উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে। এখন ভোটকেন্দ্রগুলোতে গণনা চলছে।
সকাল থেকে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারের দীর্ঘ লাইন লক্ষ্য করা গেছে। পুরুষ ভোটারের পাশাপাশি নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। এটি এই সিটির তৃতীয় নির্বাচন। এর আগে অবাধ, সুষ্ঠু, উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের সকল পস্তুতি গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রার্থীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা নিজের জয়ের ব্যাপারেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। শুধু প্রার্থীরাই নন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ ভোট দিয়ে ভোটাররাও খুশি। কোনো ধরনের বাধা-বিঘœ ছাড়াই ভোটাররা সকাল থেকে ভোটকেন্দ্রে এসেছেন এবং ভোট দেয়ার পর আনন্দঘন পরিবেশে বাড়ি ফিরেছেন।
গত ৯ মে থেকে ২৩ মে মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত টানা ১৫ দিন ধরে চলে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা দিনরাত প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। প্রচারণার শেষ দিন পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের পঞ্চম তলায় কন্ট্রোল রুম থেকে নির্বাচন মনিটরিং করা হয়। সকাল থেকেই নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত আহসান হাবীব খান, মো. আলমগীর, রাশেদা সুলতানা ও আনিছুর রহমান কন্ট্রোল রুমে উপস্থিত থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন।
মোট ৪ হাজার ৪৩৫টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা হয়। ১৮টি ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডের মাধ্যমে একই সঙ্গে ৪৬৬টি সিসি ক্যামেরায় সব ভোটকক্ষ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ডিসপ্লে ১০ সেকেন্ড পরপর অটো রোটেড করে ভোট গ্রহণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হয়।
এর আগে রংপুর সিটি কর্পোরেশন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন, ঝিনাইদহ পৌরসভা ও গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গাজীপুর সিটিতে সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং করে ইসি।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের গোপন কক্ষে বেআইনিভাবে প্রবেশের অভিযোগে দু’ব্যক্তিকে আজ আটক করেছে পুলিশ।
ওই দু’ব্যক্তি নির্বাচনে গোপন কক্ষে প্রবেশ ও ভোটারদের ভোটদানে প্রভাবিত করে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশে তাদের আটক করা হয়। সিসি ক্যামেরায় ভোট পর্যবেক্ষণের সময় ওই ব্যক্তিদের দেখে তাদের আটকের নির্দেশ দেয়া হয়।
ইসির নির্বাচন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ভোটকেন্দ্রে অবৈধভাবে প্রবেশের অভিযোগে দু’জনকে আটক করা হয়েছে। গাজীপুর সিটির ১০৩ নম্বর কেন্দ্রের ঘটনায় আবু তাহের নামে একজনকে তিনদিন আটক রাখার আদেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ১০১ নম্বর কেন্দ্রে রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদ নামে একজনকে আটক করা হয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, ৩২৯.৯০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে ৪৮০টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এজন্য ৪৮০ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ৩ হাজার ৪৯৭ জন সহকারি প্রিসাইডিং অফিসার, ৬ হাজার ৯৯৪ জন পোলিং অফিসারসহ মোট ১০ হাজার ৯৭১ জন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ৩৩৩টি প্রতিষ্ঠানে ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়। নির্বাচনে মোট ৪৮০টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫১টি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করে কমিশন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম জানান, অতি গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা বিধান ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে অস্ত্রসহ একজন এসআই অথবা এএসআই ও চারজন কনস্টেবল, অস্ত্রসহ একজন অঙ্গীভূত আনসার পিসি, একজন অস্ত্রসহ আনসার এপিসি, লাঠিসহ চারজন নারী ও ৬ জন পুরুষ আনসার/ভিডিপি সদস্যসহ মোট ১৭ জন মোতায়েন রয়েছে। আর সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে অস্ত্রসহ একজন এসআই অথবা এএসআই ও তিনজন কনস্টেবল, অস্ত্রসহ একজন অঙ্গীভূত আনসার পিসি, একজন অস্ত্রসহ এপিসি, লাঠিসহ চারজন নারী ও ৬ জন পুরুষ আনসার/ভিডিপি সদস্যসহ মোট ১৬ জন মোতায়েন আছেন।
নির্বাচনী এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, বিজিবি ও র্যাব দায়িত্ব পালন করছে। এরমধ্যে প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে একটি করে মোবাইল ফোর্স, প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি থানা এলাকায় একটি করে মোট ৮টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। প্রতি দুইটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে র্যাবের মোট ৩০টি টিম কাজ করছে। নগরীর ৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে এক প্লাটুন করে মোট ১৩ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
এদিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী এলাকায় আজ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ জারি করা হয়। আজ এই এলাকার সব ব্যাংকও বন্ধ ছিল।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের ৬ জুলাই। দ্বিতীয় সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ২৬ জুন। এবার তৃতীয়বারের মতো এ সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় আজ।