১২০ বছর অপেক্ষার অবসান লেভারকুসেনের

প্রকাশিত: ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৬, ২০২৪

স্পোর্টস ডেস্ক রিপোর্টঃ 

১৯৯৬ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচ মৌসুমে বুন্দেসলিগায় শিরোপার খুব কাছাকাছি গিয়েও ছুয়ে দেখা হয়নি জার্মান ক্লাব বায়ার লেভারকুসেনের। প্রতিবারই পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে থেকেই আসর শেষ করেছিলো, সেসময় অনেকে ‘লেভারকুসেন’কে উপহাস করে ডাকতে শুরু করে ‘নেভারকুসেন’ নামে।

সেই ধারাই চলছিলো গত মৌসুম অবদি। তবে এক মৌসুমে বদলে গিয়েছে পুরো ক্লাবের চিত্র। কোচ হিসেবে জাভি আলনসো দায়িত্ব নেয়ার পর তো হারতেই ভুলে গিয়েছে। লিগে এখন পর্যন্ত ২৯ ম্যাচ এবং সবমিলিয়ে টানা ৪২ ম্যাচ অপরাজিত রয়েছে তারা। যার জন্য এখন সমর্থকরা লেভারকুসেনকে এখন ভালোবেসে নাম দিয়েছে ‘নেভারলুজেন’। আর ক্লাবটির এমন ধারাবাহিকতায় নিজেদের ১২০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এবং ১৩তম দল হিসেবে জার্মানের র্শীষ ঘরোয়া টুর্নামেন্ট বুন্দেসলিগার শিরোপা জয়ের স্বাধ পেয়েছে লেভারকুসেন। তাও আবার পাঁচম্যাচ হাতে রেখেই।

গেল রবিবার রাতে ওয়ার্ডার ব্রেমেনকে ৫-০ গোলের বড় ব্যাবধানে হারায় লেভারকুসেন। পয়েন্ট টেবিলে বায়ার্ন মিউনিখের ছেয়ে ১৬ পয়েন্ট এগিয়ে থেকে শিরোপা জয়ের স্বাধ পায় লেভারকুসেন। এই ম্যাচে চ্যাম্পিয়নদের হয়ে হ্যাটট্রিকের দেখা পায় ফ্লোরিয়ান ওয়ার্টজ। সেইসঙ্গে চলতি মৌসুমে ২৯ ম্যাচ খেলে ১০ গোল এবং ১১ এসিস্ট করেন এই জার্মান মিডফিল্ডার। এছাড়াও ইউরোপা লিগে ৭ ম্যাচ খেলে ৩টি গোলের পাশাপাশি ৪টি গোলের সহায়তা করেন ওয়ার্টজ। এছাড়াও এই ম্যাচে একটি করে গোল আসে ভিক্টর বোনিফেস এবং গ্রানিত শাকার পা থেকে। আর তাতেই নিশ্চিত হয়ে যায় প্রথম শিরোপা।

ম্যাচ জয়ের পর গ্যালারীতে থাকা লেভারকুসের দর্শকদের চোখ থেকে ঝরে খুশির অশ্রু। অনেকে প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেড়ে পড়েন। মুহূর্তেই গ্যালারির বেড়া টপকিয়ে সবাই ঢুকে যায় স্টেডিয়ামের মধ্যে। মাঠে ঘাসে হাটু ঘেড়ে বসে পড়ে অনেক খেলোয়াড়দের ঘিরে শুরু করে শুরু করে শিরোপা উল্লাস। তবে শুধু এখানেই নয় বাহিরেও রাজপথে বিজয়উল্লাস করেন লেভারকুসের ভক্ত-সমর্থকরা। দর্শকের এমন বাধঁভাঙা উল্লাস করাটাই প্রত্যাশিত ছিল। কেননা ১২০ বছরের অপেক্ষার অবসান বলে কথা। সেইসঙ্গে ১৯৯৩ সালে ডিএফবি পোকালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর প্রথমবারের মতো কোনো শিরোপার দেখা পেল লেভারকুসেন।

