থানায় আসামি ছিনতাইচেষ্টা, ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুই মামলা
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
জেলা প্রতিনিধি,বগুড়া:
থানায় ঢুকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মাঝিরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুজ্জামানসহ তার আট সহযোগীর বিরুদ্ধে দুইটি মামলা করেছে পুলিশ। রোববার (৭ এপ্রিল) শাজাহানপুর থানা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দুইটি দায়ের করে।
শাজাহানপুর থানা পুলিশের ওসি শহীদুল ইসলাম বলেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় নুরুজ্জামানসহ ৪৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত অনেককে আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়াও আগ্নেয়াস্ত্রসহ মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় নুরুজ্জামান ও তার সহযোগী নাজমুলের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে। থানা পুলিশের এসআই আনিুসর রহমান ও ফারুক হোসনে বাদী হয়ে মামলা দুইটি দায়ের করেন।
এর আগে স্বেচ্ছসেবক লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।এদিকে গ্রেফতারের পর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামানরে দেওয়ার তথ্যের ভিত্তিতে রোববার ভোরে তিন বোতল ফেনসিডিল, দুইটি ৭ দশমিক ৬৫ মডেলের বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও ম্যাগাজিনসহ ১৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীদের ৩৬টি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।
আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন, এসআই আনিসুর রহমান, কনস্টেবল ইসমাইল হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম ও রুহুল আমিন। বাকি একজনের পরিচয় জানা যায়নি।ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামানসহ গ্রেফতার বাকিরা হলেন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি সাইদুর রহমান, আড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মিতুল হাসান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী সাদ্দাম রবীন, রমজান আলী, বোরহান উদ্দিন, মিরাজুল রহমান, আমিনুল ইসলাম ও ওহাবুজ্জামান নাঈম।
জানা যায়, শনিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে উপজেলার আড়িয়া বাজার থেকে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মিঠুনকে দু’টি বার্মিজ চাকুসহ আটক করা হয়। ওই সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে ছাড়িয়ে নিতে দায়িত্বরত এসআই আনিসুরকে ফোন দেন ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান। তবে মিঠুনকে ছেড়ে না দিয়ে থানায় নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হন তিনি। রাত সাড়ে ১০টার দিকে নুরুজ্জামান স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী নিয়ে থানায় প্রবেশ করে চাকুসহ আটক মিঠুনকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তাদের বাধা দিতে গেলে শাজাহানপুর থানা পুলিশের ওসি শহীদুল ইসলামসহ দায়ত্বিরত পুলিশ সদস্যদের ধাক্কাধাক্কি ও হেনস্তা করা হয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানোর পর ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে থানা থেকে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সেখানে ছত্রভঙ্গ হওয়া পর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে মাঝিড়া বন্দরে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীরা।
তাদের সরিয়ে দিতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। একপর্যায়ে সড়ক অবরোধকারীদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে নুরুজ্জামানসহ আট জনকে আটক করে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। এই সময় ৩৬টি মোটারসাইকেল জব্দ করে পুলিশ।থানা হেফাজতে নেওয়ার পর নুরুজ্জামানের দেওয়া তথ্য মোতাবেক রাতেই তার বাসায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় একটি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও ম্যাগাজিনসহ সাতটি গুলি উদ্ধার হয়। এ ছাড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান নাজমুলের বাগানবাড়ি থেকে তিন বোতল ফেনসিডিল, একটি আগ্নেয়স্ত্র ও আটটি গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। তবে নাজমুল পলাতক।
পুলিশ জানায়, নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, জমি দখল, সরকারি কাজে বাধা, মাদক আইনে ৮টি মামলা রয়েছে। এরআগে সরকারি টেন্ডার চুরির ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান বরখাস্ত হয়েছিলেন।বগুড়া পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, অপরাধ করার চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যারাই অবনত করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র দুইটি অবৈধ। গ্রেফতার ৯ জনকে আরও অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে।
জানতে চাইলে বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলি শান্ত বলেন, নুরুজ্জামানের বিষয়ে কেন্দ্রে জানানো হয়েছে। দ্রুত তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংগঠনের আড়ালে কারও অপরাধ করার সুযোগ নেই।