শরীয়তপুরে প্রার্থীর টাকা নিতে রাজি না হওয়ায় পোলিং অফিসারকে মারধর
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
জেলা প্রতিনিধি,শরীয়তপুরঃ
টাকা নিতে রাজি না হওয়ায় শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যানপ্রার্থী হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির সমর্থকদের বিরুদ্ধে এক পোলিং অফিসারকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে জাজিরার শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।রোববার (১৯ মে) রাতে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিকে নগর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আগামীকাল ২১ মে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হবে জাজিরা উপজেলা নির্বাচন। নির্বাচনে ২৫নং বিকে নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মীর আবু সাইদ পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। পোলিং অফিসার হিসেবে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ নিয়ে রোববার (১৯ মে) রাতে মীর আবু সাইদ বাড়ির পার্শ্ববর্তী বিকে নগর বাজারে গিয়েছিলেন। রাত আনুমানিক ১০টার দিকে অজ্ঞাত এক যুবক মীর আবু সাইদকে বাজারের এক পাশে ডেকে নিয়ে যায় বিকে নগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সরদার, আব্দুল আলী সরদার ও মজিবুর বানিয়ার কাছে। এ সময় সাইদুর রহমান সরদারসহ অন্যরা মীর ইমরান আলীকে নির্বাচনের দিন মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির পক্ষে কাজ করার জন্য অনুরোধ করেন। বিনিময়ে তাকে মোটা অঙ্কের টাকাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে বলে জানানো হয়। সরকারি কাজে নিয়োজিত একজন ব্যক্তি হিসেবে মীর আবু সাইদ এমন প্রস্তাবে রাজি হননি। এরপর সাইদুর রহমান সরদার, আব্দুল আলী সরদারসহ অন্যরা মীর আবু সাইদকে মারধর করেন। খবর পেয়ে মীর আবু সাইদের স্বজন ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর বর্তমানে বাড়িতে অবস্থান করছেন মীর আবু সাইদ। এ ঘটনায় জাজিরা উপজেলার শিক্ষকসহ অন্যান্যদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
পোলিং অফিসার ও শিক্ষক মীর আবু সাইদ বলেন, আগামীকাল ২১ মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমাকে। প্রশিক্ষণ শেষে আমি বাড়িতে অবস্থান করছিলাম। এ সময় ব্যক্তিগত কাজে বাজারে গেলে একজন লোক আমাকে ডেকে নিয়ে যায় সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানসহ অন্যান্যদের কাছে। তারা আমাকে টাকার বিনিময়ে মোটরসাইকেল প্রতীকের পক্ষে কাজ করার জন্য প্রস্তাব দিলে আমি রাজি হয়নি। এরপর তারা আমাকে মারধর করে। বিষয়টি নিয়ে আমি শঙ্কিত। আমার সিনিয়র শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের নিকট অভিযোগ দেব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থক ও বিকে নগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সরদার বলেন, আপনি কোথা থেকে বিষয়টি জেনেছেন তা আমি বুঝতে পারছি না। মীর আবু সাইদ এমন কোনো বংশের ছেলে নয় যে তাকে ম্যানেজ করতে পারলে একশ ভোট পাওয়া যাবে। হতে পারে সে সরকারি চাকরিজীবী ও পোলিং অফিসার। তার সঙ্গে আমাদের কারও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।এ বিষয়ে জানতে মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির মোবাইল নম্বরে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জাজিরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমাজের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আফরোজা আক্তার সুমি বলেন, আমরা সরকারি চাকরি করি। সরকারের দেওয়া দায়িত্ব পালন করাই আমাদের কাজ। নির্বাচন একটি রাজনৈতিক ইস্যু। কারও পক্ষ নিয়ে কাউকে রাজনৈতিকভাবে সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও আইনগতভাবে অন্যায়। আমাদের শিক্ষক মীর আবু সাইদ এমন একটি প্রস্তাবে সম্মতি না দেওয়ায় তাকে মারধর করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণভাবে অন্যায়। বিষয়টি নিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দায়ের করবো। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
এ বিষয়ে জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনো কেউ অভিযোগ দেয়নি। যদি লিখিত অভিযোগ পাই তাহলে আইনগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।প্রসঙ্গত, জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং, পোলিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ গত বৃহস্পতিবার জাজিরা সরকারি মোহর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে সম্পন্ন হয়েছে। ওই প্রশিক্ষণে মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির ছোট ভাই ডা. ইমন ফরাজি উপস্থিত হয়ে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের মোবাইল নম্বরসহ ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেন। এরপর থেকে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের টাকার বিনিময়ে মোটরসাইকেল প্রতীকের পক্ষে কাজ করার প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।