জেলা প্রতিনিধি বগুরা
সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ছেলে ও ভাইকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন বগুড়া-১ আসনের এমপি সাহাদারা মান্নান। এই দু’জনের পক্ষে কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। তাঁর এই ঘোষণায় দুই উপজেলায় সাধারণ নেতাকর্মীর মাঝে ক্ষোভ ও বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলা নিয়ে বগুড়া-১ আসন। আসনটিতে আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মান্নান (প্রয়াত) কয়েক দফা এমপি ছিলেন। ২০১৯ সালে তাঁর মৃত্যুর পর স্ত্রী সাহাদারা মান্নান এমপি নির্বাচিত হন। এবার তিনি দ্বিতীয় দফায় এমপি হলেন।
আগামী ৮ মে সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলায় নির্বাচন হবে। সারিয়াকান্দিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে মাঠে নামেন ৮ জন। তাদের মধ্যে তিনজনকে আগাম সবুজ সংকেত দিয়েছিলেন এমপি সাহাদারা। স্থানীয় নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, উপজেলা নির্বাচন দলীয়ভাবে হচ্ছে না। তবে তপশিল ঘোষণার পর এমপির দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায়। ১৪ মার্চ প্রথমে সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে তিনি তাঁর বাসভবনে ডাকেন। সেখানে বৈঠকে এমপি জানতে চান উপজেলা চেয়ারম্যান পদে কারা প্রার্থী হতে ইচ্ছুক। এ সময় আটজন আগ্রহ প্রকাশ করেন। এর মধ্যে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান রেজাউল করিম মন্টু, দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রশিদ, যুবলীগ সভাপতি আইয়ুব তরফদার, সাধারণ সম্পাদক আশিক আহম্মেদ, কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান মিটু ও দলের নেতা আনসার আলী।
বৈঠকে দলের একজন এমপিপুত্র শাখাওয়াত হোসেন সজলের নাম প্রস্তাব করেন। এই প্রস্তাব শুনে অনেকেই বিস্মিত হন। এমপি নিজের ছেলের বিষয়ে ছিলেন নমনীয়। এ কারণে উপস্থিত সবাই ক্ষুব্ধ হলেও কেউ এ বিষয়ে বিরোধিতা করার সাহস পাননি। পরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নেতা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় এমপির আত্মীয়স্বজনে ভরা। তাঁর পরিবারের সদস্যরা ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করেন। এবার উপজেলার পদটি তাঁর প্রয়োজন। এ কারণে আওয়ামী লীগের কোনো পদে না থেকেও তাঁর ছেলে যোগ্যতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হয়।
একাধিক সূত্র জানায়, ২৩ মার্চ স্পিকারের সফরসঙ্গী হিসেবে এমপি সুইজারল্যান্ডে যান। এর আগে এমপি ২১ মার্চ হঠাৎ দলীয় নেতাকর্মীকে সারিয়াকান্দি ডিগ্রি কলেজের একটি কক্ষে ডেকে নেন। এ সময় তিনি ছেলে সজলকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করতে চান জানিয়ে সবাইকে কাজ করার নির্দেশ দেন। এর পরদিন তাঁর ছেলে সজল মাঠে নেমে পড়েন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহসভাপতি ও হাটফুলবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল তারিক বলেন, ‘এমপি ক্ষমতাকে পরিবারকেন্দ্রিক করার জন্য ছেলেকে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী করছেন। আমরা এটা মেনে নেব না। প্রয়োজনে দল থেকে একাধিক প্রার্থী হবে।’
অন্য এক নেতা বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সাহাদারা মান্নানের বিপক্ষে ছিলেন দলের অনেকেই। সেই দুঃসময়ে আমাকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন। এখন বিপদ কেটে গেছে। এ কারণে নির্বাচনের পর দেখছি ভোল পাল্টেছেন। তবে তাঁর নির্দেশনা মেনে নেওয়ার মতো নয়।’
এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম মন্টু আবারও চেয়ারম্যান প্রার্থী হচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এর আগেও এমপি আমার বিরোধিতা করেছিলেন। এবার এমপি তাঁর ছেলেকে প্রার্থী করেছেন। তাঁর এই নির্দেশনায় দলের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও সবাই ক্ষুব্ধ। এর প্রতিবাদ করতে আমি প্রার্থী হয়ে মাঠে নেমেছি।’
এমপিপুত্র শাখাওয়াত হোসেন সজল বলেন, ‘আম্মা আমাকে মাঠে নেমে জনমত যাচাই করতে বলেছেন। তাই মাঠে নেমেছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে সজল বলেন, তিনি দলের কোনো পদে নেই, তবে কর্মী। উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে তাঁকে সদস্যপদে রাখা হয়েছে।এদিকে সোনাতলা উপজেলায় এবারও প্রার্থী হয়েছেন এমপির ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান মিনহাদুজ্জামান লিটন। তাঁকেও একই কায়দায় এমপি সমর্থন দিয়েছেন বলে দলের অনেক নেতাকর্মী জানান।
মধুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি দবির উদ্দিন বলেন, এমপি মান্নানের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি তাঁর ভাইকে পুনরায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য ও সোনাতলার পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এমপি সবকিছু নিজের পরিবারের নিয়ন্ত্রণে নিতে ভাইকে পুনরায় উপজেলা চেয়ারম্যান করতে চাচ্ছেন। তবে বিরোধী পক্ষ বেশ শক্ত অবস্থানে আছে। চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহসভাপতি বর্তমানে ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার রহমান শান্ত।
জাকির হোসেন বলেন, ‘এমপি কৌশলে তাঁর ভাইকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি করেছেন এবার আবার উপজেলা চেয়ারম্যান করতে চান। আমি দল ও জনগণের সমর্থন নিয়ে প্রার্থী হতে যাচ্ছি।’তবে এমপির ভাই মিনহাদুজ্জামান লিটন বলেন, ‘দলীয় নেতাকর্মীর মতামতের ভিত্তিতেই প্রার্থী হচ্ছি। এখানে এমপির কোনো হাত নেই।’
এমপি সাহাদারা মান্নান এ ব্যাপারে বলেন, ‘আমি আমার ছেলেকে প্রার্থী করিনি। উপজেলার সর্বস্তরের নেতাকর্মীর অনুরোধে তাকে প্রার্থী ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছি। এ ছাড়া সোনাতলায় আমার ছোট ভাই আগে থেকেই উপজেলা চেয়ারম্যান। আমি শুধু বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের বলে দিয়েছি তার পক্ষে কাজ করতে।’