জেলা প্রতিনিধি,কিশোরগঞ্জঃ
দেশে চলছে গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহ আর গরমে অতিষ্ঠ দেশের মানুষ। এ তীব্র গরমে মাটির ঘর যেন গরিব মানুষদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তীব্র গরমেও মাটির ঘরের ভেতরে বিরাজ করে ঠান্ডা। তাই গরিব মানুষদের জন্য এসব মাটির ঘর যেন এসি।
একটা সময় এ দেশের প্রতিটি গ্রামে গ্রামেই মাটির ঘর পাওয়া যেত। যা একসময় ছিল গ্রামের মানুষের কাছে গরিবের এসি বাড়ি নামে পরিচিত। মাটির ঘরের কদর কমিয়ে দিয়েছে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ও বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এসব মাটির ঘর ঠান্ডা থাকায় একসময় এটাকে গরিবের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরও বলা হতো। এ ঘর গরমের সময় আরামদায়ক। তাই অনেক গ্রামেই বিত্তশালীদের দোতলা মাটির ঘরও ছিল।উপজেলার অনেক গ্রামে এখনো রয়েছে মাটির ঘর। উপজেলার সিদলা, ধূলজুরী, পুমদিসহ কয়েকটি অঞ্চল ঘুরে কয়েকটি মাটির ঘর চোখে পড়েছে। ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশাপাশি তীব্র গরম ও কনকনে শীতে আদর্শ বসবাস-উপযোগী মাটির ঘর।
উপজেলার ঢেকিয়া গ্রামের জসিম উদ্দিন জানান, মাটির ঘর তৈরি করতে প্রথমে এটেল বা আঠালো মাটি কাদায় পরিণত করে দুই-তিন ফুট চওড়া করে দেওয়াল তৈরি করা হতো। ১০ থেকে ১৫ ফুট উঁচু দেওয়ালে কাঠ বা বাঁশের সিলিং তৈরি করে তার ওপর খড় অথবা টিনের ছাউনি দেওয়া হতো। এসব মাটির ঘর তৈরি করতে কারিগরদের সময় লাগত দেড় থেকে দুই মাস। এক সময় আমাদের এলাকার প্রতিটা ঘর মাটি দিয়ে তৈরি করা হতো। অনেকেই মাটি, বাঁশ, টিন সংগ্রহ করে নিজেরাই মাটির ঘর তৈরি করত।
তিনি আরো বলেন, ভূমিকম্প বা বন্যা না হলে একটি মাটির বাড়ি শত বছরেও বেশি স্থায়ী হয়। কিন্তু কালের বিবর্তনে ইটের দালানকোটা আর বড় বড় অট্টালিকার কাছে হার মানছে মাটির বাড়িঘর। মাটির ঘরে দেওয়ালে কাঠ বা বাঁশের শিলিং তৈরি করে তার ওপর খড় বা টিনের ছাউনি দেওয়া হতো। মাটির বাড়িঘর অনেক সময় দোতলা পর্যন্ত করা হতো। মাটির ঘর বড় মাপের হয় না। গৃহিণীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাটির দেওয়ালে বিভিন্ন রকমের আল্পনা এঁকে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বর্ষা মৌসুমে মাটির বাড়িঘরের ক্ষতি হয় বলে বর্তমান সময়ে দীর্ঘ স্থায়িত্বের কারণে গ্রামের মানুষ ইটের বাড়ি নির্মাণের আগ্রহী হচ্ছেন।
উপজেলার ধূলজুরী গ্রামের গৃহিণী জেসমিন বেগম জানান, অর্থসংকটে আজও তার টিনের ঘর তৈরি করা হয়নি। স্বামীর তৈরী করা মাটির ঘরেই সন্তান স্বামী নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। তাদের পূর্বপুরুষরাও এই মাটির তৈরি বাড়িতেই জীবন কাটিয়ে গেছেন।হাসেনপুর আদর্শ মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আশরাফ হোসেন সোহাগ জানান, মাটির বাড়ি বসবাসের জন্য আরামদায়ক হলেও আধুনিকতার ছোঁয়ায় অধিকাংশ মানুষ মাটির বাড়ি ভেঙে গ্রামের মানুষ ইটের বাড়িঘর তৈরি করেছেন। অনেকেই শখ করে আবার অনেকে বাড়ি করার অর্থবিত্ত না থাকায় মাটির বাড়িতেই বসবাস করছেন।