তবে এই লেভারকুসেন অপ্রতিরুদ্ধ হয়ে উঠার পেছনে সবচেয়ে বড় নায়ক সাবেক স্প্যানিশ তারকা মিডফিল্ডার এবং ক্লাবটির বর্তমান কোচ জাভি আলনসো। এই স্প্যানিশ কোচ দায়িত্ব নেয়ার মাত্র দুই মৌসুমে মধ্যে রূপকথার মতো বদলে যায় লিভারকুসেন। ২০২২ মৌসুমে তার স্বদেশি ক্লাব রিয়াল সোসিয়েদাদের বি দলের দায়িত্ব ছেড়ে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রথম বারের মত সিনিয়র কোনো চলের কোচ হিসেবে যোগ দেন বায়ার লেভারকুসেনে। জার্মান ক্লাবে যোগ দেয়ার আগে কোনো ক্লাবের মূল দলের দায়িত্ব পালন করেননি এই সাবেক স্প্যানিশ তারকা মিডফিল্ডার। তখন তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাও কম হয়নি।

ম্যাচের ৬০ মিনিটে গ্রানিত শাকার গোল, লেভারকুসেনের দ্বিতীয়। শিরোপা উৎসব যেন শুরু হয়ে যায় তখনই
তবে নিজের সামর্থ্যরে উপর বিশ্বাস রেখে চালিয়ে যান নিজের কাজ। আলনসো দায়িত্ব নেওয়ার একবছরের মাথায় ২০২৩ সালে ইউরোপা লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে লেভারকুসেন। সেইসঙ্গে এখানকার ইতিহাস তো গোটা ফুটবল বিশ্বের জানা। সেইসেঙ্গ এখন লেভারকুসেন আছেন ট্রেবল জয়ের পথে। ইউরোপা লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে ওয়েস্ট হামকে হারিয়ে সেমিফাইনালের পথে একধাপ এগিয়ে রয়েছে আলনসোর শিষ্যরা। এবং ডিএফবি পোকাল কাপের ফাইনালে আগামী ২৬ মে কাইজারস্লটার্নের বিপক্ষে মাঠে নামবে লেভারকুসেন।

এছাড়া বুন্দেসলিগায় চ্যাম্পিয়নদের তালিকায় নিজেদের নাম লেখাতে লেভারকুসেনকে ভাঙতে হয়েছে জার্মানের র্শীষ ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের দুর্গ। কেননা ২০১২-২৩ মৌসুমে থেকে ২০২২-২৩ মৌসুম পর্যন্ত বুন্দেসলিগায় একচেটিয়া দাপট দেখিয়েছে বায়ার্ন। টানা ১১ মৌসুম শিরোপা জিতে অপ্রতিরুদ্ধ হয়ে উঠে জার্মানির র্শীষ ক্লাবটি। তবে ২০২৩-২০২৪ মৌসুমে দ্যা রেডসদের রাজত্ব ভেঙে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বুন্দেসলিগায় শিরোপার জয়ের স্বাধ পেয়েছে লেভারকুসেন।

ইতিহাস গড়ার ম্যাচের পর লেভাকুসের কোচ জাভি আলনসো বলেন, ‘এটি ক্লাবের জন্য বিশেষ একটি মুহুর্ত। ১২০ বছর পর প্রথমারের মতো বুন্দেসলিগার শিরোপা জেতা অসাধারণ। আমাদের খেলোয়াড়রা নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে খেলেছে। আমি তাদের নিয়ে সত্যিই অনেক গর্বিত। এখানে কাজ করা আমার জন্য সম্মানের। আমরা এখন বলতে পারি বায়ার লেভারকুসেন এখন জার্মান চ্যাম্পিয়ন। এটি আমাদের সকলের জন্য অনেক সম্মানের। এটি আমাদের খেলোয়াড়, ক্লাব এবং ভক্তদের সবার সমর্থনের কারণে আমরা এই স্থানে আসতে পেরেছি। সবাই শিরোপার জন্য সমান ভাবে লড়াই করেছে। এই শিরোপা জয় আমাদের র্দীঘদিনে পরিশ্রমের ফল। এটি ক্লাবের জন্য বিশাল সাফল্য এবং ইতিহাসের অংশ।’

সেইসঙ্গে ভক্তদের নিয়ে আলোনসো বলেন, ‘আমাদের ভক্তরা বরাবরই অসাধারণ। তারা স্টেডিয়ামের পুরো পথে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে ছিল। আমরা দেখা দেখতে পেয়েছি এবং আমরা এই বিষয়ে লকার রুমে আলোচনা করেছি। আমরা আমাদের সমর্থকদের আমাদের শক্তিতে রূপান্তর করতে চেয়েছি। এবং আমরা সফল হয়েছি।’