মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাবার নাম আব্দুল্লাহ। তাঁর লকব বা উপাধি ছিল যবীহ।
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
ইসলামিক ডেস্ক:
তাকে যবীহ বলার কারণ হচ্ছে, আব্দুল মুত্তালিব মানত করেছিলেন তার ছেলে সন্তানের সংখ্যা ১০ জন হলে তিনি তাদের কোনো একজনকে আল্লাহর নামে উৎসর্গ করবেন তৎকালীন নিয়মানুসারে।
যখন তার ১০ ছেলে যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হলো এবং আত্মরক্ষা করতে পারে এমন বয়সে পৌঁছাল তখন আব্দুল মুত্তালিব তার সন্তানদের নিজের মানতের বিষয়ে জানালেন। বাবার ইচ্ছার কথা জানতে পেরে তাঁরা সকলেই এ প্রস্তাবে স্বীকৃতি জানালেন।
আব্দুল মুত্তালিব ছেলেদের মধ্যে কাকে কোরবানি করবেন তা নির্ধারণ করতে লটারি করলেন। লটারিতে আব্দুল্লাহর নাম উঠল অথচ তিনি ছিলেন সবচেয়ে প্রিয়পাত্র।
এরপরও আব্দুল মুত্তালিব মানত পুরণের জন্য আব্দুল্লাহকে নিয়ে যান কাবাঘরের কাছে। কিন্তু কুরাইশগণের মধ্যে বনু মাখযুম অর্থাৎ আব্দুল্লাহর নানা গোষ্ঠীর লোকজন এবং আব্দুল্লাহর ভাই আবূ তালিব এতে আপত্তি জানালেন।
মানত পূরণে বাধাপ্রাপ্ত আব্দুল মুত্তালিব বললেন তাহলে মানতের ব্যাপারে তাঁর করণীয় কী?
এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আব্দুল মুত্তালিব একজন তত্ত্ববিশারদের কাছে পরামর্শ চাইলেন। তিনি আব্দুল মুত্তালিবকে আব্দুল্লাহ এবং ১০ টি উটের মধ্যে লটারী বা নির্বাচনগুটিকা ব্যবহারের পরামর্শ দেন। নির্বাচনী গুটিকায় যদি আব্দুল্লাহর নাম উঠে যায় তাহলে ১০টি উট নির্বাচন করা হবে। এরপর আবার লটারী করা হবে। যদি এতেও আব্দুল্লাহর নাম উঠে আসে তাহলে তার সঙ্গে আরও ১০টি উট যোগ করে নির্বাচনী গুটিকা ব্যবহার করতে হবে যে পর্যন্ত না আব্দুল্লাহর নামের স্থানে ‘উট’-এর নাম না উঠে।
তারপর উটের যে সংখ্যা নির্ধারক নির্বাচনী গুটিকা ব্যবহার করা হবে সেই সংখ্যক উট আল্লাহর নামে কোরবানি করতে হবে।
আব্দুল মুত্তালিব, আব্দুল্লাহ ও ১০টি উটের মধ্যে নির্বাচনী গুটিকা ব্যবহার করলেন। কিন্তু এতে আব্দুল্লাহর নামই উঠে এলে। তত্ত্ববিশারদের নির্দেশ মুতাবেক দ্বিতীয় দফায় উটের সংখ্যা আরও বেশী বৃদ্ধি করে তিনি নির্বাচনী গুটিকা ব্যবহার করেন। কিন্তু এতেও আব্দুল্লাহর নামই উঠে আসে। কাজেই পরবর্তী প্রত্যেক দফায় ১০টি উটের সংখ্যা বৃদ্ধি করে তিনি নির্বাচনী গুটিকা ব্যবহার করে যেতে থাকেন।
এভাবে আল্লাহ উট সংখ্যা ১০০ হওয়ার পর আল্লাহর নামের জায়গায় উটের নাম উঠে আসে। এ প্রেক্ষিতে আব্দুল মুত্তালিব আব্দুল্লাহর পরিবর্তে ১০০টি উট আল্লাহর নামে উৎসর্গ করেন।
এই ঘটনা সম্পর্কে এক হাদিসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি দু’ যবীহর সন্তান’, ‘একজন ইসমাঈল (আ.) এবং অন্য জন হচ্ছেন আমার পিতা আব্দুল্লাহ।
এই ঘটনার পর আব্দুল মুত্তালিব প্রিয় ছেলে আব্দুল্লাহর বিয়ের জন্য পাত্রীর খোঁজ খবর নিলেন। তিনি আব্দুল্লাহর বিয়ের জন্য আমিনাকে পাত্রী হিসেবে নির্বাচন করলেন।
আমিনা ছিলেন ওয়াহাব বিন আবদে মানাফ বিন যুহরা বিন কিলাবের মেয়ে। বংশ পরম্পরা এবং মর্যাদার দিক দিয়ে তাঁকে কুরাইশ গোত্রের অন্যতম আদর্শ নারী মনে করা হতো। তাঁর বাবা ছিলেন বিখ্যাত বনু যুহরা গোত্রের দলপতি। বিবাহের পর আমিনা মক্কায় স্বামীর সংসারে এলেন। তবে বিয়ের পর দীর্ঘ হয়নি তাদের সংসার জীবন।
বিয়ের কিছুদিন পর আব্দুল মুত্তালিব আব্দুল্লাহকে ব্যবসায়ের কাজে শামে প্রেরণ করেন। সেই বাণিজ্যযাত্রা থেকে ফেরার পরে ইন্তেকাল করেন আব্দুল্লাহ। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনো মাতৃগর্ভে, জন্মগ্রহণ করেননি।