উত্তপ্ত মরুভূমিতে বিলাল রা.-কে যেভাবে কষ্ট দিত কাফেরেরা
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
ইসলামী ডেস্ক রিপোর্টঃ
বিলালে হাবশী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। মুসলিম উম্মাহর কাছে যিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুয়াজ্জিন হিসেবে অধিক পরিচিত। তার পুরো নাম আবু আবদুল্লাহ বিলাল। পিতা নাম রাবাহ এবং মাতার নাম হামামাহ।
বিখ্যাত এই সাহাবি হাবশী বংশোদ্ভূত ক্রীতদাস ছিলেন। তবে মক্কায় জন্মলাভ করেছিলেন বনু জুমাহ ছিল তাদের মনিব।হাবশী দাস হিসাবে তার বাহ্যিক রং কালো ছিল। তবে তার অন্তর ছিল দারুণ স্বচ্ছ। আরবের গৌরবর্ণের লোকেরা যখন আভিজাত্যের ও কৌলিণ্যের বিভ্রান্তিতে লিপ্ত হয়ে হকের দাওয়াত অস্বীকার করেছিল, তখনই তার অস্তর ঈমানের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল।
যখন অল্প কিছু মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং মোটামুটি সবাই তাদের ইসলামের কথা গোপন রেখেছিলেন তখন সাত ব্যক্তি প্রকাশ্যে মুসলমান হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। সেই সাত ব্যক্তির মাঝে অন্যতম একজন ছিলেন হজরত বিলালে হাবশী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
চিরকালই দুর্বলরা অত্যাচার উৎপীড়নের শিকার হয়ে থাকে। সামাজিক অবস্থানের কারণে বিলাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুও ওপর অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট নেমে আসে। নানা-মাত্রিক শাস্তি ও যন্ত্রণার মাধ্যমে তার ধৈর্য, স্থিরতা ও ঈমানের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।
প্রকাশ্যে ইসলামের কথা জানানোর পর গলায় উত্তপ্ত বালু, পাথরকুচি ও জ্বলন্ত অংগারের ওপর শুইয়ে তাকে নির্যাতন করা হতো। গলায় রশি বেঁধে ছাগলের মত শিশুরা মক্কার অলিতে গলিতে টেনে নিয়ে বেড়াতো। তবুও তাওহীদের শক্ত রশি তিনি হাত ছাড়া করেননি।আবু জাহল তাকে উপুড় করে শুইয়ে দিয়ে পিঠের ওপর পাথরের বড় চাক্কি রেখে দিত। মধ্যাহ্ন সূর্যের প্রচণ্ড খরতাপে তিনি যখন অস্থির হয়ে পড়তেন, আবু জাহল বলত—
দবিলাল, এখনো মুহাম্মাদের আল্লাহ্ থেকে ফিরে এসো ।’ কিন্তু তখনো তার পবিত্র মুখ থেকে ‘আহাদ’ ‘আহাদ’ (আল্লাহ এক) ধ্বনি বের হত।
অত্যাচারী মুশরিকদের মধ্যে উমাইয়্যা ইবন খালাফ ছিল সর্বাধিক উৎসাহী। সে শাস্তি ও যন্ত্রণার নিত্য নতুন কলা-কৌশল প্রয়োগ করতো। নানা রকম পদ্ধতিতে সে তাকে কষ্ট দিত। কখনো গরুর কীচা চামড়ায় ভরে, কখনো লোহার বর্ম পরিয়ে উত্তপ্ত রোদে বসিয়ে দিয়ে বলত— ‘তোমার আল্লাহ লাত ও উষ্যাহ’ কিন্তু তখনো আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী খোদা প্রেমিক বিলাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর যবান থেকে ‘আহাদ’ ‘আহাদ’ ছাড়া আর কোন বাক্য বের হত না।
মুশরিকরা বলতো, তুমি আমাদের কথিত শব্দগুলিই উচ্চারণ করো। তিনি বলতেন— দআমার যবান ঠিক মত তোমাদের শব্দগুলি উচ্চারণ করতে পারে না।’
প্রতিদিনের মতো একদিন বাতহা নামক উপত্যকায় নিয়ে বিলাল রা.-এর ওপর নির্যাতন চালাচ্ছিল কাফেরেরা। ঘটনাক্রমে হজরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুও সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এই নির্যাতন দেখে তিনি দারুণ মর্মাহত হলেন। মোটা অংকের অর্থ বিলালের মনিবকে দিয়ে তিনি তাকে আজাদ করে দিলেন। তিনি অকথ্য নির্যাতন থেকে চিরমুক্তি পেলেন।
এ খবর শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবু বকর, আমাকেও তুমি এ কাজে শরীক করে নাও ৷ তিনি আরজ করলেন— ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তো তাঁকে আজাদ করেই দিয়েছি।