কিশোরগঞ্জে দীর্ঘ সময় লোডশেডিং, পোশাক ডেলিভারি নিয়ে শঙ্কায় দর্জিরা

প্রকাশিত: ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৯, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি,কিশোরগঞ্জঃ 

কিশোরগঞ্জে কিছুদিন ধরে দীর্ঘ সময় চলছে লোডশেডিং। ঈদ উপলক্ষে প্রতিটি দর্জির দোকানেই কাজের ভীষণ চাপ। তবে পায়ে মেশিন চালিয়ে পোশাক সেলাই করার দিন শেষ। সেটা গ্রামের হাটবাজারে কিছু দোকানে টিকে আছে। কিন্তু এই আধুনিক যুগে শহরের প্রতিটি নামিদামি টেইলারিং শপে পোশাক সেলাই করা হয় বিদ্যুৎচালিত মেশিনে। আর ঈদের এই ব্যস্ত সময়ে কাজের মারাত্মক বিঘ্ন ঘটাচ্ছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। দিনে কয়েকবার করে এক থেকে দুই ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ যাচ্ছে। ফলে সপ্তাহখানেক আগেই নতুন অর্ডার নেওয়া বন্ধ রেখেছেন টেইলার মালিকরা। যেসব অর্ডার আছে, সেগুলোও ঈদের আগে ডেলিভারি দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে রয়েছেন শঙ্কায়। কয়েকজন টেইলার মালিকের সঙ্গে আলাপ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

টেইলারিং শপগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লোডশেডিংয়ের কারণে পোশাক তৈরির হার কমে গেছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকলে একজন কারিগর দৈনিক যে পরিমাণ পোশাক তৈরি করতে পারতেন, এখন এর এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। ফলে ঈদ উপলক্ষে যেসব অর্ডার নেওয়া আছে, সেগুলো ঈদের আগে ডেলিভারি দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে মালিকরা শঙ্কায় আছেন। যে কারণে অন্তত সপ্তাহখানেক আগে থেকেই নতুন অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

শহরের ঈশাখাঁ রোডেই মূলত প্রধান প্রধান টেইলারিং শপ। সেখানকার ঢাকা টেইলার্সের মালিক আব্দুল আউয়াল জানিয়েছেন, তাঁর কারখানায় ১২ জন কারিগর সকাল থেকে কাজ শুরু করেন। এখানে পাঁচ কিলোমিটার দূরের নীলগঞ্জ এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহের নান্দাইলের কারিগরও কাজ করেন। একজন কারিগর দৈনিক চারটি প্যান্ট আর একজন কারিগর ছয়টি শার্ট তৈরি করতে পারতেন। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে তাঁরা এখন চারটি শার্ট আর তিনটি প্যান্ট তৈরি করতে পারেন। মেয়েদের পোশাকেরও একই অবস্থা। আব্দুল আউয়াল জানান, দূরের কারিগররা রাত ৮টায় বাড়ি ফিরতেন। এখন ফিরতে হয় রাত ১টায়। তিনদিন আগে লোডশেডিংয়ের সময় আব্দুল আউয়ালের কারখানার ২৮ হাজার টাকা দামের একটি জ্যাক-এফ৫ সেলাই মেশিন জোরে শব্দ করে সার্কিট পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে কাজের বিঘ্ন ঘটছে। তাঁর কারখানার কারিগর নিটোল পালসহ সবাই কাজের ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন।

একই এলাকার মডার্ন টেইলার্সের মালিক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, তাঁর কারখানায় ৭ জন কারিগর কাজ করেন। এ কারখানায়ও কাজের গতি কমে গেছে। যে কারণে জমে থাকা পোশাকগুলো সময়মত ডেলিভারি দিতে পারবেন কি না, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। তিনিও নতুন করে কোন অর্ডার নিচ্ছেন না। একই এলাকার সানমুন টেইলার্স ও আইডিয়াল টেইলার্সসহ সকল টেইলার্সেরই একই অবস্থা।

কিশোরগঞ্জ পিডিবি অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মো. আহসান হাবিব জানিয়েছেন, কিশোরগঞ্জ শহরে দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ৩০ থেকে ৩২ মেগাওয়াট। মধ্যরাত থেকে দুপুরের আগ পর্যন্ত চাহিদা থাকে ২২ থেকে ২৫ মেগাওয়াট। কিন্তু কিছুদিন যাবত চাহিদার ৬০ থেকে ৭০ ভাগ বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। যে কারণে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। তিনি জানান, শহরতলীর যশোদল পাওয়ার গ্রিড থেকে পিডিবি অফিসকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তারা চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ না দিতে পারলে তখন লোডশেডিং দিতে হয়।

যশোদল পাওয়ার গ্রিডের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী প্রকৌশলী অনাথ বন্ধু আচার্য জানিয়েছেন, এই গ্রিডে আশুগঞ্জ থেকে বিদ্যুৎ আসে। এরপর সেখান থেকে কিশোরগঞ্জ এবং ময়মনসিংহে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হয়। এই গ্রিডের দৈনিক চাহিদা আছে ১৬০ মেগাওয়াট। কিন্তু কিছুদিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ মেগাওয়াট। তবে এই গ্রিডের উন্নয়ন কাজ চলছে। এ বছরের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। তখন ২৪০ মেগাওয়াট চাহিদা থাকলেও সেটা পাওয়া যাবে। ফলে উন্নয়ন কাজ শেষ হলে লোডশেডিং সঙ্কট কেটে যাবে বলে তিনি মনে করছেন।