তিউনিসিয়াজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করে পার্লামেন্ট স্থগিত করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট।
কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় সরকারের অব্যস্থাপনায় ক্ষুব্ধ হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রোববার রাস্তায় নেমে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়।
এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত ও পার্লামেন্ট স্থগিত করে প্রেসিডেন্ট কায়িস সায়িদ ঘোষণা করেছেন, তিনি নতুন একজন প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় দায়িত্ব গ্রহণ করবেন; দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনাই তার লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন তিনি।
কিন্তু বিরোধীদলগুলো তার এ পদক্ষেপকে অভ্যুত্থান বলে অভিহিত করেছে, জানিয়েছে বিবিসি।
প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে এক জরুরি নিরাপত্তা বৈঠকের পর টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে সায়িদ বলেন, “আমরা এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিউনিসিয়ায় সামাজিক শান্তি ফিরে না আসা পর্যন্ত এবং যতক্ষণ না আমরা রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে পারি এসব সিদ্ধান্ত বজায় থাকবে।”
প্রধানমন্ত্রী হিশাম মেশিশিকে বরখাস্ত করা হয়েছে, রোববার রাতে এমন খবর আসার পর রাস্তায় থাকা বিক্ষোভকারীরা উল্লাসে ফেটে পড়ে। রাজধানী তুনিসসহ বিভিন্ন শহরে সায়িদের সমর্থনে বহু লোক রাস্তায় নেমে আসে। তারা উল্লাস করতে থাকে এবং গাড়ির হর্ন বাজাতে থাকে; এতে এই দেশটি থেকে শুরু হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যকে ওলটপালট করে দেওয়া ‘আরব বসন্তের’ প্রতিবাদের মতো দৃশ্যের অবতারণা হয় বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
২০১১ সালের ওই গণঅভ্যুত্থানের কেন্দ্রস্থল তুনিসের হাবিব বুরগিবা অ্যাভিনিউ তার সমর্থকদের দিয়ে ভর্তি হয়ে যাওয়ার পর সায়িদ সেখানে এসে তাদের সঙ্গে যোগ দেন, দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ছবিতে এমনটি দেখা গেছে।
তবে ভঙ্গুর সরকার এবং বিভক্ত পার্লামেন্টের বিরুদ্ধে সায়িদের এই পদক্ষেপের প্রতি সমর্থনের ব্যাপ্তি কতোটা তা পরিষ্কার নয় বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
পার্লামেন্টের স্পিকার রাশেদ ঘানৌশি প্রেসিডেন্টের এ পদক্ষেপকে ‘অভ্যুত্থান’ অভিহিত করে তা প্রতিহত করতে জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে সায়িদ যে কোনো সহিংস প্রতিবাদের প্রতি হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেছেন, “যারা অস্ত্র নিয়ে নামার কথা ভাবছেন তাদের সতর্ক করে বলছি, যে কেউ একটি গুলি ছুড়লে সশস্ত্র বাহিনী গুলি ছুড়ে তার জবাব দিবে।”
তার এ বিবৃতির কয়েক ঘণ্টা পর সামরিক গাড়িগুলো পার্লামেন্ট ভবন ঘিরে ফেলে, এ সময় আশপাশে থাকা লোকজন উল্লাস করছিল ও জাতীয় সংগীত গাইছিল বলে দুই প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন।
সেনাবাহিনী রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন ভবনও ঘিরে রেখেছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।
কয়েক বছর ধরে চলা অচলাবস্থা, ক্রমহ্রাসমান রাষ্ট্রীয় পরিষেবা ও বাড়তে থাকা বেকারত্বের কারণে ইতোমধ্যেই অনেক তিউনিসীয় তাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ছিল। এরপর গত বছর কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার পর দেশটির অর্থনীতি টালমাটাল হয়ে ওঠে এবং চলতি গ্রীষ্মে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হার বাড়তে শুরু করে।
এ পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভের ডাক দেয়। কোনো রাজনৈতিক দল তাতে সমর্থন না দিলেও রোববার তুনিসে ও অন্যান্য শহরে হাজার হাজার প্রতিবাদকারী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে।
তাদের ক্ষোভের প্রধান লক্ষ্য ছিল পার্লামেন্টের বৃহত্তম দল ইসলামপন্থি এন্নাহদা পার্টি। বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করার দাবি জানায় ও ‘সরে যাও!’ বলে শ্লোগান দেয়।
বিক্ষোভকারীরা ক্ষমতাসীন এন্নাহদা পার্টির কার্যালয়গুলো ভাংচুর করে। তারা তৌজেউর প্রদেশ এন্নাহদা পার্টির স্থানীয় কার্যালয়ের কম্পিউটার ভাংচুর করে ও কার্যালয়টিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
‘আরব বসন্তের’ আগে নিষিদ্ধ থাকা এন্নাহদা ২০১১ সালের পর থেকে তিউনিসিয়ার সবচেয়ে ধারাবাহিক সফল দলে পরিণত হয় এবং ক্ষমতাসীন জোট সরকারের তারা বড় অংশীদার ছিল।
দলটির নেতা পার্লামেন্টের স্পিকার ঘানৌশি প্রেসিডেন্ট সায়িদের ঘোষণার পরপরই রয়টার্সকে ফোন করে তার সিদ্ধান্তকে ‘বিপ্লবের ও সংবিধানের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান’ বলে বর্ণনা করেছেন।