আফরিন আক্তারঃ
শিক্ষকদের ক্লাসে পর্যাপ্ত সময় না দেওয়া এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্লাস না নেওয়া যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একধরনের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা দৈনন্দিন রুটিন মেনে চলতে হিমশিম খাচ্ছেন। আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন ক্লাসের প্রতি। শিক্ষার্থীদের দাবি, শিডিউল ক্লাস বাতিল করে হলেও শিক্ষকেরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত ক্লাস নেন। আর ক্লাস কম নেওয়ার প্রবণতা সহকারী অধ্যাপকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের একদল গবেষকের গবেষণায় এমন চিত্র উঠে এসেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৮টি বিভাগের ৫২২ জন শিক্ষার্থীর ওপর এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। গবেষণায় অংশ নেওয়া ৪৯ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী বলেছেন, শিক্ষকেরা দৈনিক অন্তত একটি ক্লাস ক্যানসেল করেন। গবেষণাপত্রটি ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি জার্নাল অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সে’ প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, সেমিস্টার/বর্ষে একটি কোর্সের সিলেবাস শেষ করতে যে পরিমাণ ক্লাস নেওয়ার প্রয়োজন, তা নেন না অনেক শিক্ষক। এর মধ্যে সহকারী অধ্যাপকেরা ৩৪.১০ শতাংশ, অধ্যাপক ৩৩.৯১ শতাংশ, প্রভাষক ১৭.৮১ শতাংশ ও সহযোগী অধ্যাপকেরা ১৪.১৮ শতাংশ ক্লাস কম নেন। এছাড়া সহকারী অধ্যাপকেরা ৩৫.৪৪ শতাংশ ক্লাস বাতিল করেন, অধ্যাপকেরা ২৮.৩৫ শতাংশ, প্রভাষকেরা ১৮.৩৯ শতাংশ আর সবচেয়ে কম ক্লাস বাতিল করেন সহযোগী অধ্যাপকেরা—১৭.৮২ শতাংশ। ক্লাসের সময় নিজের মতো করে পুনর্র্নিধারণ করেন বেশি সহকারী অধ্যাপকেরা—৩৫.০৬ শতাংশ। পুনর্র্নিধারিত ক্লাসের মধ্যে ২০.৯ শতাংশ ক্লাস পরীক্ষার আগমুহূর্তে নিয়ে থাকেন শিক্ষকেরা। এতে করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ব্যাঘাত ঘটে শিক্ষার্থীদের।
গবেষণাটি পরিচালনা করেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এই সমস্যাগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। গবেষণাটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরতে চেয়েছি।’ এ বিষয়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো. আব্দুল হালিম বলেন, ‘শিক্ষকেরা তো শুধু ক্লাস করেন না। তাদের অনেক কাজ থাকতে পারে। ফলে শিডিউল ক্লাস ক্যানসেল হতেই পারে। তবে শিক্ষকদের উচিত সময়মতো শিক্ষার্থীদের ক্লাস ক্যানসেল করার বিষয়টি জানানো।’
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, ‘ক্লাস ক্যানসেল মাঝেমধ্যে হতে পারে, তবে প্রতিনিয়ত হওয়া কখনো কাম্য নয়। শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকতে পারে, তবে তা শিক্ষার্থীদের আগে থেকেই জানিয়ে রাখা শিক্ষকদের নৈতিক দায়িত্ব।’