নিজস্ব প্রতিবেদক
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে আরও বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এডিবি ভাইস প্রেসিডেন্ট (সেক্টর ও থিমস) ফাতিমা ইয়াসমিনের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে এ বাজেট সহায়তা চান অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর দপ্তরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অর্থ বিভাগের সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী ও অর্থসচিব সাংবাদিকদের এডিবির কাছে আরও বাজেট সহায়তা চাওয়ার বিষয়টি জানান। আর এডিবি ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।
বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা এডিবির সঙ্গে সম্পর্ক ডেভেলপ করছি ৫০ বছর ধরে। এটা আরও ভালো হবে, আরও শক্তিশালী হবে। তার জন্যই আমরা সন্তুষ্ট।তিনি বলেন, আমরা এডিবির বার্ষিক সম্মেলনে যাচ্ছি। সেখানে আরও আলোচনা হবে। কিন্তু সো ফার আমরা খুবই হ্যাপি। যেভাবে উন্নত হচ্ছে এবং আমাদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং, তারা আমাদের প্রয়োজন বুঝতে পারছে। আমরা খুবই সন্তুষ্ট।
এসময় অর্থসচিব বলেন, এডিবি আমাদের ৫০ বছরের বন্ধু। আমরা এডিবির কাছ থেকে ফান্ড পেয়ে আসছি, ভবিষ্যতে যেন আরও পাই, সেজন্য স্যার (অর্থমন্ত্রী) রিকুয়েস্ট করেছেন। বিশেষ করে বাজেট সাপোর্ট আমাদের নতুন উইন্ডো, বাজেট সাপোর্টে এডিবি আমাদের অনেক হেল্প করেছে।
তিনি বলেন, করোনার সময় আমাদের বাজেট সাপোর্ট দেওয়ায় আমরা ইকোনমির দ্রুত রিকভারি করতে পেরেছি। এই বাজেট সাপোর্ট যাতে আরও বাড়ে সেজন্য স্যার রিকোয়েস্ট করেছেন।আরও বাজেট সাপোর্ট চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এডিবির পক্ষ থেকে কি বলা হয়েছে– সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ফাতেমা ইয়াসমিন বলেন, আলোচনা করছি আমরা।
এরপর অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেট সাপোর্টও দেবে। দেবে তো। তারা আসছেই তো এজন্য।আমাদের অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এডিবি প্রতিনিধি দলের কোনো অবজারভেশন আছে কি না– এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, না কোনো অবজারভেশন নেই। তারা খুব খুশি।
এদিকে চলতি বছরের জন্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে ৪০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় চার হাজার কোটি টাকার বেশি) বাজেট সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এডিবি। গত বছরের ১১ ডিসেম্বরে এ বিষয়ে চুক্তি সই হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে থেকেও ৯ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।
ইআরডির তথ্য মতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি আট মাসে সুদ ও আসল বাবদ আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের প্রায় ২০৩ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে সরকার। গত অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধ করেছিল ১৪২ কোটি ডলার। অর্থাৎ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। এর মধ্যে সুদ পরিশোধ করা হয়েছে ৮০ কোটি ৬০ লাখ ডলার (৮০৬ মিলিয়ন)। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা দ্বিগুণ।
সাম্প্রতিক অর্থবছরগুলোয় সরকারের বাজেট সহায়তা নেওয়ার পরিমাণ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। মূলত করোনা-পরবর্তী সময়ে টিকা কেনা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য বাজেট সহায়তার পরিমাণ বেড়েছে। এ ছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকার বাজেট সহায়তা নেওয়ার কার্যক্রম জোরদার হয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার ১৭৬ কোটি ডলার, ২০২২১-২২ অর্থবছরে ২৫৯ কোটি এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ১০৯ কোটি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা নেয় সরকার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেট সহায়তার পরিমাণ ছিল প্রায় ২৫ কোটি ডলার।