মোঃ সাইফুল ইসলামঃ
সময় দুপুর সাড়ে ১২টা। সূর্য ঠিক মাথার ওপর। প্রচণ্ড রোদ আর তীব্র গরমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গাড়ির তাপও। এছাড়া হর্নের কর্কশ আওয়াজ তো আছেই। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও ছাতা হাতে রাজধানীর সড়কে নিবিড়ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন ট্র্যাফিক পুলিশের সদস্যরা।রাজধানীর সোনারগাঁও মোড়, বাংলামোটর মোড়, ইন্টারকন্টিনেল্টাল মোড়, বেইলি রোড মোড় ও মগবাজার মোড় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সোনারগাঁও মোড়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও ট্র্যাফিক বিভাগের কনস্টেবল সৈয়দ ফারুক হোসেন। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে আছেন ৩৮ বছর ধরে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, রোদ-বৃষ্টি বলে কোনো কথা নেই। বাংলাদেশ পুলিশে চাকরি করি, এটা আমার কর্তব্য। এখন যদি বলি, রোদে অসুবিধা হবে তাহলে তো আর দায়িত্ব পালন করা যাবে না। এখন রাস্তা ছেড়ে দিলেই ১০ মিনিটের মধ্যে গাড়ির জ্যাম লেগে যাবে। তখন তো শতশত মানুষের অসুবিধা হবে আমার জন্য। ফলে রোদ-বৃষ্টি যাই হোক না কেন, দায়িত্ব ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, আর ৮/১০টা মানুষের মতো আমারও কষ্ট হয়। তবে সেটা দায়িত্বের তুলনায় বেশি না। এটা আমরা হাসি মুখেই করে থাকি। এখন গরমের সময় আমাদের সাবধানে থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে। স্যালাইন-পানি খাচ্ছি নিয়মিত। এভাবেই চলছে।
তেজগাঁও ট্র্যাফিক বিভাগের সার্জেন্ট মো. সারোয়ার হোসেন বলেন, আমরা যেভাবে সাধারণ ডিউটি করে থাকি, রোদের মধ্যেও সেই একইভাবে ডিউটি করছি। তবে অন্য সময়ের চেয়ে এখন কষ্টটা একটু বেশি রোদের কারণে। রোদ থেকে বাঁচার জন্য আমাদেরকে ছাতা দেওয়া হয়েছে, পানি খাওয়ানো হচ্ছে, স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। যখন রাস্তাঘাটে গাড়ির চাপ কম থাকে, তখন আমরা একটু ১০-১৫ মিনিট বসে বিশ্রাম করার সুযোগ পাই। তার মানে এই না যে রাস্তা একেবারে খালি থাকে। আমাদের কেউ না কেউ তখন ডিউটিতে অবশ্যই থাকে। আবার বিশ্রাম শেষে রাস্তায় নেমে আসি। এভাবে রোদের মধ্যে ডিউটি চলছে আমাদের।
বাংলামোটর মোড়ে কথা হয় রমনা ট্র্যাফিক বিভাগের সার্জেন্ট মো. মাসুদ রানার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা রোদ-বৃষ্টিতে সব সময় ডিউটি করেই থাকি। এখন রোদের সময়টাতে কষ্টটা একটু বেড়েছে। তবে আমাদের ডিউটি অবহেলা করার সুযোগ নেই।একই সঙ্গে সড়কে ডিউটিতে ছিলেন কনস্টেবল মনিরুজ্জামান মনির। তিনি বলেন, যখন রাস্তায় গাড়ির চাপ কম থাকে তখন ছায়ায় বসে বিশ্রাম করি। ঊর্ধ্বতন স্যাররা আমাদেরকে স্যালাইন ও গ্লুকোজ দিয়েছেন। আমরা ডিউটিকালীন এগুলো পান করে থাকি। রোদে দাঁড়িয়ে ডিউটি করতে গেলে ঘামে গায়ের পোশাক ভিজে যায়। খারাপ লাগে। কিন্তু তারপরও আমরা দায়িত্বটা পালন করে থাকি। কারণ এটাই আমার কর্তব্য।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্র্যাফিক রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. সাকিব হোসাইন বলেন, আমাদের যে সব সদস্য মাঠপর্যায়ে কাজ করেন, তারা অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে কাজ করছেন। বাইরে প্রচণ্ড রোদের মধ্যে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে কাজ করা আসলেই কঠিন। তাদের জন্য আইজিপি স্যার, কমিশনার স্যার এবং ডিসি স্যার নিয়মিত স্যালাইন এবং গ্লুকোজ দিচ্ছেন। ছাতা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে যে কনস্টেবল সদস্য বয়স্ক এবং অসুস্থ রয়েছেন তাদেরকে একটু ফ্লেক্সিবল জায়গায় ডিউটির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছে, আপনারা ডিউটিতে থাকাকালে ৩০ মিনিট পরপর একটু বসে বিশ্রাম করে আবার ডিউটি করবেন। এভাবে অল্টারনেটিভ করে কনস্টেবলরা মাঠপর্যায়ে ডিউটি করছেন। আমাদের সার্জেন্টরাও ডিউটি করছেন। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত আমাদের যে ডিউটি থাকে, এই সময় পর্যন্ত প্রচণ্ড হিট থাকে। এর মধ্যে যদি সবাই একসঙ্গে ডিউটিতে দাঁড়ায় তাহলে বেশিক্ষণ ডিউটি করতে পারবে না। এজন্য বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে ডিউটি করতে বলা হয়েছে।
রোদে যদি কেউ অসুস্থ হয়ে যায় সেক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে ডিএমপির এই সহকারী পুলিশ কমিশনার বলেন, আমাদের পুলিশ হাসপাতাল রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জোনের আশপাশে যেসব হাসপাতাল রয়েছে সেখানে দ্রুত তাদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যদিও আমাদের এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা প্ল্যান করেই রেখেছি, যদি কেউ অসুস্থ হয়ে যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে যেন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। এছাড়া আমাদের হেল্প লাইন রয়েছে, নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থাও রয়েছে।
আবহাওয়ার সবশেষ পরিস্থিতি- রাজশাহী, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলাগুলোর ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার ও রাঙামাটি জেলাসহ ঢাকা, রংপুর ও বরিশাল বিভাগ এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিবিরাজ করতে পারে।