আফরিন আক্তারঃ
রাজধানী ঢাকায় কয়েক দশক আগেও নগর পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ সবুজ এলাকা ও জলাশয় ছিল। তবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে খাল-পুকুর ভরাট, দখল ও ধ্বংস, সবুজ এলাকা নষ্ট করে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণে কংক্রিটের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। ভবনের নকশায় পরিবেশ ও জলবায়ুর ধারণা বাদ দিয়ে কাচনির্মিত ও এসিনির্ভর করা হয়েছে। নগরীতে কোনো ধরনের বনায়ন করা হয়নি।
শনিবার বাংলামটরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) আয়োজিত ‘ঢাকায় তাপদাহ : নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার দায় ও করণীয়’ শীর্ষক সংলাপে বিশেষজ্ঞরা এসব উদ্বেগজনক তথ্য জানান। তারা বলেন, নগর এলাকায় সরু রাস্তার পাশেই সুউচ্চ ভবন নির্মাণ, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার জলাশয়-জলাধার-সবুজ এলাকা ধ্বংস, ময়লার ভাগাড়, ইটভাটা, যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণে নগরের তাপমাত্রা বেড়েছে। পাশাপাশি বায়ুদূষণে সৃষ্ট অতিক্ষুদ্র কণার কারণে নগরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকার বাতাসে উত্তাপ বাড়াচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর গ্যাস। ময়লার ভাগাড়, ইটভাটা, যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া থেকে তৈরি হচ্ছে এসব গ্যাস।
বিআইপির সাধারণ সম্পাদক নগর পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংগঠনের সভাপতি নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান।২০১৯ সালে করা বিআইপির গবেষণা অনুসারে, কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা ১৯৯৯ সালে ছিল ৬৪ দশমিক ৯৯ ভাগ, ২০০৯ সালে বেড়ে হয় ৭৭ দশমিক ১৮ ভাগ, আর ২০১৯ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৮১ দশমিক ৮২ শতাংশে।
২০২৩ সালে বিআইপির প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৮ বছরে রাজধানী ঢাকার সবুজ এলাকা কমে মাত্র ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে; অন্যদিকে, জলাভূমি নেমে এসেছে মাত্র ২.৯ শতাংশে। যদিও নগর পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী একটি আদর্শ শহরে ২৫ শতাংশ সবুজ এলাকা এবং ১০ থেকে ১৫ শতাংশ জলাশয়-জলাধার থাকার কথা।
মেহেদী আহসান বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে পুরো পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১ থেকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। অথচ ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় এই তাপমাত্রা ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার এবং নগরায়ণের নামে চালানো ধ্বংসযোগ্য।বিআইপির ন্যাশনাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল লিয়াজোঁ পরিকল্পনাবিদ আবু নাইম সোহাগ বলেন, প্রতিনিয়ত নগরায়ণের নামে পার্ক, উদ্যান এবং জলাভূমি ভরাট করা হচ্ছে। এটা ঢাকা শহরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
নগর পরিকল্পনাবিদ হোসনে আরা বলেন, ঢাকাকে তাপ সহনশীল নগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নগর পরিকল্পনায় আরবান হিট মিটিগেশন ও ম্যানেজমেন্ট কৌশলকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিতে হবে।নগর পরিকল্পনাবিদ রেদওয়ানুর রহমান বলেন, ঢাকা শহরে পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ জনগণ এসি ব্যবহার করে থাকে। এটা তাপমাত্রা পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ।