বাতাসে যেন ঝরছে আগুনের ফুলকি, হাঁসফাঁস জীবন

প্রকাশিত: ৬:৩৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২০, ২০২৪

আফরিন আক্তারঃ

গত কয়েকদিন ধরে বাড়ছে রোদের তেজ। দুপুর হতেই মাথার ওপর খাড়াভাবে তাপ দিচ্ছে সূর্য। বাতাসে যেন ঝরছে আগুনের ফুলকি। সেই সঙ্গে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে অস্বস্তি। রোদের তাপ ও ভ্যাপসা গরমে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা। অসহনীয় এ গরমের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষদের জীবনে।

শনিবার (২০ এপ্রিল) যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে এ জেলা। চুয়াডাঙ্গায়ও তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, এ জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। দাবদাহে পাবনা শহরে হিট স্ট্রোক করে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। ঢাকায় এদিন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ঘর পার করেছে।

দাবদাহে স্বস্তি পেতে প্রাণ যেখানে ছায়া খুঁজে, সেখানে রুটি-রুজির জন্য বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে নিম্নআয়ের মানুষদের। গরমে ঘামে শরীরের ভেজা জামা নিয়ে রিকশা চালিয়ে মগবাজার থেকে মালিবাগ রেলগেট হয়ে রামপুরা পর্যন্ত এসেছেন রিকশা চালক ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, এত গরমে জীবন আর চলে না। গরমে ঘামে পুরো শরীর ভিজে গেছে। গরমে যাত্রীও খুব কম, কারণ খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। আমার মতো যারা শ্রমজীবী তাদের গরম-শীত-বৃষ্টি কি? প্রতিদিন বের হতে হয়। রোদে পুড়ে যাচ্ছি, শরীর বেয়ে ঘাম পড়ছে, তবুও যাত্রী টানতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে যাত্রী না থাকলে কোনো গাছ পেলে তার নিচে শরীর জুড়িয়ে নিচ্ছি। কাজে বের না হলে পরিবারের সবাইকে না খেয়ে থাকতে হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ২১ নম্বর ওয়ার্ডে এলাকা থেকে ভ্যানে করে বর্জ্য অপসারণ করছিলেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী খাদেমুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতিটি বাসা বাড়ি, ফ্ল্যাট থেকে টেনে নামাতে হয় বর্জ্য। এরপর এগুলো ভ্যানে লোড করে হেঁটে টেনি নিয়ে যেতে হয়। দীর্ঘদিন একই কাজ করার জন্য বাসাবাড়ির ময়লা আবর্জনা গন্ধ আর নাকে লাগে না, তবে কয়েক দিনের অতিরিক্ত গরমে জীবন যায় যায় অবস্থা। বর্জ্য টেনে আনার সময় শরীরে আর কিছু থাকে না, গরমে মাঝে মাঝে ভিজে ক্লান্ত হয়ে পথের পাশে বসে পড়তে হয়। বলতে গেলে দিন রাত খুবই গরম চলছে। কোনোভাবেই দুপুরে কাজ করা যায় না, তবুও আমাদের কোনো ছাড় নেই, কাজ করতেই হয়। অন্যরা কাজ বাদ দিলেও আমাদের কোনো বাদ নেই। এই তাপ, রোদ গরমে মন চায় না কাজ করতে, তারপরও ময়লা টানি।

গুলশান বাড্ডা লিংক রোডে যাত্রী নামিয়ে অপেক্ষা করছিলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, গরমে সিএনজির মধ্যে আর বসে থাকা যায় না। কিন্তু যেহেতু এটাই আমার পেশা, তাই এই অতিরিক্ত গরমেও চালাতে হয় সিএনজি। একদিকে প্রকৃতির গরম, অন্যদিকে সিএনজির ভেতরের গরম। সব মিলিয়ে সারাদিনে পুড়ে যায় শরীর। কিন্তু কিছু করার নেই, এই গরমে পুড়েই কাজ করতে হয়। মাঝে মাঝে যাত্রী না থাকলে, রাস্তার পাশের গাছের নিচে গিয়ে সিএনজি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে থাকি। অন্যরা হয়তোবা এখনকার তীব্র এই গরমে ঘর থেকে বের না হয়েও থাকতে পারে, কিন্তু আমরা যারা শ্রমজীবী তাদের কাজ না করলে তো আর চলবে না। কষ্ট হয় খুব, ঘেমে ভিজে যাই, মাথার ঘাম পায়ে পড়ে তবুও গরমেও কাজ করে যেতে হয় আমাদের।

এদিকে সারা দেশে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৫ দিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তবে যেহেতু এরপর শুক্র-শনিবার রয়েছে তাই বন্ধটা টানা ৭ দিনে গিয়ে ঠেকছে। আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে খুলবে স্কুল-কলেজ।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া চাঁদপুর, মৌলভীবাজার, ঢাকা জেলাসহ রাজশাহী বিভাগের কিছু অংশ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বইছে—তা আরও তিন দিন থাকবে।