লাইফস্টাইল ডেস্ক:
মায়ের প্রতি ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতা প্রতিদিন লাখোবার প্রকাশ করলেও তা কম হয়ে যায়। তবু বছরের একটি দিন এই মানুষটি যে স্পেশাল, তা অনুভব করানোর জন্যই প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় ‘মা দিবস’। আর সন্তান যদি তার জীবনে মায়ের গুরুত্বটুকু উপলব্ধি করতে পারে, মায়েদের কাছে সেটাই পরিণত হয়ে যায় অমূল্য সম্পদে। এ ছাড়াও মূল্যমানের দিক থেকে পৃথিবীর কোনো উপহারই মায়ের অবদানের সমতুল্য নয়, এরপরও ছোট্ট উপহার বিশেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে পারে।
তাহলে এদিনে কী পরিকল্পনা করেছেন বিশেষ মানুষটির জন্য। বছরে একটি দিন মায়ের জন্য বিশেষ কিছু করে তাকে চমকে দিতে পারা প্রত্যেক সন্তানের জন্যই আনন্দের। আসুন, তবে কিছু সারপ্রাইজ প্ল্যান করা যাক প্রিয় মায়ের জন্য।
মা দিবসে মায়ের জন্য সেরা ১০টি উপহার-
পছন্দের খাবার: মায়ের প্রতি আবেগের অভিব্যক্তি প্রকাশের সেরা উপায় হলো তার পছন্দের খাবারটি বানিয়ে তাকে খাওয়ানো। হতে পারে সেটা দুপুরের কোনো খাবার আইটেম বা বিকালের হাল্কা খাবার। মিষ্টান্ন খাবার অথবা কোনো ঝাল ভর্তা, যা বাসায় খুব একটা বানানো হয় না। মাকে না জানিয়ে আগের দিন রাতে বানিয়ে রেখে পরের দিন মাকে চমকে দেওয়া যায়। আবার রান্না ঘরে মায়ের সঙ্গে গল্প করতে করতে একসঙ্গে মিলে বানানো যেতে পারে খাবারটি। এভাবে একসঙ্গে রান্নায় মায়ের সঙ্গে দারুণ সময় কাটানো যাবে আর রান্নাপ্রিয় মায়েরা ভীষণ খুশিও হবেন।
প্রিয় বই: মা যদি বই পড়তে ভালোবাসেন, তাহলে যে ধরনের বই তিনি সব সময় পড়েন তার সর্বশেষ সংস্করণটি যোগাড় করা যেতে পারে। এই পুরনো ও অকৃত্রিম উপহারটি যে কোনো ‘বইয়ের পোকা’কে নিমেষেই পুলকিত করতে পারে। বই পড়ার সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ও আরামের জায়গাটা অনেক আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত। দিনের সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্তটিতে অনেকেই বেশ আয়োজন করে সময় কাটাতে বই নিয়ে বসে পড়েন। তারপর হারিয়ে যান নিজের প্রিয় কোনো জগতে। আর সেই বইটি যদি হয় নিজের সন্তানের দেওয়া তাহলে তার থেকে অমূল্য সম্পদ আর কী বা হতে পারে।
রান্নার সরঞ্জাম: গৃহিণী মায়েদের দিনের সিংহভাগ সময় কাটে রান্নাঘরে। সন্তানসহ ঘরের প্রতিটি মানুষের আহারের দিকটা খুব দায়িত্বের সঙ্গে খেয়াল রাখেন এই মানুষটি। নিজে খাওয়ার থেকে পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে খাইয়েই তিনি বেশি আনন্দ পান। তাই রান্নার কাজে সাহায্য হয় এমন কোনো সরঞ্জাম উপহার তার জন্য শুধু চমকপ্রদই হবে না, নিজের ভালোবাসার রান্নার কাজটিতে তিনি আরও বেশি করে মনোনিবেশ করতে পারবেন। রাইস কুকার, ওভেন, ব্লেন্ডারের মতো রান্নাঘরের সংযোজনগুলো ক্লান্তিকর কাজগুলোকে আরও সহজ করে তুলবে। শুধু গৃহিণী নয়, কর্মব্যস্ত মায়েদের জন্যও এই উপহারগুলো একটি সঠিক পছন্দ হতে পারে।
মাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া: প্রকৃতির মাঝে হেঁটে বেড়াতে বা লং ড্রাইভে বেরিয়ে পড়ুন মাকে নিয়ে। অথবা মা–বাবার জন্য ট্যুরের ব্যবস্থা করলেও মন্দ হয় না। এটাই হয়তো হবে মায়ের জন্য সবচেয়ে ভালো গিফট।
অলংকার: উপহারের জিনিসটি যতো দামিই হোক না কেন, মায়ের ভালোবাসার কাছে সে সবই মূল্যহীন। এরপরও নিজের পরিশ্রম ও কষ্টার্জিত উপার্জনকে মায়ের ভালোবাসায় সিক্ত করার এক উপযুক্ত প্রয়াস হতে পারে এই উপহারগুলো। এটি হতে পারে মায়ের ঘরে ভেতরেই প্রতিদিন পড়ে থাকা কানের দুল বা বাইরে গেলে টুকটাক সাজসজ্জায় মা যেগুলো ব্যবহার করেন সেই অলংকারগুলো। এর যেকোনোটিই হিরা দিয়ে বাঁধিয়ে উপহার দেওয়া যেতে পারে মাকে। এটি হতে পারে সন্তানের পক্ষ থেকে তার চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষটিকে আরও বেশি সুন্দর করে তোলার শ্রেষ্ঠ উপহার।
