খেলাধুলা ডেস্ক:
বছর চারেক আগে এক সাক্ষাৎকারে সাকিব আল হাসান বলেছিলেন কখনো প্যাসেঞ্জার হয়ে থাকতে চান না। মূলত বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটে সবসময় ড্রাইভিং সিটে বসে থাকার কথা বলেছিলেন টাইগার এই অলরাউন্ডার।
এমনকি সেই সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন যখন তার মনে হবে তিনি প্যাসেঞ্জার তখনই ছেড়ে দিবেন খেলা। বছর চারেক আগে বলা সাকিবের সেই কথা এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সবখানেই।
কারণটা নিশ্চয় আলাদা করে বলার দরকার নেই। চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপসহ বেশ কিছুদিন ধরেই ফর্মহীনতায় ভুগছেন সাকিব। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে নামলে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ অবস্থায় দেখা যাচ্ছে না এই অলরাউন্ডারকে।
২০ ম্যাচে সাকিবের ব্যাটে নাই একটা ফিফটিও। শেষ ২০ ম্যাচে গড় কেবল ১৮। বল হাতেও খুব একটা যে স্বাচ্ছন্দ্যে আছেন, এমনটাও বলা চলে না। উইকেট পাননি। নিজের ওভারও পুরো করতে পারেননি। ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে সাকিব খেলেছেন ২৮ টি-টোয়েন্টি ইনিংস। তাতে মাত্র ২৫.১৮ গড়ে নিয়েছেন ৫৫৪ রান। স্ট্রাইকরেট মাত্র ১২৩.৬৫। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ভূমিকায় থাকা সাকিবের কাছ থেকে যা বেশ অপ্রত্যাশিতই বটে। গত চার বছরে সাকিব ফিফটি পেয়েছেন মোটে ৩টি।
একইসময়ে বল হাতেও ভুগতে হয়েছে সাকিবকে। ২৮ ইনিংসে বল করে পেয়েছেন ২৯ উইকেট। বোলার হিসেবে বারবার ব্রেকথ্রু এনে দেয়া সাকিবের নামের পাশে যা কিছুটা বেমানান। অফফর্মের সেই ধারা আছে চলমান বিশ্বকাপ দলেও। চলতি বিশ্বকাপে দুই ম্যাচ খেলে সাকিব রান করেছেন ১১, পাননি কোনো উইকেট। যা সাকিবের নামের সাথে মোটেও মানানসই না।
স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে ভক্তদের মনে সাকিবের একাদশে থাকা নিয়েও। সবশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দলের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্যাট হাতে ব্যর্থ তিনি। ৪ রানের পরাজয়ে ভেঙেছে ভক্তদের মন। টানা ১৭ বছর দলের প্রয়োজনে পারফর্ম করে আসা সাকিবকে এখন বড্ড অচেনা মনে হয়।
এই সাকিবই কি সেরা অলরাউন্ডার? অনেকে তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাকিবের অবসর চেয়ে বসেছেন! তবে দর্শকরা কি ভুলেই গেলের অতীতের কথা, অবশ্য কজনই বা মনে রাখেন অতীত।
১৭ বছর বাংলাদেশ দলকে টানা সাকিবকে কি ২-৫ ম্যাচ টানতে পারবে না- প্রশ্ন থেকেই যায়! তবে নিজের ফর্ম নিয়ে সাকিবের ভাবনা কি? তিনি নিজে কি উপলব্ধি করছেন সেটাই বড় বিষয়। বছরের পর বছর ড্রাইভিং সিটে থাকা সাকিব এখন প্যাসেঞ্জারের ভূমিকায়! বিসিবি কি ভাবছে সেটাও বলা প্রয়োজন।
