দিনে প্রায় ১৮ কোটি লিটার পানির বিল পাচ্ছে না চট্টগ্রাম ওয়াসা!
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
জেলা প্রতিনিধি,চট্টগ্রামঃ
চট্টগ্রাম ওয়াসা দৈনিক প্রায় ১৮ কোটি লিটার পানির বিল পাচ্ছে না। এসব পানি সিস্টেম লসের হিসাবে দেখানো হচ্ছে। ওয়াসা বর্তমানে দৈনিক প্রায় ৪৭ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে থাকেন। ওয়াসা কর্মকর্তারা জানান, সিস্টেম লস প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ হারে উঠানামা করছে। পানির চুরির কারণে কর্তৃপক্ষ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ওয়াসা পরিচালনা বোর্ড সিস্টেম লস কমানো ও রাজস্ব আয় বাড়ানো নিয়ে কমিটি করে দিলেও কোনো সুফল মিলছে না।
চট্টগ্রাম ওয়াসায় রাজস্ব বিভাগের অনিয়ম অনেক পুরোনো। প্রচুর বিল অনাদায়ি পড়ে রয়েছে। যার পরিমাণ প্রায় ১২০ কোটি। আবার প্রায় ১০ হাজার সংযোগের ন্যূনতম ৬০০ টাকা বিল গ্রাহকদের দেওয়া হচ্ছে। এসব গ্রাহকের অভিযোগ, তারা পানি পাচ্ছে না। ন্যূনতম বিল নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এসব গ্রাহক থেকে রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আর্থিক সুবিধা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। সরকার হাজারো টাকা খরচ করে বিদেশি ঋণ নিয়ে গত ১২/১৩ বছরে তিনটি পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু উৎপাদিত বাড়তির পানির বিল পাচ্ছে না ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।
ওয়াসা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে ৩০ শতাংশ, ডিসেম্বর মাসে ৩১ শতাংশ, নভেম্বর মাসে ৩১ শতাংশ, অক্টোবর মাসে ৩১ শতাংশ, সেপ্টেম্বর মাসে ৩১ শতাংশ, আগস্টে ৩২ শতাংশ ও জুলাই মাসে ৩৫ শতাংশ সিস্টেম লস দেখানো হয়েছে। যদিও সিস্টেম লসের পরিমাণ আরও বেশি হবে বলে জানা গেছে। কিন্তু কোনোভাবে সিস্টেম লস কমানো যাচ্ছে না। জানতে চাইলে ওয়াসার দায়িত্বরত কর্মকর্তারা নানা অজুহাত উল্লেখ করে থাকেন।
জানতে চাইলে ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক কাজী শহীদুল ইসলাম বলেন, সিস্টেম লসের সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। সরবরাহ লাইনের বিভিন্ন স্থানে ছিদ্র দিয়ে অনেক পানি অপচয় হচ্ছে। আরও অনেক বিষয় রয়েছে। আমরা সিস্টেম লস কমানোর জন্য কাজ করছি।’ ওয়াসায় প্রায় ৯০ হাজার পানির সংযোগ রয়েছে। মিটার রিডার রয়েছে প্রায় ৩৮ জন। এত কম লোক দিয়ে সঠিকভাবে গ্রাহক পর্যায়ে রিডিং সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে মিটার রিডারগণ নিজেরাই বহিরাগত লোক দিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে রিডিং সংগ্রহ ও বিল পৌঁছানোর অভিযোগ উঠেছে। এতে রাজস্ব আদায়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রবণতা বেড়েছে। বিল নিয়ে হচ্ছে নানা অনিয়ম। ওয়াসায় প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ পানির নতুন সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াসার পরিচালনা বোর্ডের এক সদস্য জানান, নতুন পানির অনেক সংযোগ রয়েছে তিন-চার বছরেও বিলের আওতায় আসেনি। এসব গ্রাহক ম্যানেজ করে পানি ব্যবহার করে চলেছে।
গত এক দশকের মধ্যে মিটার রিডার পদে কোনো জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সহকারী পাম্প অপারেটর থেকে ডেপুটেশনের লোক দিয়ে মিটার রিডারের কাজ করানো হয়। পরবর্তী সময় তারা স্থায়ী হওয়ার জন্য নতুন লোক নিয়োগের সিবিএর মাধ্যমে বাধার সৃষ্টি করে। ফলে কয়েক বার লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েও মিটার রিডার নিয়োগ করা যায়নি। মিটার রিডারদের অভিযোগ, সীমিত জনবল দিয়ে এতগুলো সংযোগের মিটার থেকে রিডিং সংগ্রহ সম্ভব হচ্ছে না। এতে অনুমাননির্ভর রিডিং দেখিয়ে গ্রাহকদের বিল ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে বিল কম দেখিয়ে গ্রাহক থেকে আর্থিক সুবিধা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
জানতে চাইলে ওয়াসা প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রুমন দে বলেন, নগরীর কয়েক জায়গায় আমাদের ১০টি টিম কাজ করছে। তারা পাইপলাইনে কোনো ছিদ্র আছে কিনা বা অবৈধ সংযোগ আছে কিনা তা দেখছে। মাটি ভরাটের কারণে অনেক পাইপলাইন অনেক মাটির নিচে চলে গেছে। এখন এসব পাইপলাইনে ছিদ্র দিয়ে পানি অপচয় হচ্ছে কিনা তা দেখা যাচ্ছে না। মিটার রিডার পদে জনবল সংকটের কারণে সঠিক রিডিং সংগ্রহ করে বিলিং করাও ব্যাহত হচ্ছে। ৯০ হাজার পানির সংযোগের জন্য মাত্র ৩৮ জন মিটার রিডার রয়েছে। ফলে সিস্টেম লস নিয়ে আমরা কাজ করছি।’