আকাক্সিক্ষত স্বপ্নের পদ্মাসেতুর উদ্বোধনী সমাবেশে যোগ দিতে ভোর থেকে লাখো মানুষের ঢল নামে শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ঘাটে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সেতুর উদ্বোধন প্রত্যক্ষ করতে আগেভাগেই সমাবেশস্থলে এসে হাজির হন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে মাওয়া পয়েন্টে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দুপুর ১২ টায় তিনি আওয়ামী লীগের জনসমাবেশে যোগ দেন।
এ সমাবেশ পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের মধ্যদিয়ে ৯.১৫ মিনিটে শুরু হয়। এত স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ সমাবেশ পরিচালনা করেন।
পদ্মার তীরে কাঁঠালবাড়ির ঘাটের সমাবেশস্থল লক্ষ্য করে ভোর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত বিশেষ করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা থেকে অসংখ্য নারী-পুরুষ সমবেত হয়।
তাদের পরনে ছিল ঐতিহ্যবাহী পাঞ্জাবি, শাড়ি, টিশার্ট। এসব পোশাকে ছিল পদ্মা সেতু উদ্বোধনের শুভেচ্ছা বার্তা। এছাড়া তারা টুপি, হ্যাটসহ রঙবেরঙের ফিতা পরে নিজেদের আনন্দ প্রকাশ করে এবং নারী পুরুষ নির্বিশেষে সমাবেশস্থলে জড়ো হয়। তারা বিভিন্ন রঙের ব্যানার ফেস্টুনও বহন করে।
বাসসের সঙ্গে আলাপে শরিয়তপুরের জাজিরা উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের সদস্য বৃদ্ধ আবদুল হালিম তালুকদার জানান, আমরা আজকের সমাবেশে যোগ দিতে গত রাতেই শিবচরের জমাদ্দার স্ট্যান্ডে এসে হাজির হই। জয়নগর ইউনিয়নের প্রায় তিন হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দিতে আসে।
বাগেরহাটের মোল্লারহাট উপজেলার লাভলু শেখ জানান, তারা গত রাত সাড়ে দশটায় রওনা দেন এবং আজ ভোর ছয়টায় সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছান।
তিনি আরো জানান, এই উপজেলা থেকে প্রায় ৩০ হাজার লোক আসে।
ছোট বড়ো নানা ধরনের নৌকা দিয়ে সমাবেশস্থল সাজানো হয়। ১০টি স্প্যান ও ১১টি পিলারের ওপর অস্থায়ীভাবে নির্মিত একটি প্রতীকী পদ্মা সেতুর সামনে মঞ্চ স্থাপন করা হয়। অস্থায়ী এই সেতু ২ শ’ ফুট দীর্ঘ এবং আট ফুট চওড়া।
যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সমাবেশ প্রাঙ্গণে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন এবং ১৫০টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়।
নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করে সোবাহিনী, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়ন(র্যাব) এর কয়েকটি ইউনিট, পুলিশ ও এএসএফের সদস্যরা।
পুলিশের আইজিপি ড, বেনজির আহমেদ বলেন, যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, সভাস্থলের প্রতিটি প্রবেশ মোড়ে চেক পয়েন্ট বসিয়ে পূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্যে আধুনিক ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া, সমাবেশে আগতদের সুবিধার্থে ৫শ অস্থায়ী টয়লেট বসানো হয়। এরমধ্যে ২২টি টয়লেট ভিআইপিদের জন্যে। বিশুদ্ধ খাবার পানি, ২০ শয্যার একটি এবং ১০ শয্যার দুটি মোবাইল হাসপাতাল ও মেডিক্যাল সেন্টারও নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্স সুবিধাও রাখা হয়েছিল।
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে শরিয়তপুরসহ পুরো মাদারীপুর জেলায় সাজ সাজ রব পড়ে যায়। চারিদিকে ছিল উৎসবের আমেজ। বর্ণিল ব্যানারে সাজানো ছিল সড়কপথ।