মায়ের জন্য শাড়ি: বাঙালি নারীর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে এই বিশেষ পোশাক শাড়ি। ঘর থেকে শুরু করে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত যে কোনো অনুষ্ঠানে নারীর সৌন্দর্য ও আভিজাত্যের অবিসংবাদিত প্রতীক এই শাড়ি। মা দিবসে এই সৌন্দর্য সূচকটি দিয়ে সাজিয়ে তোলা যেতে পারে মাকে। মাকে সঙ্গে করে তার প্রিয় রঙের সন্নিবেশে তারই পছন্দ করা প্রিয় শাড়িটি কেনা যেতে পারে। এ ছাড়া, মাকে না জানিয়ে আগে থেকে কিনে রেখে মা দিবসে তাকে চমকে দেওয়া যেতে পারে। শুধু ভালোবাসার প্রকাশ নয়, আপন আনন্দের আতিশয্যে সন্তানের দেওয়া উপহারটি মা পরম মমতায় অঙ্গে ধারণ করবেন।
ফুল গাছ: মায়েদের প্রিয় কাজের মধ্যে একটি হচ্ছে ঘর সাজানো। নানান জিনিসপত্র দিয়ে বারান্দা থেকে শুরু করে ঘরের প্রতিটি তিনি সাজিয়ে রাখেন পরম যতেœ। সৌন্দর্যবর্ধক বস্তুগুলোর অন্যতম ফুল গাছ। শো পিস বা কৃত্রিম ফুল গাছ হোক অথবা সত্যিকারের ছোট্ট টবের ফুল গাছই হোক, ঘরের অন্যান্য আসবাবের সঙ্গে গাছের সজ্জায় দারুণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এটা সম্ভব করেন মা তার নৈপুণ্য দিয়ে। জানালার গরাদে বা বারান্দার ছোট্ট বাগানটির জন্য ছোট্ট ফুল গাছ মা দিবসের সেরা উপহার হতে পারে।
নিত্যব্যবহার্য প্রসাধনী: মায়ের নিত্য ব্যবহার্য চিরুনি, তেল, সুগন্ধি ও ক্রিমসহ নানা প্রসাধনীগুলো উপহারের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মায়ের সঙ্গেই থাকা যেতে পারে। সন্তান অনেক দূরে থাকলেও তার দেওয়া প্রসাধনীগুলো মা অনেক যতœ নিয়ে ব্যবহার করবেন। যদিও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মায়েদের প্রসাধনী ব্যবহারের প্রবণতা কমে যায়। কিন্তু এই প্রসাধনীগুলো সন্তানের পক্ষ থেকে শুধু উপহারই নয়, মায়ের নিজের শরীরের যতœ নেওয়াতেও উদ্বুদ্ধ করবে। বিভিন্ন সময় পরিবারের বাইরের লোকদের সঙ্গে একত্রিত হওয়ার সময় তাদের সামনে মায়ের সাবলীল উপস্থিতির দিকে দৃষ্টি রাখা সন্তানের কর্তব্য।
ভিডিও বা ফটো অ্যালবাম: সন্তানের বড় হওয়ার প্রতিটি ফ্রেমবন্দি মুহূর্ত আত্মীয়-স্বজনকে দেখাতে পছন্দ করেন সব মা-ই। এই ভালো লাগাটিকেই আরও বাড়িয়ে দিতে পারে সন্তানের সঙ্গে কাটানো সেরা কিছু মুহূর্তের ভিডিও বা ফটো অ্যালবাম। জন্মদিন, কোথায় ঘুরতে যাওয়া, বাসায় বিশেষ কোনো অতিথির আগমন ইত্যাদি পারিবারিক সময়গুলোতে মায়ের সঙ্গে অতিবাহিত দারুণ মুহূর্তগুলোকে রেকর্ড করে উপহার দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া, বিভিন্ন সময়ে সন্তানের বিশেষ অর্জনের কথা জানানোর পর মায়ের প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করে রাখা যেতে পারে। অনেক দিন পর সেই ভিডিও বা ছবিগুলো মাকে দেখালে তা এক অবিস্মরণীয় মুহূর্তের জন্ম দিতে পারে।
প্রিয় জিনিস দিয়ে ঘর গোছানো: কোনো মা-ই তার সন্তানের কাছ থেকে কোনো বিনিময় আশা করেন না। এরপরেও হঠাৎ কোনো দিন বাড়িতে ঢুকে নিজের পছন্দের যাবতীয় জিনিস দিয়ে পরিপাটি করে সাজানো ঘর দেখে মা অবাক বনে যেতে পারেন। সন্তানরা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পছন্দগুলো দিয়ে প্রতিস্থাপিত হতে থাকে মায়ের পছন্দগুলো। এক সময় নিজেই ভুলে যেতে বসেন অনেক আগে তার কী পছন্দ ছিল। তাই এ ক্ষেত্রে সন্তানদের সাহায্য করতে পারেন বাবা ও নানা-নানিরা। মায়ের শৈশবের হারিয়ে যাওয়া আঁকার খাতা, শিক্ষাজীবনের অর্জন, প্রিয় শো-পিস, ওয়ালম্যাট প্রভৃতি যোগাড় করা খুব কষ্টসাধ্য হলেও তা মায়ের অমূল্য প্রতিক্রিয়ার কাছে অচিরেই ম্লান হয়ে যাবে।