মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের নতুন গ্রামের একটি গাছে সড়ক বিভাগের চিহ্ন
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
জেলা প্রতিনিধি,মেহেরপুরঃ
চলতি বছর মেহেরপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র তাপদাহের মধ্যে গত ৩০ এপ্রিল এই তাপমাত্রা রেকর্ড হয়। বছর বছর গরম বেড়ে চললেও আবারও দুটি সড়ক সম্প্রসারণের জন্য গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা সড়ক বিভাগ। আগের বছর একটি সড়কের জন্য দুই হাজার গাছ কাটা হয়েছে। এবার দেড় হাজার গাছ কাটতে ব্যবস্থা নিতে জেলা পরিষদে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। দুটি সড়কের যেসব গাছ কাটা হবে, এসব গাছে নম্বর দেওয়া হয়েছে। বিষয়টিকে গাছগুলোর মৃত্যু পরোয়ানা হিসেবে দেখছে স্থানীয় সচেতন মহল। তারা আসন্ন বর্ষা মৌসুমে দ্বিগুণ গাছ রোপণের দাবি জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের শহর থেকে আমঝুপি পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার অংশ চার লেনে উন্নীত করা হবে। এতে ‘প্রধান বাধা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে পাশের ছোট-বড় বনজ ও ফলদ প্রজাতির ৯৭৬টি গাছ। এ ছাড়া মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের মুজিবনগর পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার অংশে দুর্ঘটনা এড়ানোর অজুহাতে ৪৬৪টি গাছ কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা সড়ক বিভাগ ২১ এপ্রিল জেলা পরিষদে একটি চিঠি দেয়। এতে গাছের তালিকা যুক্ত করা হয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে দেওয়া দ্বিতীয় চিঠিতে তাগাদা দেওয়া হয়।
গতকাল শনিবার মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের নতুন গ্রাম ও মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের চাঁদবিল এলাকায় দেখা যায়– বট, পাকুড়, মেহগনি, শিশু, কড়ই, রেইনট্রি, কাঁঠাল, আম, জামসহ নানা প্রজাতির গাছে লাল রং দিয়ে নম্বর লেখা। এসব গাছের কিছু সড়কের ওপর শাখা ছড়িয়ে আছে। তবে বেশির ভাগই সড়কের বাইরে।
গাছ কাটার এমন উদ্যোগের বিরোধিতা করছেন স্থানীয় লোকজন। মুজিবনগরের কেদারগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আশাদুল ইসলাম বলেন, মেহেরপুরে এবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি। যে গাছগুলো প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করছে, এসব গাছ কাটা হলে আগামী বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বসবাসই কঠিন হয়ে যাবে।
গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক এনামুল আযীমের ভাষ্য, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়ক চওড়া করতে খলিশাকুণ্ডি সেতু থেকে মেহেরপুর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার অংশে বছরখানেক আগে প্রায় দুই হাজার শতবর্ষী গাছ কাটা হয়েছে। অথচ একটি গাছও রোপণ করা হয়নি।
মেহেরপুর বার্ড ওয়াচিং ক্লাবের সভাপতি এমএ মুহিত বলেন, ‘গাছ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী পাখিদেরও আবাসস্থল। কোনো পাখিই আমাদের কাছে খাবার চায় না। ওই গাছগুলো থেকেই সংগ্রহ করে। অথচ গাছগুলো সড়ক সম্প্রসারণের জন্য কেটে ফেলা হচ্ছে।’
ছহিউদ্দীন ডিগ্রি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ রেজা বলেন, প্রকৃতির প্রধান অনুষঙ্গ প্রাণ। সেই প্রাণ বাঁচিয়ে রাখার অক্সিজেন মেলে বায়ুমণ্ডলে। গাছপালা ছাকনি হিসেবে কার্বন-ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে। তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী গাছ যদি কাটতেই হয় তাহলে দ্বিগুণ গাছ লাগাতে হবে। পৃথিবীতে অক্সিজেনের কী ভয়াবহ সংকট চলছে। এসব দেখেও আমাদের শিক্ষা হয় না!’
মুজিবনগর উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান রাজিব হোসেন বলেন, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কটি বছরখানেক আগেও ছিল সবুজে ঘেরা। গাছগুলো কেটে ফেলায় দিনে চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে। আবারও মুজিবনগর ও চুয়াডাঙ্গা সড়কের প্রায় দেড় হাজার গাছ কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটিকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন তিনি।
গাছগুলো রাস্তার ওপর চলে আসায় যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে–এ জন্য গাছ কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান মেহেরপুর সওজর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমান।পরিবেশ সুরক্ষায় গাছের গুরুত্ব স্বীকার করেন জেলা প্রশাসক মো. শামীম হাসান। তবে রাষ্ট্র ও এলাকার উন্নয়নে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাও খুব জরুরি বলে মনে করেন তিনি। সড়কের কাজের পর পাশে সওজের যে জায়গা থাকবে সেখানে গাছ রোপণে বন বিভাগকে উদ্যোগ নিতে বলেছেন।জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমাদের সার্ভেয়ার (পর্যবেক্ষক) যাবে। তারা যেগুলো কাটা প্রয়োজন বলে মনে করবে সেগুলোই কাটা হবে।
মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া, মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর-মুজিবনগর হয়ে দর্শনা সড়কে মানুষের চলাচলে খুব কষ্ট হচ্ছিল। মানুষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকার যোগাযোগব্যবস্থাও উন্নত করছে। সড়কগুলো সম্প্রসারণের জন্য কিছু গাছ কাটা পড়ছে।