দীর্ঘ প্রতিক্ষা শেষে আগামী ২৮ ডিসেম্বর চালু হতে যাচ্ছে স্বপ্নের মেট্রোরেল। এই মেট্রোরেলের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে হলি আর্টিজানে নারকীয় জঙ্গি হামলার মতো এক হৃদয়বিদারক ও রক্তক্ষয়ী ঘটনাও। যে ঘটনায় তিন বাংলাদেশি, সাত জাপানি, ৯ ইতালীয় ও এক ভারতীয় নাগরিক জঙ্গিদের হাতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। সেখানে নিহত সাত জাপানি নাগরিক মেট্রোরেল নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারা মেট্রোরেল প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করতেন।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজানে অন্যান্যের মতো জাপানি নাগরিকরাও খেতে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে দুই জন ছিলেন নারী। তারা মেট্রোরেলের সমীক্ষা কাজের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার যানজট ব্যবস্থাপনা নিয়েও গবেষণা করছিলেন। সেই অভিজ্ঞ প্রকৌশলীরা হলেন- তানাকা হিরোশি, ওগাসাওয়ারা, শাকাই ইউকু, কুরুসাকি নুবুহিরি, ওকামুরা মাকাতো, শিমুধুইরা রুই ও হাশিমাতো হিদেইকো। হলি আর্টিজানের মর্মান্তিক ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়। স্তম্ভিত হয়ে যায় বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব।
ঘটনার একদিন পর ৩ জুলাই (২০১৬) জাপানের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শেইজি কিহারার নেতৃত্বে জাপানের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করেন। দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। ওই ঘটনার পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন। তখনও তিনি সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার কথা বলেন।
এই জাপানি নাগরিকরা মেট্রোরেল প্রকল্পের ‘এমআরটি লাইন-৬ এর পরামর্শক হিসেবে কাজ করতেন। মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোর কয়েকটির নাম নিহত জাপানি নাগরিকদের নামে করার কথাও ছিল। তবে সেটি এখনই হচ্ছে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কার্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আফতাব মাহমুদ গালিব বলেন, একটি প্রস্তাব এসেছিল। তবে সেটি কোন পর্যায়ে আছে জানা নেই।
নিহত সাত জাপানি নাগরিকের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ
তবে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের উপ প্রকল্প পরিচালক (প্রশাসন) মৌসুমী হাবিব জানান, হলি আর্টিজানের ঘটনায় নিহত সাত জাপানি নাগরিকের স্মরণে উত্তরার দিয়াবাড়ি মেট্রোরেল স্টেশনে নির্মাণ করা হয় মেমোরিয়াল মোমেন্ট বা স্মৃতিস্তম্ভ। উদ্বোধনের পর যা দেখা যাবে নিয়মিত।
ট্রেনে না চড়েও দিয়াবাড়ি স্টেশনে টিকেট কেটে মেট্রোরেল প্রদর্শনী ও তথ্য কেন্দ্র (এক্সিভিশন ও ইনফরমেশন সেন্টার) দেখতে পারবেন যে কেউ। সোমবার থেকে শনিবার দেখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেখানেই থাকবে জাপানি নাগরিকদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৮ ডিসেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন। তিনি নিজে প্রথম টিকেট কেটে যাত্রী হিসেবে চড়বেন। এখন পর্যন্ত এমন সিদ্ধান্তই রয়েছে। আর যাত্রী সাধারণ মেট্রোরেল পরদিন ২৯ ডিসেম্বর থেকে।