সর্বজনীন পেনশন প্রসারে ৮ বিভাগে মেলা, রাজশাহীতে ১৯ এপ্রিল
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
সেলিনা আক্তারঃ
দেশের সকল পর্যায়ের নাগরিকদের জন্য চালু হওয়া সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির (স্কিম) আওতা বৃদ্ধি করতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মানুষের মনের শঙ্কা দূর করতে ও সব শ্রেণির মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ৮ বিভাগে ও ৬৪ জেলায় সর্বজনীন পেনশন মেলা করা হবে।উদ্যোগের অংশ হিসেবে রাজশাহী বিভাগে প্রথমবারের মতো মেলার আয়োজন করেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে রাজশাহী বিভাগের প্রশাসন।
আগামী ১৯ এপ্রিল রাজশাহী নগরীর হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ওই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া মেলাটির উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। মেলায় মোট ৭০টির মতো বুথ থাকবে। মেলার স্টলগুলোতে সর্বসাধারণের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমে সরাসরি রেজিস্ট্রেশন ও সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অর্থ জমাদানের সুযোগ থাকবে। আর্থিক লেনদেনের জন্য সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী, সিটি ও ব্র্যাক ব্যাংকের বুথ থাকছে।
মেলায় রাজশাহীর ৯টি উপজেলারও পৃথক পৃথক বুথ রাখা হয়েছে। উপজেলাগুলো হলো-গোদাগাড়ী উপজেলা, তানোর, মোহনপুর, বাগমারা, দুর্গাপুর, বাঘা, চারঘাট, পবা ও পুঠিয়া উপজেলা। উপজেলার সার্বিক দায়িত্ব পালন করবে উপজেলা নির্বাহীর অফিসের নেতৃত্ব একটি বিশেষ টিম। এছাড়া ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার ও সামাজিক বিভিন্ন সংস্থাগুলো অংশগ্রহণ করবে। সঙ্গে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বা তার প্রতিনিধিদেরও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। যাতে সব স্তরের জনগণ মেলায় এসে সর্বজনীন পেনশনের সুবিধাগুলো সরাসরি জানতে পারে। থাকবে কর্মশালা ও উন্মুক্ত আলোচনা।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ তথ্যানুসারে ৯ মাসে চারটি স্কিমে নিবন্ধন নিয়ে যুক্ত হয়েছেন ৫৪ হাজার ৬৪৭ জন ব্যক্তি। সর্বস্তরের জনগণের সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে শুরু করা পেনশন স্কিমগুলোতে সকলের অংশগ্রহণ আরো বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়েই মূলত এমন মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত পেনশন স্কিমে যুক্ত হয়েছেন ৫৪ হাজারের বেশি মানুষ। যেভাবে মানুষ অংশ নিচ্ছে খুব শিগগিরই ওই সংখ্যা লাখে চলে যাবে। মাঝখানে কিছুদিন ধীরগতি ছিল, এখন মানুষের আগ্রহ ও অংশগ্রহণ বেড়েছে।মেলার বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফা বলেন, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ মূল আয়োজক। তবে সার্বিক আয়োজনের দায়িত্ব পালন করছেন রাজশাহী বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন। এই কারণ আমরা বলছি যৌথ আয়োজন। কারণ রাজশাহীর পরিবেশ-পরিস্থিতি, লজিস্টিক সহায়তা এবং সব কর্মচারীর অংশগ্রহণ তারা নিশ্চিত করবে তারা। এখন পর্যন্ত পেনশন স্কিমে যুক্ত হয়েছেন ৫৪ হাজারের বেশি মানুষ। যেভাবে মানুষ অংশ নিচ্ছে খুব শিগগিরই ওই সংখ্যা লাখে চলে যাবে। মাঝখানে কিছুদিন ধীরগতি ছিল, এখন মানুষের আগ্রহ ও অংশগ্রহণ বেড়েছে। আশা করি গতি অব্যাহত থাকবে। গতি অব্যাহত রাখার একটি অংশ হিসাবেই মেলা আয়োজন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পেনশন কর্মসূচির বিষয়ে একটি জাতীয় কমিটি হয়েছে। পরবর্তীতে বিভাগীয় কমিটি, জেলা কমিটি এবং উপজেলা কমিটি হয়েছে। এখন জাতীয় কমিটি বিভাগীয় কমিটির কাছে যাচ্ছে পেনশন কর্মসূচির বিষয়ে একসাথে কাজ করার জন্য। এর মানে হচ্ছে সব পর্যায় থেকে একযোগে কর্মসূচিকে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ। যেখানে থাকছে- মাঠ প্রশাসন, জন প্রশাসন, লোকাল এলিট শ্রেণি ও সামাজিক-রাজনৈতিক নেতৃত্ব। যারা একটি প্লাটফর্মে এসে মিলেমিশে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।
