সম্পর্কে আত্মসম্মান বনাম ইগো

প্রকাশিত: ৪:০৯ অপরাহ্ণ, মে ১৮, ২০২৪

লাইফস্টাইল ডেস্ক রিপোর্টঃ 

যেকোনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে ভালোবাসার পাশাপাশি দায়িত্ববোধ ও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্পর্কে সামান্য চির ধরলেই হুরমুড়িয়ে তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায়। তবে একটি সম্পর্ক গড়ার সময় কখনোই বিচ্ছেদের কথা ভাবা হয় না। তবে বাস্তবতা হচ্ছে অনেক সম্পর্কই শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদে গড়ায়। আর সে বিচ্ছেদের মূলে থাকে ইগো।

যখন কোন দাম্পত্য সম্পর্কে ইগো চলে আসবে তখন সে সম্পর্কে জায়গা করে নেয় কলহ। মরীচিকার মত উধাও হতে থাকে ভালোবাসা ও মায়া। ইগো একটি সম্পর্ককে এমন ভাবে ধীরে ধীরে গ্রাস করতে থাকে যা শত চেষ্টাতেও আর ঠিক করা ‍যায় না। ইগোর কারণে সম্পর্কের সহজ ও স্বাভাবিক বন্ধুতা নষ্ট হয়।যার ফল হিসেবে দাম্পত্যে মনোমালিন্য থেকে শুরু করে ক্ষতিগ্রস্ত হয় যৌন জীবন। এর ভয়াবহ পরিণতি গড়ায় বিচ্ছেদে।

ইগো নিজের প্রতি এমন একটি অস্বাভাবিক বিশ্বাস। যার প্রভাবে পাশে থাকা মানুষটির বিশ্বাসকে ছোট করে দেখার একটা কুৎসিত মানসিকতার চর্চা তৈরি হয়। এর সঙ্গে আরও মিশে থাকে অতি অহংকার এবং আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর উচ্চাকাঙ্ক্ষা।আত্মবিশ্বাসকে অতিমাত্রায় অহংবোধে নিয়ে যাওয়ার কারণে ব্যক্তি শুধুমাত্র নিজেকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন এবং সবসময় মনে করে আমিই সেরা।

সম্পর্কে ইগোর কারণে একজন অপরজনের ভুল স্বীকার করতে চায় না। অনেক সময় ভুল বুঝতে পারলেও তারা তা স্বীকার করে না। সেটা যেমন অন্যের কাছে করে তেমনি নিজের কাছেও। এজন্য তারা কখনো নিজের ভুল শোধরাতে পারে না।আর এ ধরনের মানসিকতার প্রভাবেই দাম্পত্য জীবনে একে-অপরের প্রতি সম্মান থাকেনা বললেই চলে। তখন সুখ কেবল জানলা নয় দরজা দিয়েও পালায়।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শাহনীলা তৈয়ব বলেন, বেশির ভাগ মানুষই ব্যক্তিত্ব ও আত্মসম্মানের সঙ্গে ইগোর পার্থক্য বুঝতে পারেনা। অনেকে এই আত্মবিশ্বাসকে ভুলভাবে প্রয়োগ করে ইগোতে (অহংকারবোধ) পরিণত করে।আত্মবিশ্বাস হলো মনের সুপ্ত প্রতিভা যেটা আমাদের মানসিক অবস্থার উন্নতির মাধ্যমে শক্তির সঞ্চার করে। অপরদিকে ইগো মনের একটা সুপ্ত নেতিবাচক চিন্তা যেটা আত্মবিশ্বাসকে নষ্ট করে। সফলতার পথে বাধা সৃষ্টি করে। তাই আত্মবিশ্বাস ও ইগো সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে আমাদের এগিয়ে চলার পথে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে।

ইগোর জন্য যেন সম্পর্ক নষ্ট না হয় সেক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তার শাহনীলা। তার মতে:

ইগো বা ব্যক্তিত্বের সংঘাত দেখা দিলে বিচ্ছেদের কথা না ভেবে প্রথমেই আন্তরিকভাবে সম্পর্কটি রক্ষার চেষ্টা করা উচিত। কারণ নিজেদের কথা ছাড়াও যদি সংসারে বাচ্চা থাকে তার কথাও ভাবতে হবে।ব্রোকেন ফ্যামিলির একটি সন্তান অনেক ধরনের সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে বড় হতে থাকে। আর এই সামাজিক ও মানসিক চাপ তার ব্যক্তিত্বের সঠিক গঠনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

সম্পর্কে কোনো সমস্যা দেখা দিলে চুপ না থেকে, নিজেদের মধ্যে সরাসরি কথা বলুন। যদি সমাধানের পথ না পান তবে পরিবারের নির্ভরযোগ্য কারো সঙ্গে কথা বলে দেখুন। তারপরও অবস্থার পরিবর্তন না হলে বিশেষজ্ঞ কাউন্সিলরের পরামর্শ নিন।মনে রাখবেন, মানসিক চাপ মোকাবিলা করে সুস্থ চিন্তা করার, সুখী হতে শেখায় কাউন্সেলিং। দাম্পত্য ও পারিবারিক সম্পর্কে কিছুটা ভাটা পড়তে পারে। এই সমস্যার সমাধানও হতে পারে সঠিক পরামর্শের মাধ্যমে।