পলকের ফেসবুকে একের পর এক পোস্ট শেয়ার, কী ঘটছে সিংড়ায়

প্রকাশিত: ১২:১১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২০, ২০২৪

মোঃ সাইফুল ইসলামঃ 

আসছে উপজেলা নির্বাচন। দলীয় স্বজনপ্রীতি নিয়ে আওয়ামী লীগে নানা কথা চললেও বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে নাটোরের সিংড়ার একটি ঘটনায়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহম্মেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবীবের সঙ্গে চেয়ারম্যান পদে সিংড়া উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন। প্রতিদ্বন্দ্বী ওই প্রার্থীকে প্রকাশ্যে অপহরণ ও নির্যাতন নিয়ে অনেকটা বিব্রত স্থানীয় আওয়ামী লীগও। বিষয়টি যখন ‘টক অব দ্যা টাউন’ তখন প্রতিমন্ত্রী দেশে ফিরে ঘটনার সুষ্ঠু ব্যবস্থার আশ্বাস দেন। এমন ঘটনায় তিনিও বিব্রত বলে জানান।

এ পরিস্থিতিতে সিংড়ায় দলীয় রাজনীতি যখন অনেকটা উত্তপ্ত, তখন প্রতিমন্ত্রী পলকের ফেসবুকেও একের পর এক স্থানীয় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট পোস্ট শেয়ার করতে দেখা গেছে। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো এমপি, মন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন নির্বাচন করতে পারবেন না- এমন বিষয় প্রচার করতে দেখা গেছে।পলকের শেয়ার করা বিভিন্ন পোস্ট যাচাই করে দেখা গেছে, এসব পোস্টের অধিকাংশই স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে। বিশেষ করে, নির্যাতিত প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনের ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত চেয়াছেন তিনি।

এক পোস্টে প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, লুৎফুল হাবিব রুবেলকে (তার শ্যালক) নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লুৎফুল হাবিব রুবেলের পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের কেউ কাজ করবে না মর্মে- এমন সিদ্ধান্ত তাকে জানিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং শ্রমিক লীগের যারা জড়িত রয়েছে তাদেরকেও নিজ নিজ সংগঠন কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হচ্ছে।

প্রার্থীকে অপহরণ ও নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে আরেক পোস্টে পলক লিখেছেন, সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশা ভাইয়ের ওপর হামলা, মারধর ও অপহরণের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। এমন ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং আমরা এই ধরণের ঘটনাকে প্রশ্রয় দেবো না। এই হামলার সাথে যারা জড়িত তাদেরকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। অপরাধীর পরিচয় বা দলীয় পদ যাই হোক না কেন তা বিবেচনার বিষয় নয়, আইনি প্রক্রিয়ায় তদন্তের মাধ্যমে শনাক্ত করার মাধ্যমে অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা হবে। ভবিষ্যতে কেউ যেন কারও পরিচয় বা ক্ষমতার অপব্যবহার করে শেখ হাসিনার সরকার বা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার দুঃসাহস করতে না পারে, তার একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করতে চাই আমরা।

এদিকে, আরও কিছু পোস্ট যাচাই করে সিংড়ায় এমন ঘটনার পর অনেকটা মর্মাহত বা পেরেশানও মনে হয়েছে পলককে। জীবনবোধ নিয়ে এক পোস্ট শেয়ার করেছেন তিনি। সেখানে লেখা, ‘জীবনে ভালো দিন পেতে অনেকগুলো খারাপ দিনের সাথে যুদ্ধ করতে হয়।’ আরেক পোস্টে লেখা, ‘জীবন সহজ নয়, জটিলও নয়। জীবন হচ্ছে জীবনের মতো। আমরাই একে সহজ করি, জটিল করি।’

প্রতিমন্ত্রীর শেয়ার করা আরেক পোস্টে হযরত আলী (রাঃ)-এর একটি লেখা, ‘তিন ধরনের মানুষ সবসময় পেরেশান থাকে- সাহায্যকারী, দায়িত্বশীল এবং যার অন্তর পরিচ্ছন্ন।’ ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে নরকে বাস’; ‘স্বভাব খারাপ হলে অভাব যাবে না, স্বভাব ভালো হলে অভাব আসবে না’; ‘আমি আপনি যে যাই বলি উত্তম পরিকল্পনাকারী আল্লাহ, তিনি যেটা লিখে রেখেছেন সেটা সবার জন্যই ভালো হবে’- এমন অনেক লেখাই শেয়ার করেছেন পলক।এদিকে সবশেষ জানা গেছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণ ও মারধরের অভিযোগে পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবীব রুবেলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। আগামী ৩ দিনের মধ্যে এ নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ ও মারধরের ঘটনায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লুৎফুল হাবীবের সম্পৃক্ততা থাকা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার একজন আসামি আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতেও তার সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করেছেন, যা দলীয় আচরণবিধির পরিপন্থী। এর ফলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ অবস্থায় লুৎফুল হাবীবের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে ব্যাপারে কারণ দর্শানোর জন্য তাকে ৩ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়।