ইসলামী ডেস্ক রিপোর্টঃ
পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর আজ। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে শনিবার সন্ধ্যা থেকে সারাদেশে পবিত্র শবে কদর পালিত হবে। পবিত্র এ মাসের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ সময়টি হচ্ছে শবে কদর। ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই মহিমান্বিত রাতটির ব্যাপক প্রভাব রয়েছে ইসলামী জীবন ব্যবস্থায়।
প্রতি বছর এই সময়টিতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদেরকে নিয়োজিত করেন। তবে রমজানের ঠিক কততম দিনে এই রাতের আগমন ঘটে সে ব্যাপারে কোনও সুনির্দিষ্ট করা তারিখ নেই। হাদীস অনুসারে মাসের একটি নির্দিষ্ট পরিসরের রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর অন্বেষণের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
‘কদর’ আরবি শব্দ, যার বাংলা মানে ভাগ্যের পরিমাপ বা পরিধি বোঝানো হয়। আর শব শব্দটি ফার্সি ভাষার, যার অর্থ রাত। এছাড়া এই রাতের অন্যান্য নামগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘লাইলাতুল কদর’ (সৌভাগ্যের রাত), ‘লাইলাতুল আযমা’ (মহত্বের রাত) এবং ‘লাইলাত আল-শরাফ’ (সম্মানের রাত)।
আজ সূর্যাস্তের পর শুরু হবে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম ও মহিমান্বিত রজনী শবে কদর। যদিও কোথাও স্পষ্ট করে বলা নেই শবে কদরের নির্দিষ্ট দিন সম্পর্কে। তারপরও ইসলামি চিন্তাবিদ ও বুজুর্গরা নিজস্ব ইজতিহাদ, গবেষণা ও গাণিতিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে রমজানের ২৭তম রাতে লাইলাতুল কদর হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা জোর দিয়ে বলে গেছেন। সে হিসেবে রমজানের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতকে লাইলাতুল কদর হিসেবে একটু বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
কোরআনের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় শবে কদর রমজান মাসে। কিন্তু এর সঠিক তারিখ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন বক্তব্য পাওয়া যায় না। ইসলামি স্কলারগণ বিভিন্ন হাদিস পর্যালোচনা করে বলেন, শবেকদর রমজান মাসের শেষ দশ দিনের মধ্যে আসে। কিন্তু এরও কোনো তারিখ নির্দিষ্ট নেই বরং যেকোনো রাতে হতে পারে। আবার প্রত্যেক রমজানে তা পরিবর্তিতও হতে পারে। তবে বুখারি ও মুসলিম সহ বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থ অনুযায়ী এটি রমজানের শেষ দশ দিনের বিজোড় রাতগুলোর যে কোনও একটি। অর্থাৎ সুস্পষ্টভাবে রমজানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তম রাতগুলোর প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
পবিত্র কোরআন শরীফের প্রথম ৫ আয়াত ৬১০ হিজরী সনের এই রাতে নাজিল হয়েছিল। মক্কার জাবালে নূর পর্বতের হেরা গুহায় ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.) মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে এসেছিলেন আল্লাহর বাণী নিয়ে। এটি ছিল আল কুরআনের ৯৬-তম সূরা আল আলাকের প্রথম ৫টি আয়াত। এরপর থেকে টানা ২৩ বছরে পুরো কুরআন নাজিল সম্পন্ন হয়।
এই মূল্যবান রাতটিকে উদ্দেশ্য করে কোরআন মাজিদের সম্পূর্ণ একটি সূরাই রয়েছে। এখানে বলা হয়েছে যে, কদরের রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। অর্থাৎ এই এক রাতের একটি মাত্র নেক আমল হাজার মাসের বরকত নিয়ে আসে। সারা জীবন ইবাদত করেও এ রাতের ইবাদতের মাধ্যমে যে বরকত পাওয়া যায় তার সমান হবে না। একই সঙ্গে এটি আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা পাওয়ার রাত। এই সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত মুসলমানদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য এবং আশীর্বাদ লাভের পরম সুযোগ। যারা এই সময় ঈমানের সঙ্গে নামাজ পড়বে, তাদের পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।
শবে কদরের বরকত ও কল্যাণ প্রাপ্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজন বেশি বেশি তওবা ইসতেগফার পড়া, নফল নামাজ পড়া, কোরআন তিলাওয়াত করা, জিকির-আজকার করা, দান-খয়রাত করা, দরূদ শরিফ পড়া, পরিবার পরিজন ও মা বাবার জন্য দোয়া করা, মৃতদের জন্য মাগফিরাত কামনা করা, কবর জিয়ারত করা, রাতে তারাবির নামাজ পড়া, শেষ রাতে সেহরির আগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। এভাবে সারা রাত ইবাদতে কাটানো কাম্য। তবেই মহিমান্বিত এই রাতের ফজিলত ও বরকত দ্বারা উপকৃত হওয়া যাবে।
এছাড়াও কদরের রাতে রাসুল (সা.) বিশেষ দোয়া পাঠ করার কথা বলেছেন। তা হলো— আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন কারিমুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি। অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল এবং ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব আমাকে ক্ষমা করুন। -তিরমিজি ৩৫১৩।এই করণীয়গুলোর প্রতি পূর্ণ নিবেদন সম্ভব হতে পারে শবে কদরের গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে হৃদয়ে ধারণ করার মাধ্যমে। শুধু সওয়াব অর্জনই নয়, কদরের রাত উদযাপনের মাধ্যমে প্রকাশ পায় মহান আল্লাহর প্রতি বান্দার আনুগত্য।