জেলা প্রতিনিধি,বরিশালঃ
টিনের বেড়ার আড়ালে রাতের আঁধারে বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে বরিশাল নগরীর একটি পুকুর। কয়েক মাস আগে সুতা দিয়ে পুকুরটিকে প্লট আকারে ভাগ করা হয়। ঈদের আগে টিনের বেড়া দিয়ে করা হয় লোকচক্ষুর আড়াল। এবার ঈদের ছুটিতে বালু ফেলে সেটি ভরাট করা শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে বরিশাল নগরীর আবাসিক এলাকা গোরস্তান রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বটতলা মোড়ে সড়কের পাশে গিয়ে দেখা যায় বড় আকারের পুকুরটিতে প্রতি রাতে ট্রাক থেকে বালু ফেলা হচ্ছে। এরইমধ্যে কয়েক শতক ভরাট হয়েছে। কয়েক মাস ধরে ভরাটের আয়োজন সম্পন্ন হলেও সেটি রক্ষায় এগিয়ে আসেনি সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর বা কোনো পরিবেশবাদী সংগঠন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই একর জমির মালিক ছিলেন কেএম হুদা (প্রয়াত) নামে এক ব্যক্তি। তার বাড়িটি ‘হুদা বাড়ি’ নামে পরিচিত। তার একমাত্র ছেলে সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা খন্দকার সাইফুল হুদা ও ৬ মেয়ে ওয়ারিশসূত্রে এর মালিক হয়েছেন। সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিরোধের জেরে বিক্রি শুরু হলে বোনদের অংশের বেশিরভাগ কেনেন সরকারি কৌঁসুলি আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট ওবায়েদুল্লাহ সাজু। ক্রয়সূত্রে বাড়ির পেছনের ছোট পুকুরটি ভরাটের পর প্লট করে বিক্রি করছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে সাইফুল হুদার মালিকানায় থাকা বড় পুকুরটিও ভরাটের নেপথ্যে কাজ করছেন সাজু।
পুকুর পাড়ের দোকানি মো. ফয়সাল জানান, ঈদের আগে থেকে প্রতি রাতে ট্রাকে বালু ফেলা হচ্ছে। একইভাবে পেছনের ছোট পুকুরটিও ভরাট হয়েছে।এ ব্যাপারে জমির মালিক সাইফুল হুদার বক্তব্য না পাওয়া গেলেও তার স্ত্রী নাহিদ সুলতানা বলেন, এটি পুকুর নয়, ডোবা। মাছচাষের জন্য তারাই খনন করেছিলেন। এটি আয়তনে ১২ শতক।
তবে বিক্রি করেননি দাবি করে নাহিদ সুলতানা বলেন, স্টল করার জন্য নিজেরাই ভরাট করছেন। পেছনে বোনদের অংশের পুকুর অ্যাডভোকেট সাজু কিনে ভরাট করেছেন বলে জানান নাহিদ সুলতানা।এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট ওবায়দুল্লাহ সাজু বলেন, তিনি পেছনের একটি ডোবা আকৃতির পুকুর ভরে প্লট করেছেন। সামনের পুকুরটি ওয়ারিশ সূত্রে মালিক সাইফুল হুদা ভরাট করছেন।
পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বরিশালের সমন্বয়ক লিংকন বায়েন বলেন, পরিবেশ আইন অনুযায়ী জলাশয় ভরাট করা যাবে না। তিনি গোরস্তান রোডের পুকুরটি ভরাট ঠেকাতে পরিবেশ অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশনকে অবহিত করবেন।তিনি আরও বলেন, অ্যাডভোকেট সাজু নগরীর যেখানে জলাশয় রয়েছে, সেটাই দখল ও ভরাট করে বাণিজ্য করছেন।এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শেখ কামাল মেহেদী বলেন, নগরীর পুকুর ভরাট বন্ধে তারা তৎপরতা চালাচ্ছেন। তবে তারাতো ম্যাজিস্ট্রেট নন, কেবল ঘটনাস্থলে খতিয়ে দেখতে পারেন বলে জানান।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র জিয়াউর রহমান বিপ্লব জানান, গোরস্তান রোডে প্রধান সড়কের পাশে পুকুরের চারপাশে টিনের বেড়া দেখেছেন। পেছনের পুকুর আগেই ভরাট হয়েছে। সেখানকার পুরো সম্পত্তি অ্যাডভোকেট সাজু কিনে ভাগভাটোয়ারা করেছেন।সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে কী উদ্যোগ নিচ্ছে, জানতে চাইলে বিপ্লব বলেন, ‘দেখি কী করা যায়।’