বারবার তলবের মুখে পড়া মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত হচ্ছেন পররাষ্ট্রসচিব

প্রকাশিত: ১:০৩ অপরাহ্ণ, মে ২০, ২০২৪

মোঃ সাইফুল ইসলামঃ 

মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের আগে অং সান সু চির সরকার (তৎকালীন) ঢাকায় অং কিউ মোয়েকে রাষ্ট্রদূত করে পাঠায়। এই কূটনীতিক সাড়ে চার বছরের বেশি সময় ধরে ঢাকায় নেইপিডোর হয়ে দূতিয়ালি করেছেন। এ সময়ে মিয়ানমারের কর্মকাণ্ডে তাকে বার বার ঢাকায় ‘তলবের’ মুখে পড়তে হয়েছে। অবশ্য ঝক্কিও পোহাতে হয়েছে অনেক।

ঢাকায় নিজ দেশের কর্মকাণ্ডে ধৈর্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অং কিউ মোয়েকে পুরস্কৃত করছে মিয়ানমারের সামরিক সরকার। অং কিউ মোয়েকে দেশে ফিরিয়ে পরাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব দিচ্ছে দেশটি। আগামী দু’একদিনের মধ্যে ঢাকা ছেড়ে নেইপিডোতে ফিরছেন এ কূটনীতিক। আর ঢাকায় এরই মধ্যে নতুন রাষ্ট্রদূতও চূড়ান্ত করেছে মিয়ানমার। সামরিক সরকার দেশটির নৌবাহিনীর জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা কিউ সোয়ে মোয়েকে ঢাকায় রাষ্ট্রদূত করে পাঠাচ্ছে। তিনি মস্কোর মিয়ানমার মিশনে ডিফেন্স অ্যাটাশে (ডিএ) ছিলেন।

ঢাকা-নেইপিডোর কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ২০২০ সালে ঢাকায় রাষ্ট্রদূত হয়ে আসেন অং কিউ মোয়ে। তার পরের বছরের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনা সরকার। সামরিক সরকারের শাসনামলের শেষ দুই বছর ঢাকায় মোটেও স্বস্তিতে ছিলেন না রাষ্ট্রদূত অং কিউ। কেন না, বাংলাদেশ লাগোয়া সীমান্তসহ বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মিয়ানমার এমন সব কর্মকাণ্ড করেছে, যার জবাব দিতে হয়েছে রাষ্ট্রদূতকে। অং কে গত দুই বছরের ব্যবধানে পাঁচ বার তলব করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ জার্নিতে কমপক্ষে ৮-৯ বার তলবের মুখে পড়তে হয়েছে রাষ্ট্রদূত অং কে।

ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, গত দুই বছরে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের চলমান পরিস্থিতি, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, বিজিপি, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের বাংলাদেশে প্রবেশ, সীমান্তে গোলাগুলি, বাংলাদেশ ভূখণ্ডে মর্টার শেল বা গোলা নিক্ষেপ এবং গোলার আঘাতে মৃত্যুর ঘটনায় কখনও পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, কখনও ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম এবং মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালকের দপ্তরে পাঁচ বার দেশটির রাষ্ট্রদূতকে ডেকে আনা হয়েছে। প্রতিবারই প্রতিবাদস্বরূপ রাষ্ট্রদূতের হাতে কূটনৈতিক পত্র বা প্রতিবাদ-লিপি ধরিয়ে দেওয়া হয়। সবশেষ, মিয়ানমারের কারাগারে থাকা বাংলাদেশিদের ফেরানোর ঘটনায়ও রাষ্ট্রদূতকে ডেকে আনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

নেইপিডোর একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, মিয়ানমারের সামরিক সরকার বাংলাদেশে বিদায়ী রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে দেশে ফিরিয়ে নতুন পররাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব দেবেন। তিনি এ সপ্তাহের মধ্যে দেশে ফিরে যাবেন। আর নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দেশটির নৌবাহিনীর জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা কিউ সোয়ে মোয়েকে জুনের শুরুতে ঢাকায় পাঠানোর কথা রয়েছে।

ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, মিয়ানমারের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত দেশে ফিরে পররাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব পাবেন এমনটাই শুনেছি। ঢাকায় নতুন রাষ্ট্রদূতের জন্য মিয়ানমার এগ্রিমো চেয়েছে, তা গ্রহণও করা হয়েছে। নতুন রাষ্ট্রদূত শিগগিরই ঢাকায় আসবেন আর বিদায়ী রাষ্ট্রদূতও চলে যাবেন।২০১২ সালের দিকে মিয়ানমার মিশনে কাজ করেছেন কূটনীতিক অং কেউ মোয়ে। তখন তিনি মিয়ানমারে মিশনের ডেপুটি চিফ (ডিসিএম) ছিলেন। এরপর রাষ্ট্রদূত হয়ে ২০২০ সালে ফের ঢাকায় দ্বিতীয় অ্যাসাইনমেন্ট আসেন অং। দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে তার। অং পররাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব পেলে রোহিঙ্গা সমস্যার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোনো সুবিধা পাবে কিনা -জানতে চাওয়া হয় ঢাকার এক জ্যৈষ্ঠ কূটনীতিকদের কাছে।

জবাবে এ কূটনীতিক বলেন, সুবিধা পাব কিনা সেটা বলা কঠিন। তবে আমরা আশা তো করতেই পারি। কারণ, তিনি দুইবার বাংলাদেশে অ্যাসাইনমেন্ট করেছে। আমরা তাকে বেশ কয়েকবার ডেকেছি। তবে ডাকলেও তাকে কখনও অসম্মান করিনি। যতবার ডাকা হয়েছিল তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়নি। আমরা চাইলে আরও কয়েকবার তাকে ডাকতে পারতাম। কিন্তু আমরা শুধুমাত্র ভালো সম্পর্কের খাতিরে সমন (ডেকে আনা) করিনি।

একই প্রশ্নে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়ে পররাষ্ট্রসচিব হলে বাংলাদেশ খুব সুবিধা পাবে -এমনটা ভাবা ঠিক হবে না। মনে রাখতে সে কিন্তু সেনা সরকারের পররাষ্ট্রসচিব হবেন। সেনা সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তিনি তো চাইলেও কিছু করতে পারবেন না। আর তিনি অবশ্যই তাদের অগ্রাধিকারকে গুরুত্ব দেবেন।