ড. ইউনূসের অন্তর্র্বতী সরকারের শপথ আজ

প্রকাশিত: ১০:০৫ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৮, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাষ্ট্রক্ষমতার পটপরিবর্তনের তিন দিন পর আজ বৃহস্পতিবার দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার। কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফরম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের প্রস্তাব অনুযায়ী এই অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আজ রাত ৮টায় বঙ্গভবনে শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। তাকেসহ তার নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করতে যাওয়া সরকারের অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের শপথ উপলক্ষ্যে ইতিমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বঙ্গভবন কর্তৃপক্ষ।
চিকিৎসার জন্য ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে যাওয়া ড. ইউনূস আজ দুপুরে ঢাকায় পৌঁছাবেন। গতকাল ইউনূস সেন্টারের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ড. ইউনূসকে বহনকারী উড়োজাহাজ আজ দুপুর ২টা ১০ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। মঙ্গলবার রাতে বঙ্গভবনে দীর্ঘ বৈঠক শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ড. ইউনূসের একটি মাইনর অপারেশন হয়েছে। বৃহস্পতিবার তিনি দেশে পৌঁছাবেন। এরমধ্যে আমাদের তালিকাটিও (অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের) চূড়ান্ত হয়ে যাবে।’
ড. ইউনূসের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গতকাল বিকালে সেনা সদরে এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘তাকে আমরা রিসিভ করার জন্য বিমানবন্দরে যাব। তিনি আমাদের কাজকে স্বাগত জানিয়েছেন। আমরা সবাই মিলে তাকে সাহায্য করব।’ অন্তর্র্বতীকালীন সরকারে ১৫ জন সদস্য থাকতে পারেন বলেও জানান সেনাপ্রধান।

এদিকে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিতে যাওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া এক বার্তায় সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি সাহসী ছাত্রদের অভিনন্দন জানাই, যারা আমাদের দ্বিতীয় বিজয় দিবসকে বাস্তবে রূপ দিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং অভিনন্দন জানাই দেশের আপামর জনসাধারণকে, যারা ছাত্রদের এই আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন।’
নতুন এই বিজয়ের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার নিশ্চিতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে এই নোবেলজয়ী বলেন, ‘আমাদের কোনো প্রকার ভুলের কারণে এই বিজয় যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়। আমি সবাইকে বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে এবং সব ধরনের সহিংসতা, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি।’ ছাত্র-দলমত নির্বিশেষে সবাইকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রিয় এই সুন্দর ও বিপুল সম্ভাবনাপূর্ণ দেশটিকে নিজেদের ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রক্ষা করা এবং একে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই এখন প্রধান কাজ। একটি নতুন পৃথিবী বিনির্মাণে আমাদের তরুণেরা প্রস্তুত। অকারণে সহিংসতা করে সুযোগটি আমরা হারাতে পারি না।’

সব ধরনের সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া বার্তায় ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘সহিংসতা আমাদের সবারই শত্রু। অনুগ্রহ করে শত্রু সৃষ্টি করবেন না। সবাই শান্ত থাকুন এবং দেশ পুনর্গঠনে এগিয়ে আসুন। অনুগ্রহ করে নিজে শান্ত থাকুন এবং আশপাশের সবাইকে শান্ত থাকতে সাহায্য করুন।’

এদিকে ব্রিটিশ দৈনিক ‘ফিন্যান্সিয়াল টাইমস’ পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে ড. ইউনূস বলেছেন, ‘সরকারের প্রতি দ্রুত আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি। নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ করা দরকার। দেশ পুনর্গঠনে আমরা একসঙ্গে কীভাবে কাজ করতে পারি, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব দলের সঙ্গে কথা বলব। নতুন নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত হতে কাজ করা দরকার।’

ড. ইউনূসের অন্তর্র্বতীকালীন সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে কারা থাকছেন এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা। সরকারের রূপরেখা নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে মঙ্গলবার রাতে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। তাদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ও অধ্যাপক ড. তানজীম উদ্দীন খানও ছিলেন। ঐ বৈঠকেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।

বৈঠক শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বঙ্গভবনের সামনে সাংবাদিকদের বলেছেন, আশা করছি ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা উপদেষ্টাদের তালিকাও চূড়ান্ত করতে পারব। এ সময় ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেছেন, খুব দ্রুতই অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের প্রাথমিক তালিকা রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক সমন্বয়কের সূত্রে জানা গেছে, সম্ভাব্য উপদেষ্টাদের মধ্যে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আলী ইমাম মজুমদার, ড. শাহ্দীন মালিক, ড. তাসনিম আরেফা সিদ্দিকী, মো. তৌহিদ হোসেন, শহীদুল্লাহ খান বাদল, ড. আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রমুখ থাকতে পারেন। এর বাইরে মঙ্গলবার রাতের বৈঠকে রাষ্ট্রপতি একজন মুক্তিযোদ্ধাসহ আরো দুই জনকে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। আর একজন সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী থেকে একজন যুক্ত হতে পারেন।

বৈঠকের পর বঙ্গভবন থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রপতি বলেছেন, দেশ এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এ সংকট উত্তরণে যতদ্রুত সম্ভব অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন করা জরুরি। উপদেষ্টামণ্ডলীর অন্যান্য সদস্য মনোনয়নের ক্ষেত্রে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করার পরামর্শ দেন। জানা গেছে, ড. ইউনূসের পক্ষ থেকেও সম্ভাব্য উপদেষ্টাদের একটি তালিকা সমন্বয়কদের দেওয়া হয়েছে। তিনি আজ দেশে ফেরার পর তার সঙ্গে আলোচনা করে উপদেষ্টাদের নাম চূড়ান্ত করা হবে।