টাইগারদের সহকারী নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক খানিক আশাবাদী সাকিবকে নিয়ে। গতকাল রাইজিংবিডির এক অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বলেন, ‘দেখেন একট মন্তব্য করে দেওয়া সহজ। মুখ দিয়ে বের করে দিলে হয়ে যায় সেটা। একটা মানুষ ১৫ বছর ধরে এক নম্বরে আছে, সে একটা ম্যাচে সম্ভবত দুটার কোনোটা ক্লিক করেনি, আমরা হুট করে তার নামে একটা কথা বলে দিচ্ছি, আমি জানি না, আমি বলতে পারি না এটা। আমার কাছে এরকম মনে হয় না।’
‘প্রত্যেকটা জিনিষের একটা শেষ আছে। ওরও যখন সময় হবে, ও চলে যাবে, ছেড়ে দেবে, এটাই স্বাভাবিক। এটাই নিয়ম আসলে। এটা আসলে সৃষ্টি (বিতর্ক) করার মানে নাই, এটা আসলে সৃষ্টি করা ঠিকও না।’
২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে সাকিব খেলেছেন ২৮ টি-টোয়েন্টি ইনিংস। তাতে মাত্র ২৫.১৮ গড়ে নিয়েছেন ৫৫৪ রান। স্ট্রাইকরেট মাত্র ১২৩.৬৫। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ভূমিকায় থাকা সাকিবের কাছ থেকে যা বেশ অপ্রত্যাশিতই বটে। গত চার বছরে সাকিব ফিফটি পেয়েছেন মোটে ৩টি।
রাজ্জাক বললেন সাকিবকে একটু সম্মান দেওয়ার কথা। তিনি তো অন্তত কাছ থেকেই দেখেছেন নাম্বার ওয়ানকে, ‘আমরা বলি না গুনিজনের কদর করা উচিৎ। না হয় গুনিজন তৈরি হওয়া একটু মুশকিল। আমরা স্ট্রাগল করছি সাকিবের মতো ক্রিকেটার পেতে। আমরা এই মুহুর্তে বেশ স্ট্রাগল করছি, সাকিবের মতো সেরা ক্রিকেটার কেন আসছে না। কাছাকাছি মানের ক্রিকেটার কেন আসছে ন, হচ্ছে না কেন। হয়তো চাপের কারণে হতে পারে, বিভিন্ন কারণে হতে পারে। আমার কাছে মনে হয় একটু সম্মান করা উচিত।’
রাজ্জাকের আশা, সাকিব আরও খানিকটা সম্মান পাবেন, ‘ওর অন্য ব্যাপারে নিয়ে আমার আসলে কোনো কথা নেই। কারণ আমি ওর অন্য কিছু দেখার জন্য না। ক্রিকেটের ব্যাপার নিয়ে যদি হয় সম্মান করা উচিৎ। ও কি মানুষ, ওর অ্যাটিচিউড কি, ওর ব্যবহার মানুষের সাথে কী, এটা আমি কেয়ার করি না। কিন্তু ওর ক্রিকেট নিয়ে আরেকটু সম্মান করা উচিৎ।’
অতীতে যতবার সাকিবকে নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা হয়েছে তার প্রত্যেকবারই ব্যাট-বল হাতে জবাব দিয়েছেন তিনি। যত সমালোচনা ঠিক ততটায় আগ্রাসী পারফর্মম্যান্স, তবে সাকিবের মধ্যে এবারের জড়তাটাই উঁকি দিচ্ছে বেশি। বয়স একটা সংখ্যা হলেও সেই ছাপ লুকানো আসলে কঠিন। বয়সের দিক থেকে ৩৭ অবস্থান তারকা এই ক্রিকেটারের।
সবমিলিয়ে সাকিবের এবারের ফিরে আসাটা বড় চ্যালেঞ্জেরও। তবে সব কিছু পেছনে ফেলে পারফর্ম করে সাকিব এবারো কি ফিরবেন নিজের স্বরূপে নাকি শেষ হবে বাংলার ইতিহাস থেকে সাকিব অধ্যায়! এই প্রশ্নের উত্তর সময়ের কাছেই তোলা থাক। অবশ্য একটা কথা আছে নক্ষত্রেরও নাকি পতন হয়, সাকিব তো বাংলার ক্রিকেট আকাশে জ্বলজ্বল করতে থাকা নক্ষত্রই।
যদিও সাম্প্রতিক ব্যর্থতার সময়ে খুব কম মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছেন সাকিবের! তবে এত বছরের ঝুলি ঝুলি রান-উইকেট অর্জন করা সাকিব জানেন কিভাবে ফিরতে হয়, নিজেকে প্রমাণের জন্য সাকিবকে আরেকবার ফেরা যে বড্ড প্রয়োজন। মাথা বরাবর ধেয়ে আসা ওই বাউন্সার মাঠের বাইরের গ্যালারিতে পাঠানো হয়ত কেবল সময়ের ব্যাপারই।