস্ত ও কারুশিল্পের ব্র্যান্ড শপ আড়ং রয়েছে শপিং কমপ্লেক্সের লেভেল ১ থেকে ৪ পর্যন্ত। ছেলে, মেয়ে ও শিশুদের জন্য তাদের রয়েছে আলাদ আলাদা ফ্লোর। তাদের প্রতিটি ফ্লোরেই রয়েছে ক্রেতাদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে।
ক্রেতাদের কেউ কেউ নিজ বা পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য কাপড় দেখছেন ও কিনছেন। একটু বয়স্ক মানুষদের বেশি দেখা গেছে পাঞ্জাবির সেকশনে। ছোট বাচ্চাদের জন্য কাপড় বাবা-মা পছন্দ করছেন। পছন্দ হলে সঙ্গে সঙ্গে সেটি বাচ্চাকে পরিয়েও দেখছেন। তবে আড়ংয়ের ইদ আয়োজন সম্পর্কে কোনো ফ্লোর ম্যানেজার কথা বলতে রাজি হননি।
নাজমুল হাসান মিলন নামে এক ক্রেতা বলেন, ঈদের তো আছে কয়েকদিন। আজ ছুটির দিন বলে এখানে আসতে পেরেছি। আর রোজার শুরুর দিকে হাতে কিছুটা ফ্রি সময় আছে। পরে আবার সময় নাও মিলতে পরে।আড়ংয়ের পোশাক সম্পর্কে তিনি বলেন, আড়ংয়ের পোশাক সার্বজনীন। মোটামুটি সব শ্রেণির মানুষই কিনতে পারে। তাদের ডিজাইনও ইউনিক।সর্বোপরি গত শুক্রবার থেকেই শপিং কমপ্লেক্সে ক্রেতারা আসতে শুরু করেছেন। সারা সপ্তাহের পাশাপাশি আগামী শুক্রবার ক্রেতার ভিড় ব্যাপক আকারে হবে বলে প্রত্যাশা করছেন বিভিন্ন আউটলেটের বিক্রয়কর্মীরা।