উপজেলা নির্বাচনে নির্দেশ অমান্যকারীদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত আজ

প্রকাশিত: ১২:৩৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৩০, ২০২৪

জাহাঙ্গীর আলমঃ 

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক আজ। সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের নির্দেশ অমান্যকারীদের ব্যাপারে বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত হবে সেদিকে নজর সবার। স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে এবার দলীয় প্রতীক তুলে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে কেউ প্রতীক পাচ্ছেন না। প্রতীক বরাদ্দ না থাকায় যে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন। মাঠ উন্মুক্ত থাকলে বিপত্তি বেধেছে অন্য জায়গায়।

তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, স্থানীয় সংসদ সদস্যরা তাদের পছন্দমতো প্রার্থী, এমনকি আত্মীয়স্বজনদেরও নির্বাচনের মাঠে নামাচ্ছেন। ফলে সংসদ সদস্যদের ছায়া থাকছে নির্দিষ্ট কিছু প্রার্থীর প্রতি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখতে আওয়ামী লীগ সভাপতি গত ১৮ এপ্রিল মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থী না হওয়ার নির্দেশ দেন। হাইকমান্ডের নির্দেশও আমলে নেননি অনেকে। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আগামী ৮ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়সীমা ছিল গত ২২ এপ্রিল। কিন্তু এখনো ২০ উপজেলায় ২৯ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে সরব রয়েছেন, যারা স্থানীয় এমপির স্বজন ও নিকটাত্মীয়। আগামী ২১ মে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা ভোট অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন আজ। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ অমান্য করে দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মন্ত্রী-এমপির ২০ জন স্বজন মাঠে রয়েছেন। এছাড়া অন্য ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন রয়েছেন প্রায় ৩০ জন।

মন্ত্রী-এমপি এমনকি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক শ্রেণির নেতারাও মানছেন না দলীয় সিদ্ধান্ত। তৃণমূলে দলীয় সিদ্ধান্ত না মানার প্রবণতা আরও ভয়াবহ। সংগঠনকে তোয়াক্কা না করে নিজস্ব বলয় সৃষ্টির মাধ্যমে ফ্রি স্টাইলে চলছেন অনেকে। এটা সংগঠনবিরোধী কার্যক্রম। শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করলে বহিষ্কারসহ নানা শাস্তির কথা গঠনতন্ত্রে রয়েছে। গত ১৫ বছরে একাধিকবার গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অপরাধে গত ১৫ বছরে ৫ হাজার নেতাকে বহিষ্কার করা হলেও পরে আবার সাধারণ ক্ষমা পেয়ে যান। দলীয় পদবি এমনকি মনোনয়নও দেওয়া হয়েছে তাদের। এ কারণে এবারের উপজেলা নির্বাচনেও দলীয় সভাপতির নির্দেশনা আমলে নেননি অনেক মন্ত্রী-এমপি ও নেতা। হাইকমান্ডের নির্দেশ অমান্যকারীদের তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দুই জন প্রেসিডিয়াম সদস্য, এক জন যুগ্ম-সম্পাদক, বর্তমান মন্ত্রিসভার ছয় জন সদস্য ও সাবেক ছয় মন্ত্রী। এদিকে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভা আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে। সেদিন সন্ধ্যা ৭টায় সংসদ ভবনের লেভেল ৯-এ সরকারি দলের সভাকক্ষে এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানা গেছে, আজকের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত দলের সব সংসদ সদস্যকে সরাসরি জানিয়ে দেবেন দলীয় প্রধান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, একটি রাজনৈতিক দল পরিচালিত হয় দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাংগঠনিক কাঠামোর মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত পালন করা নিচের সব কমিটির জন্য বাধ্যতামূলক। এখানে কোনো ব্যত্যয় ঘটলে দলের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের মন্ত্রী ও এমপির স্বজনরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই সিদ্ধান্ত না মানার ঘটনা ঘটেছে অনেক জায়গায়। আবার বিএনপির সিদ্ধান্ত হলো উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়া। কিন্তু বিএনপির কমপক্ষে ৭৩ জন প্রার্থী এই সিদ্ধান্ত না মেনে উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোট বর্জনের দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ৭৩ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। এর মধ্যে ২৮ জন চেয়ারম্যান পদে, ২৪ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে এবং সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন ২১ জন। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করা আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংকটের একটি। বড় দলগুলোতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়টি দিনদিন বাড়ছে। কেন্দ্রীয় নেতারা যদি কেন্দ্রীয় নির্দেশনা না মানেন, তাহলে তৃণমূলের নেতারা কেন মানবে?

যে কারণে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য: দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মানা না হলে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও সেটা পালনে কঠোরতা দেখানোর নজির খুব কমই আছে। আগে যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন, তাদের সবাইকে আবার ক্ষমা করে দলে ফিরিয়ে নেওয়ায়, এটা মনে করা হয়, শৃঙ্খলার প্রশ্নে আওয়ামী লীগ যত গর্জে, তত বর্ষে না।

এবারও বলা হচ্ছে, যেসব এমপি-মন্ত্রী দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নিজের স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনের মাঠে রাখবেন, তারা ভবিষ্যতে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। দল তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। আগামী নির্বাচনে তাদের মনোনয়নও হুমকির মুখে পড়তে পারে। কিন্তু সত্যি সত্যি এমন অবস্থা হবে, সেটা অনেকেই মনে করেন না। সিদ্ধান্ত অমান্য করলে শাস্তির বিষয়ে আগে সব সময়ই নমনীয়তা দেখানো হয়েছে। এ কারণে আওয়ামী লীগের হুঁশিয়ারি আমলে নিচ্ছেন না অনেকে। ২০১৯ সালে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের যারা দাঁড়িয়েছিলেন, শাস্তির ভয় দেখালেও সম্মেলনের আগে তাদের ক্ষমা করে দেয় আওয়ামী লীগ। শর্ত সাপেক্ষে এমন প্রায় আড়াই হাজার নেতা ক্ষমা পান।