দাবদাহে পুড়ছে লিচুর মুকুল, ঝরছে গুটি

প্রকাশিত: ১২:১২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি,দিনাজপুরঃ 

দিনাজপুরে টানা অনাবৃষ্টি আর দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে লিচুর মুকুল। গত দুই সপ্তাহের মৃদু ও মাঝারি তাপপ্রবাহে ঝরে পড়ছে লিচুর গুটি। এতে করে ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন লিচু চাষিরা।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর দিনাজপুরে লিচু চাষে জমির পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার ৪৮৯ হেক্টর। জেলায় লিচু বাগানের সংখ্যা চার হাজারের বেশি। প্রায় ১৩ উপজেলায় লিচু চাষ হলেও সদর ও বিরল উপজেলার লিচুর চাহিদা বেশি। সবচেয়ে বেশি লিচু আবাদও হয় বিরল উপজেলায়। শুধুমাত্র বিরল উপজেলাতেই আড়াই হেক্টরের বেশি জমিতে লিচুর আবাদ করা হয়। বিরলে ছোট-বড় মিলিয়ে বাগানের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার।

চলতি বছরে দিনাজপুরে মৌসুমের শুরুতে চমৎকার ও উপযোগী আবহাওয়া থাকায় লিচু বাগানগুলোতে এবার ব্যাপক মুকুলের সমারোহ ঘটে। চৈত্র মাসের শেষদিকে গাছগুলোতে গুটি আসতে শুরু করে। কিন্তু বৈশাখের শুরু থেকে অব্যাহত দাবদাহ আর অনাবৃষ্টির কারণে পুড়ে যাচ্ছে গাছের মুকুল, ঝরে পড়ছে নতুন গুটি, শুকিয়ে যাচ্ছে গুটির বোটা। এতে করে প্রথম অবস্থায় গাছে গাছে মুকুলের সমারোহ দেখে বেশ আশান্বিত হলেও এখন লিচুর ফলন নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দিনাজপুরের চাষিরা।

তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। আবহাওয়া বিবেচনায় কোনো অবস্থাতেই দিনের বেলায় তাপমাত্রা বেশি থাকা অবস্থায় গাছে পানি দেওয়া বা স্প্রে করা যাবে না। সন্ধ্যার পর তাপমাত্রা কমে গেলে গাছে স্প্র করে পানি ছিটাতে হবে, কীটনাশক দিতে হবে। সেই সঙ্গে গাছে কিছু অনুখাদ্য দিলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।

জেলার সদর উপজেলার মাসিমপুরসহ বিরল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চাষিরা লিচু রক্ষায় বাগানে সেচ ও গাছের পরিচর্যা করছেন। কেউ কেউ লিচু রক্ষার জন্য গাছে কীটনাশক, বিভিন্ন অনুখাদ্য প্রয়োগ করছেন।

সদর উপজেলার মাসিমপুর গ্রামের লিচুচাষি মোসাদ্দেক হোসেন জানান, তার বেশ কয়েকটি বাগানে ছোটবড় মিলিয়ে শতাধিক লিচুর গাছ রয়েছে। প্রথম অবস্থায় আবহাওয়া ভালো থাকায় প্রায় প্রতিটি গাছেই ব্যাপক মুকুল আসায় এবার লিচু নিয়ে তিনি বেশ আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু গুটি আসা শুরু হওয়ার পর দাবদাহ আর গরমের কারণে পুড়ে গেছে গাছের অনেক মুকুল এবং এখন ঝরে পড়ছে লিচুর গুটি। এ অবস্থায় ফলন নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।

বিরল উপজেলার পুরিয়া গ্রামের লিচুচাষি মতিউর রহমান বলেন, শুরুতে আবহাওয়া ভালো ছিল। কিন্তু বর্তমানে যে আবহাওয়া তাতে লিচুর অবস্থা গতবারের চেয়েও বেশি খারাপ হতে পারে।একই উপজেলার বহবলডিঘী এলাকার লিচুচাষি কারিমুল ইসলাম বলেন, রোদের কারণে গুটি শুকিয়ে পড়ে যাচ্ছে, বোটা শুকিয়ে যাচ্ছে। আবার গাছের গোড়ায় পানি দিলে তীব্র রোদে মাটি গরম হয়ে যাচ্ছে। কী হবে জানি না। একমাত্র আল্লাহই রক্ষা করতে পারেন।

বিরল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হাসান ইমাম বলেন, লিচুগাছে এবার প্রচুর মুকুল আসার পরও বৈরী আবহাওয়ার কারণে গুটি ঝরে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ফলন অর্ধেকে নেমে যেতে পারে। তবে পরিস্তিতি মোকাবেলায় আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। তারা যদি পরামর্শ মেনে সঠিকভাবে সেচ দেয়, ওষুধ প্রয়োগ করে তাহলে এই লিচুকে আমরা হারভেস্ট পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারব এবং পর্যাপ্ত ফলন পাব।

দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, গত কয়েকদিন থেকে দিনাজপুরে মৃদু ও মাঝারি দাবদাহ বিরাজ করছে। খুব শীঘ্রই এ থেকে উত্তরণের কোনো সম্ভাবনা নেই।