উদ্বোধনের পর থেকে ৯ মাসে চারটি স্কিমে নিবন্ধন নিয়ে যুক্ত হয়েছেন ৫৪ হাজার ৬৪৭ জন ব্যক্তি। চারটি স্কিমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সরকারি হিসাবে ৪৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা জমা হয়েছে। যার মধ্যে প্রবাস স্কিমে ৫৯৮ জন, প্রগতিতে ১১ হাজার ১০৫ জন, সুরক্ষায় ১৬ হাজার ৩৭৬ জন ও সমতা স্কিমে ২৬ হাজার ৫৮০ জন ব্যক্তি যুক্ত হয়েছেন।– জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ
অন্যদিকে এ বিষয়ে জাতীয় পেনশণ কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পৃক্ত করে আয়োজিত মেলার নেতৃত্ব দিচ্ছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। সাধারণ জনগণের বিষয়টি মাথায় রেখে শুক্রবার হচ্ছে পেনশন মেলা। যাতে যেকোনো পেশার মানুষ মেলায় আসতে পারে ও এর সুফল সম্পর্কে জানতে পারে। ইতোমধ্যে রাজশাহী শহর ও আশেপাশে পেনশন মেলার বিষয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। এছাড়া আমাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিলবোর্ড দেওয়া হয়েছে।তিনি আরো বলেন, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই সব বিভাগীয় পর্যায়ে মেলা আয়োজনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। যদিও সরাসরি মেলা শব্দ বলা হয়নি। জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি দূর করার উদ্যোগ হিসাবে সেমিনার ও বিভিন্ন প্রোগ্রাম আয়োজনের কথা বলা হয়েছে।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, উদ্বোধনের পর থেকে ৯ মাসে চারটি স্কিমে নিবন্ধন নিয়ে যুক্ত হয়েছেন ৫৪ হাজার ৬৪৭ জন ব্যক্তি। চারটি স্কিমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সরকারি হিসাবে ৪৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা জমা হয়েছে। যার মধ্যে প্রবাস স্কিমে ৫৯৮ জন, প্রগতিতে ১১ হাজার ১০৫ জন, সুরক্ষায় ১৬ হাজার ৩৭৬ জন ও সমতা স্কিমে ২৬ হাজার ৫৮০ জন ব্যক্তি যুক্ত হয়েছেন।
প্রবাস স্কিম, প্রগতি স্কিম, সুরক্ষা স্কিম এবং সমতা স্কিম- এ চার স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে সরকার। চালুর প্রথম দিন থেকেই সাড়া মিলছে। ক্রমাগত যা ঊর্ধ্বমুখী। পেনশন বিধিমালা বলছে, সর্বজনীন পেনশন প্রথায় যার যত টাকা জমা, মেয়াদ শেষে তার তত বেশি পেনশন। অন্যদিকে, স্বল্প আয়ের মানুষদেরও বিমুখ করবে না এ উদ্যোগ। যারা মাসিক ৫০০ টাকা জমাবেন, তাদের জন্য শুরু থেকেই থাকবে সরকারের আরও ৫০০ টাকার ভর্তুকি। সবমিলিয়ে, সবার জন্যই থাকছে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে বাড়তি কয়েকগুণ মুনাফা।
আর পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়ার যোগ্য হবেন এবং মাসিক পেনশনবাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত হিসাবে রাখার ঘোষণা দিয়েছে এনবিআর। ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর এ ঘোষণা দেওয়া হয়।অন্যদিকে চলতি বছরের জুলাই বা তার পরবর্তী সময়ে যারা স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে যোগদান করবেন, তাদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ঢোকা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। তারা সবাই ‘প্রত্যয়’ স্কিমের অন্তর্ভুক্ত হবেন। গত ২০ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন ইস্যু করেছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর লক্ষ্যে জাতীয় সংসদ কর্তৃক ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩’ পাস করা হয়। বহুল প্রতীক্ষিত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) ওই বছরের ১৭ আগস্ট সকালে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পর সবার জন্য সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি উন্মুক্ত করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট পেনশন স্কিম উদ্বোধন করা হয়েছিল। উদ্বোধনের পর জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট-www.upension.gov.bd চালু করা হয়েছে এবং চারটি স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা দেওয়া শুরু হয়।