কয়েক দফা দরপত্র আহ্বানেও কাঙ্ক্ষিত দাম মিলছে না চিটাগুড়ের

প্রকাশিত: ৪:১১ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৭, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি পঞ্চগড়

পঞ্চগড় সুগার মিলে অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে ২৪১ মেট্রিক টন চিটাগুড়। কয়েক দফা দরপত্র আহ্বান করেও বিক্রি হয়নি এসব চিটাগুড়। ২০২০ সালে চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে পড়ে থাকায় এর গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। মিল কর্তৃপক্ষ বলছে, বিদেশ থেকে চিটাগুড় আমদানি করার কারণে কাঙ্ক্ষিত দামে তারা চিটাগুড় বিক্রি করতে পারছে না।গত ৫ মার্চ আবারও দরপত্র আহ্বান করা হলে রমজান ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়। তবে তারা প্রত্যাশিত দাম না বলায় বিক্রি হয়নি।

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, প্রায় ২১ দশমিক ২৮ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছিল পঞ্চগড়ের এই চিনিকল। ২০০৫-০৬ অর্থবছর থেকে নানা কারণে লোকসান গুণতে শুরু করে কারখানাটি। ২০২০ সালে এসে লোকসানে পড়ে দেশের ছয়টি কারখানার সঙ্গে পঞ্চগড় চিনিকলেরও আখ মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় সরকার। আখ মাড়াই বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে উৎপাদিত চিটাগুড়ের গুণগত মান নষ্ট হওয়ার পথে। মিল কর্তৃপক্ষ বলছে, মজুদ থাকা অবশিষ্ট চিটাগুড় এভাবে পড়ে থাকলে এক পর্যায়ে নষ্ট হয়ে যাবে এর কার্যকারিতা। একাধিকবার দরপত্র আহ্বান করা হলেও মিলছে না আশানুরূপ দাম। তবে গুড়গুলো বিক্রির চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে ভারী শিল্পের এ খাতটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নষ্ট হতে চলেছে চিনি কলের মূল্যবান জিনিসপত্রও। ২০১৮ সালে ৬ কোটি ৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয়ে বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) নির্মাণ শুরু হলে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ ইটিপির নির্মাণ কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবিএম ওয়াটার কোম্পানি লিমিটেড। সুগার মিলটি গত ৪ বছর ধরে বন্ধ থাকায় মিলের পুরো এলাকা জুড়ে ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে আখ মাড়াই ও পরিবহনের মূল্যবান যন্ত্রপাতি।

২০২০ সালে চিনিকলে আখ মাড়াইয়ের বন্ধ হওয়ার আগে মজুদ ছিল ২৭৫৫ টন চিটাগুড়। মিল বন্ধের পর ২০২০ সালে ৫ মে প্রথম টেন্ডারে ১৬ হাজার ৭৫৭ টাকা দরে ৫০০ টন, ২০২১ সালের ১ জুন ২৬ হাজার ১৫১ টাকা দরে ৫০০ টন, ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর ২৯ হাজার টাকায় ২৫০ টন ও গত বছর ২০২৩ সালে ১৬ মে ২৫ হাজার ৫০০ টাকায় ২৫০ টন এবং ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট ১৮ হাজার ১০০ টাকায় ২৫০ টন চিটাগুড় বিক্রি করা হয়। এছাড়াও ২০২১ সালে দুই দফায় যশোরের কেরু অ্যান্ড কোং সুগার মিলে ৯০৯ টন চিটাগুড় পাঠানো হয়েছে।

এর আগে ২০০৯ সালে পঞ্চগড় সুগার মিলে আখ মাড়াই চলাকালীন গুড় উৎপাদন হয় ২২৪৮ টন। এরপর ২০১০ সালে ১৮৭৮ টন, ২০১১ সালে ২৪৮১ টন, ২০১২ সালে ১৯৯৬ টন, ২০১৩ সালে ১৮৬০ টন, ২০১৪ সালে ৩১০৩ টন, ২০১৫ সালে ১৯৬০ টন, ২০১৬ সালে ১৪৬৫ টন, ২০১৭ সালে ২০৩০ টন ও ২০১৮ সালে ২১১৫ টন চিটাগুড় উৎপাদন হয়।মিলের চিটাগুড় বিক্রির জন্য রাজধানী ঢাকায় ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে দূরত্বের কারণে ক্রয় প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবহন খরচ বেশি হওয়ার আশঙ্কায় আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এ কারণেই বিক্রি হচ্ছে না এসব চিটাগুড়।

পঞ্চগড় সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম  বলেন, মিলে চিটাগুড় মজুদ রয়েছে। আসলে চিটাগুড় বিক্রি করতে কিছু নীতিমালা রয়েছে। নীতিমালার বহির্ভূত অন্য কোনো উপায়ে চিটাগুড় বিক্রির সুযোগ নেই। কয়েক দফায় দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে। তবে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আশানুরূপ দাম পাওয়া যাচ্ছে না। গত চার বছর ধরে মিলে চিটাগুড় পড়ে থাকার কারণে এর গুণগত মান কিছুটা কমেছে। এ কারণেই ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো চিটাগুড় ক্রয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তবে আমরা চিটাগুড় বিক্রির সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

সুগার মিলস তো বন্ধ, জেলায় কোনো আখ চাষ হচ্ছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁও চিনিকলের তত্ত্বাবধানে ৩ হাজার ৮ হেক্টর জমিতে পঞ্চগড়ে আখ চাষ হচ্ছে। বর্তমান নতুন এমপি মহোদয় চিনিকলটি চালুর আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা আশা করছি চিনিকলটি আবার ঘুরে দাঁড়াবে।

পঞ্চগড়-১ আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে নাঈমুজ্জামান ভুঁইয়া মুক্তা নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি জেলার এ ভারী শিল্পটি চালুর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। ঠাকুরগাঁও চিনিকলের তত্ত্বাবধানে ৩ হাজার ৮ হেক্টর জমিতে পঞ্চগড়ে আখ চাষ হচ্ছে। চিনিকলের জমি রয়েছে ১০০ একর। ৩১টি ইক্ষুক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। আখ মাড়াই বন্ধ থাকায় এসব ইক্ষুক্রয় কেন্দ্রগুলো    অযত্ন   পড়ে রয়েছে। তবে মিল কর্তৃপক্ষ জানান, এসব ইক্ষুক্রয় কেন্দ্র লিজ দেওয়া হয়েছে।