অসহায় দিন কাটছে প্রতারক চক্রের প্রণোদনার ফাঁদে পড়া ৫ দিনমজুর পরিবারের

প্রকাশিত: ৭:১৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৮, ২০২১

অসহায় দিন কাটছে প্রতারক চক্রের প্রণোদনার ফাঁদে পড়া কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার পাঁচ দিনমজুর পরিবার। বুক ফাটা আর্তনাদ ও চোখে-মুখে একরাশ হতাশা নিয়ে বিনিদ্র রজনী পাড় করছেন তারা। ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকা আত্মসাত মামলায় গত ২ জুন তাদের মধ্যে ৪ জনকে আটক করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানা পুলিশ।

সরেজমিন ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের নওদাবাঁশ শল্লীধরা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতারিত সহায় সম্বলহীন দিনমজুর ৫ পরিবারে ১৭ জন সদস্যের চোখে এখন শুধুই অশ্রু। উপার্জন বন্ধে টান পড়েছে সংসারে। এ অবস্থায় আইনি মোকাবেলায় ভাগ্যচক্রের দু:সময় থেকে কিভাবে তাদের পরিবারের গৃহকর্তাদের মুক্ত করবেন তা তারা জানেন না। শুধু বুকফাটা কান্না ও অসহায় আর্তনাদে দিন কাটছে তাদের।
প্রতারকচক্র গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের মাস্টাররোল কর্মচারী কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার তানভীর ইসলাম স্বপনের মাধ্যমে প্রণোদনার ফাঁদে ফেলে ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের সুবল চন্দ্র মোহন্ত, কমল চন্দ্র রায়, প্রভাষ চন্দ্র রায়, রঞ্জিত কুমার ও ফুলমনি রানীকে। গত ৮ জুন তাদেরকে দিয়ে নাগেশ্বরী সোনালী ব্যাংকে হিসাব নম্বর খোলেন। গত ১৭ জুন সোনালী ব্যাংক হেডকোয়ার্টার শাখা থেকে তাদের হিসাব নম্বরে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকা আসে।


সোনালী ব্যাংক নাগেশ্বরী শাখা ব্যবস্থাপক শরিফুল আযম জানান, ঐ দিনেই তাদের পক্ষে জনৈক এক ব্যাক্তি ওই টাকা উত্তোলণ করতে আসলে আমাদের সন্দেহ হয়। ২৯ জুন শ্রীপুর হেডকোয়ার্টার শাখায় যোগাযোগ করে টাকা উত্তোলন বন্ধ করা হয়। ৩০ জুন এ সংক্রান্ত তারা একটি মেইল আমাদের শাখায় পাঠায়। পরে শুনেছি শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের ভুয়া অ্যাডভাইসের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের এই টাকা এসব হিসাব নম্বরে জমা করা হয়েছিল।

গত ১ জুলাই শ্রীপুর সোনালী ব্যাংক হেডকোয়ার্টার শাখার ব্যবস্থাপক রেজাউল হক বাদী হয়ে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানায় শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বজলুর রশিদ, অডিটর আরিফুর রহমান, মাস্টাররোল কর্মচারী তানভীর ইসলাম স্বপন, ঢাকার উত্তরখান জামতলা এলাকার শাহেনা আক্তারসহ ফুলবাড়ীর ওই ৫জন অসহায় দিনমজুরকে আসামী করে প্রতারনার মামলা করেন।
২ জুলাই গাজীপুর থানা পুলিশ ফুলবাড়ী থানা পুলিশের সহায়তায় ফুলমনি রানী (৩৭), কমল চন্দ্র রায় (৩৩), প্রভাস চন্দ্র রায় (৪৫) ও রনজিত কুমার রায় (৩৭) এই ৪ জনকে আটক করে জেলহাজতে পাঠায়। পালিয়ে যায় সুবল চন্দ্র মোহন্ত (৩২)।

প্রভাসের স্ত্রী অঞ্জলী রানী (৪২) বলেন, সরলতার সুযোগে স্বপন আমার স্বামীসহ সকলকেই ঠকিয়েছে। তার কারনেই আামার নির্দোষ স্বামী আজ জেলে। তার অবর্তমানে উপার্জন বন্ধে কষ্টে চলছে আমাদের সংসার। আমি তার মুক্তি চাই। রনজিতের স্ত্রী ভারতী রানী (৩০) জানান, অন্যের কথা বিশ্বাস করে আজ তার দিনমজুর স্বামী জেলে। তার অবর্তমানে তিনি দুই সন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের খাবার কেনার টাকাও নেই। কিভাবে তিনি স্বামীকে বিপদ মুক্ত করবেন।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতো মধ্যে অসহায় পাঁচ দিন মজুর পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে পরিবারগুলোর সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর রাখছি।