পোশাক আশাকে রিকশাচিত্র

প্রকাশিত: ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ, মে ২০, ২০২৪

লাইফস্টাইল ডেস্ক রিপোর্টঃ 

আমাদের আশেপাশে থাকা অনেক ঐতিহ্যকেই ফ্যাশনের মাধ্যমে পোশাকের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। কখনো বা যামিনী রায়, কখনো সত্যজিৎ রায় আবার কখনো বা লোকশিল্প, আবার বিভিন্ন আর্টিস্টদের চিত্রশালা সবকিছুই পোশাকশিল্পে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম আমাদের দেশের রিকশাচিত্র। বর্তমানে খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই রিকশাচিত্র।

রিকশা বাঙালির কাছে এক অনুভূতির নাম। জীবনের যত ধরনের যানবাহনে চলাফেরা হোক না কেন রিকশা যানবাহনটি এক আবেগের নাম। রিকশা যানবাহনটার মধ্যে এক ধরনের বিলাসিতা রয়েছে।

যাইহোক রিকশা নিয়ে তো অনেক কথা হলো। তবে ফ্যাশন জগতে পোশাক শিল্পে রিকশা, সেই রিকশা চিত্রের জনপ্রিয়তা প্রচুর। আসলে কোন শিল্পই হারিয়ে যায় না। শুধু ধরে রাখতে জানতে হয়। আর তাই রিকশা চিত্র নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশের নানান ধরনের ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো। রিকশার পেছনে টিনের ঝুলবোর্ডে যে রঙিন চিত্র ঝোলানো থাকে, তার জন্য বাংলাদেশের আলাদা এক পরিচিতি আছে?

১৯৩০-এর দশকে ঢাকায় রিকশা প্রচলন শুরু হয়। ১৯৫০ সালের দিক থেকে রিকশাচিত্রের এক ধারাবাহিক ইতিহাস জানা যায়। তারপর রিকশার সংখ্যা বাড়তে বাড়তে রিকশার নগরী হিসেবে ঢাকা শহর গিনেস রেকর্ডও তৈরি করে ফেলে।

রিকশার পেছনের টিনের পাতের ঝুলবোর্ডে যে চিত্রকর্ম ঝোলানো থাকে তা-ই রিকশাচিত্র। বিভিন্ন গাঢ় উজ্জ্বল রং ব্যবহার করা হয় রিকশাচিত্র আঁকার ক্ষেত্রে। ৭০ বছরের বেশি সময় ধরে ঢাকা শহরের বিশেষ ঘরানার একদল শিল্পী রিকশাচিত্র এঁকে চলেছেন নীরবে। এক দশকের বেশি সময় ধরে এই ঐতিহ্যবাহী চিত্রশিল্পকে রিকশার ঝুলবোর্ড থেকে বের করে ফ্যাশনে ও অনুষঙ্গে ব্যবহার করার প্রবণতা শুরু হয়েছে। পোশাক, ফ্যাশন ও ঘরের বিভিন্ন অনুষঙ্গ নকশার জন্য রিকশাচিত্রকে কাজে লাগিয়েছেন ডিজাইনার ও শিল্পীরা। তরুণ উদ্যোক্তা এবং ডিজাইনারদের কেউ কেউ এখন হাতে এঁকে কিংবা ডিজিটাল প্রিন্টের মাধ্যমে রিকশাচিত্রকে আরও বিচিত্রভাবে বিপুল পরিসরে ব্যবহার করছেন বিভিন্ন পণ্যে। এখন পোশাক ও ফ্যাশন অনুষঙ্গের বাইরে ঘরের বিভিন্ন অনুষঙ্গ, যেমন: কাচের গ্লাস, মগ, কেটলি, কাচের বোতল, প্লেট, গয়নার বাক্স, মোবাইল কভার, ট্রে, ট্রাঙ্ক, অফিসের ফাইল বক্স এমনকি ঘরের আসবাবেও ইত্যাদি নকশা করতে রিকশাচিত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক উদ্যোক্তাদের পোশাক শিল্পের উদ্যোগ শুরুই হয়েছিল রিকশাচিত্র দিয়ে।

হরিতকীর মালিক ও ডিজাইনার অনিক কুন্ডু বলেন, লোকশিল্পের মাঝে ঢাকাই রিকশা চিত্র দেশের মধ্যে অন্যতম। আমরা ২০১৯ সাল থেকে রিকশাচিত্র নিয়ে কাজ করছি। কিছুদিন আগে ইউনস্কো স্বীকৃতি পেয়েছে এই লোকশিল্পটি। এছাড়াও আমাদের যত পোশাক রয়েছে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রয়কৃত পোশাক হচ্ছে রিকশাচিত্রের শাড়ি। তাই রিকশাচিত্র নিয়ে বড় পরিসরে কাজ করার চিন্তাভাবনা আমাদের বেড়ে গিয়েছে।

ফ্যাশনের সাথে রিকশা চিত্রের কোন সম্পর্ক নেই। কারন এই রিকশাচিত্র তৈরি করা হত যাত্রীদের আকর্ষণের জন্য। তবে বর্তমান যুগে পোশাকে অনেক কিছুই স্থান পাচ্ছে। সেই সুবাদে রিকশাচিত্র পোশাকে আনতে দোষের কিছু নেই বরং হারিয়ে যেতে বসা রিকশাচিত্রের মত এত গুরুত্বপূর্ণ লোকশিল্প ফ্যাশনের সাথে ফিউশনে খুবই নান্দনিকভাবে শৈল্পিকতা ছড়াতে উপযোগী। রিকশাচিত্র ফ্যাশন হিসেবে পাবলিক প্রচুর গ্রহণ করেছে।আমাদের সবচেয়ে চাহিদা সম্পন্ন পোশাক রিকশাচিত্রের দখলে। শাড়ি, পাঞ্জাবী, শার্ট, কামিজ, পাজামা, গোল জামা, ব্যাগ, ব্লাউজ পিস সব কিছুই রিকশাচিত্রের ডিমান্ডের জন্যই আনা।

রিকশাচিত্রের যেকোনো পোশাক খুব সুলভ মূল্যেই পাওয়া যাচ্ছে। এবং এখন কম বেশি সবাই এই নকশাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। আমাদের শিল্প রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদেরই। কখনো বা পোশাকের মাধ্যমে কখনো বা অন্যান্য সাজসজ্জার মাধ্যমে কখনো বা ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবে তা যেভাবেই হোক না কেন। নিজের শিল্পকে ভালবাসতে হবে। নিজের শিল্পের যতœ নিতে হবে।