ভূমধ্যসাগরের সাগরের উত্তাল ঢেউ পেরিয়ে নিরাপদ জীবনের সন্ধানে ইউরোপ ছুটছিলেন একদল অভিবাসনপ্রত্যাশী। কিন্তু পথিমধ্যে লিবীয় কোস্টগার্ডের সামনে পড়েন তারা। এসময় লিবীয় বাহিনী তাদের দিকে গুলি ছোড়ে, নৌকায় ধাক্কা মারার চেষ্টা করে। এতে সামান্য এদিক-ওদিক হলেই তলিয়ে যেতে পারত ছোট নৌকাটি, প্রাণ যেত ডজন দুয়েক মানুষের। মাঝসমুদ্রে এমন ভয়াবহ দৃশ্য ধরা পড়েছে একটি পর্যবেক্ষক সংগঠনের ক্যামেরায়।
বার্তা সংস্থা এপির খবর অনুসারে, জার্মানি-ভিত্তিক বেসরকারি সংগঠন সি-ওয়াচ গত বুধবার ভূমধ্যসাগরে পর্যবেক্ষণ মিশন চালানোর সময় ওই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে। পরে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
প্লেন থেকে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, ছোট ইঞ্জিনচালিত কাঠের নৌকাটিতে প্রায় দুই ডজন অভিবাসনপ্রত্যাশী সমুদ্রপথে এগোচ্ছিলেন। এসময় তাদের তাড়া করছিল লিবীয় কোস্টগার্ডের একটি জাহাজ। এটি নৌকার চারপাশে বিপজ্জনকভাবে ঘুরছিল।
এসময় বেশ কয়েকবার জাহাজটি ছোট নৌকার একেবারে কাছাকাছি গিয়ে ধাক্কা মারার উপক্রম হয়। এছাড়া অন্তত দুবার তারা নৌকার দিকে গুলি চালায়।
Yesterday #Seabird witnessed a brutal attack by the so-called Libyan Coast Guard deep in the Maltese SAR zone. Our video shows: Shots have been fired in the direction of the boat, the so-called Libyan Coast Guard tried to ram the boat several times and threw objects at people. pic.twitter.com/0C2YSmcPoO
— Sea-Watch International (@seawatch_intl) July 1, 2021
সি-ওয়াচের তথ্যমতে, ঘটনাটি ঘটেছে আন্তর্জাতিক জলসীমায়, যেখানকার অনুসন্ধান ও উদ্ধার তৎপরতার দায়-দায়িত্ব মাল্টা সরকারের হাতে।
পর্যবেক্ষক সংগঠনটি বলেছে, তারা ঘটনাটির সময় রেডিওর মাধ্যমে লিবিয়ার কর্তৃপক্ষকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জীবন বিপণ্ন করা বন্ধ করতে অনুরোধ জানায়। সেসময় লিবীয়দের জবাব ছিল, তারা ওইসব অভিবাসনপ্রত্যাশীকে রক্ষার চেষ্টা করছে।
এক বিবৃতিতে সি-ওয়াচ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্লেনের জ্বালানি কম থাকায় নৌকা তাড়া করার ঘটনা পুরোটা না দেখেই তাদের ফিরে আসতে হয়। পরে তারা জানতে পেরেছে, নৌকাটি বৃহস্পতিবার সকালে ইতালির লাম্পেদুসা দ্বীপে পৌঁছেছে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত লিবিয়া, মাল্টা ও লাম্পেদুসা কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করেনি। তবে এর জেরে লিবিয়া কোস্টগার্ডকে সবধরনের সহায়তা দেয়া বন্ধ করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে সি-ওয়াচ।
সাম্প্রতিক সময়ে সংঘাত ও দারিদ্র্য থেকে বাঁচতে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের লাখ লাখ মানুষ নিজ দেশ ছেড়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিতে ভূমধ্যসাগরের বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিচ্ছে। এসময় অনেকেই সাগরে ডুবে প্রাণ হারাচ্ছেন। তারপরেও সাগরপথে জনস্রোত কোনভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না।
জানা গেছে, চলতি বছরে এ পর্যন্ত অন্তত ৭২৩ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন।
গত বুধবারই ভূমধ্যসাগরে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী একটি নৌকা উল্টে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। ইতালির লাম্পেদুসা দ্বীপ থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে নৌকাটি উল্টে যায়। সেখান থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয় ৪৬ জনকে।
এর আগে, গত ২৭ জুন ভূমধ্যসাগর থেকে ভাসমান অবস্থায় ১৭৮ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে তিউনিসিয়ার নৌবাহিনী, যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি। এর দু’দিন আগে উদ্ধার করা হয় আরও ২৬৪ বাংলাদেশিকে।
সম্প্রতি ইইউর সহযোগিতায় লিবীয় কোস্টগার্ড ইউরোপগামী অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নৌকা আটকে দেশে ফেরত পাঠানোর কার্যক্রম জোরদার করেছে। তবে জাতিসংঘসহ অন্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে তাদের ফেরত পাঠানোর নিন্দা জানিয়েছে।