আন্তর্জাতিক ডেস্ক রিপোর্টঃ
চীন থেকে বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং সেই গাড়ির ব্যাটারি, ইস্পাত, সোলার সেল, অ্যালুমিনিয়াম এবং আরও অজস্র যেসব পণ্য আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র, সেসবের ওপর এবার উচ্চহারে শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন ফেডারেল সরকার। দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেন থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট বাইডেন জানান, সবচেয়ে বেশি কর আরোপ করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং এ ধরনের গাড়ির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় সামগ্রীর ওপর। আমদানি করা চীনা গাড়ির ওপর ১০০ শতাংশ, যন্ত্রাংশের ওপর ৫০ শতাংশ এবং ব্যাটারির ওপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন।
বাইডেন বলেন, চীন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। বেইজিংয়ের এ লক্ষ্য ব্যর্থ করতে এবং বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখতে এই পদক্ষেপ নিচ্ছে ওয়াশিংটন।‘আমি জনগণের উদ্দেশে বলতে চাই, আমরা আপনাদের পছন্দে কোনো বাধা দিতে চাই না। আপনারা শোরুমে গিয়ে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী যে কোনো গাড়ি কিনতে পারেন; কিন্তু চীন যদি অন্যায়ভাবে আমাদের দেশের বাজার দখরের পাঁয়তারা করে, তা আমরা কখনও বরদাস্ত করব না।’
‘আমরা চীনের সঙ্গে ন্যায়সঙ্গত প্রতিযোগিতা চাই, বৈরিতা নয়। ২১ শতাব্দীর অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় আমরা চীনের চেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছি, কারণ আমরা ফের আমাদের শিল্পখাতে বিনিয়োগ করা শুরু করেছি।’
নিজ বক্তব্যে বাইডেন অভিযোগ করে বলেন, বছরের পর বছর ধরে চীনা কোম্পানিগুলোকে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নিয়মিত বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে বেইজিং। ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, যানবাহন ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জারে যন্ত্রাংশ, সোলার প্যানেল, চিকিৎসা উপকরণ, ব্যাটারিসহ সব খাতের প্রায় সব কোম্পানিকে প্রতি বছর মোটা অঙ্কের ভর্তুকি দেয় বেইজিং।
‘এবং বেইজিং বিনা শর্তে এই ভর্তুকি দেয় না। কোম্পানিগুলোকে জনগণের চাহিদার চেয়েও বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত পণ্য উৎপাদনের শর্ত দেওয়া হয়। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের পণ্য খুব সহজলভ্য হয় এবং সেগুলোর দামও অন্যান্য কোম্পানির উৎপাদিত পণ্যের চেয়ে কম থাকে।’ ‘ফলে লোকসান দিতে দিতে স্বাভাবিকভাবেই একসময় অন্যান্য দেশীয় বা বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বাজার থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। এই অন্যায় কৌশল অনুসরণের মাধ্যমে চীন কার্যত গোটা বিশ্ববাজার দখলে অগ্রসর হচ্ছে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, বর্তমানে বেইজিং যে অবস্থানে পৌঁছেছে— তাতে উৎপাদিত পণ্য থেকে লোকসান এলেও তাদের অর্থনীতিতে তার তেমন কোনো প্রভাব পড়ে না। তাদের মূল লক্ষ্য এখন বিশ্ববাজারে একচেটিয়া আধিপত্য কায়েম করা। এই লক্ষ্যের অংশ হিসেবে চীনা কোম্পানিগুলো বর্তমানে বিভিন্ন মার্কিন কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারভিত্তিতে পণ্য উৎপাদনের চুক্তি করছে এবং এসব চুক্তির মূল লক্ষ্য হলো মার্কিন প্রযুক্তির ওপর নিজেদের দখল প্রতিষ্ঠা করা।
পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বিশ্বজুড়ে বাড়ছে বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা, যুক্তরাষ্ট্রও তার ব্যতিক্রম নয়। মঙ্গলবারের ভাষণে বাইডেন বলেন, এই খাতে মার্কিন উদ্যোক্তা-বিনিয়োগকারীরাও যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে।
‘বৈদ্যুতিক যানবাহন খাতে চীন প্রতি বছর যত ডলার বিনিয়োগ করে, তার চেয়েও বেশি অর্থ বিনিয়োগ করছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার অংশীদাররা। তারা কেবল তাদের পণ্য ন্যায্য দামে জনগণের হাতে তুলে দিতে চায় এবং এমন একটি সরবরাহ চেইন চায়, যা চীনের অন্যায় বাণিজ্যিক কৌশল থেকে মুক্ত।’