ফরিদপুর প্রতিনিধি:
ফরিদপুরে শিক্ষার্থীদের বাজার পর্যবেক্ষণের সময় এক ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত গুদামে সরকারি চাল ও টিসিবির পণ্য পাওয়া গেছে। আরেক গুদামে মিলেছে ওএমএসের মেয়াদোত্তীর্ণ আটা। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে চারটি গুদাম সিলগালা করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (সিনিয়র সহকারী কমিশনার) আবুজর মো. ইজাজুল হক।
সোমবার শহরের টেপাখোলা বাজারের ব্যবসায়ী ও বর্ষা অটোরাইস মিলের মালিক মোসলেম বিশ্বাসের চারটি গুদামে অভিযান চালানো হয়। এর আগে টেপাখোলা বাজার পর্যবেক্ষণ করছিলেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় গুদামে সরকারি চাল থাকার বিষয়টি জানতে পেরে জেলা প্রশাসককে অবগত করেন। পরে সেখানে একজন ম্যাজিস্ট্রেট পাঠান জেলা প্রশাসক।
সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহিম বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীরা বাজার মনিটর করছিলাম। এ সময় খবর আসে, একজনের গুদামে খাদ্য অধিদপ্তরের সিলমারা কয়েক বস্তা চাল রয়েছে। সেখানে গেলে ব্যবসায়ী মোসলেম বিশ্বাস আমাদের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেন। পরে আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘চালের দাম বেশির অন্যতম কারণ সিন্ডিকেট। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আমাদের জানিয়েছেন, গুদাম ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণেই মূলত চালের দাম বাড়ে। আমরা বাংলাদেশে কোনো সিন্ডিকেট দেখতে চাই না। সিন্ডিকেটের সঙ্গে জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তাও জড়িত রয়েছেন, যা তাদের আচরণে প্রমাণ হয়েছে।’
খবর পেয়ে সেখানে যান জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা (স্যানিটারি ইন্সপেক্টর) বজলুর রশিদ। তিনি শিক্ষার্থীদের জানান, জেলা প্রশাসক পাঠিয়েছেন। এ সময় তিনি কাগজপত্র না দেখেই সব কিছু বৈধ আছে বলে শিক্ষার্থী এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পরে তাদের তোপের মুখে পড়লে ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে চারটি গুদাম সিলগালা করেন। জানা গেছে, খাদ্য কর্মকর্তা ব্যবসায়ী মোসলেম বিশ্বাসের আত্মীয়।
সরেজমিন দেখা যায়, টেপাখোলা বাজার এলাকায় ওই ব্যবসায়ীর ৫-৬টি গুদাম রয়েছে। একটিতে রয়েছে চালের শতাধিক বস্তা। প্রতিটি বস্তায় লেখা ‘খাদ্য অধিদপ্তরের জন্য’। এ সময় সেখানে টিসিবির পণ্য লেখা আরও ৯টি বস্তায় ডাল পাওয়া যায়। একইভাবে লেখা আরেকটি গুদামে চালের সন্ধান মেলে। প্রতিটি বস্তায় সরকারি গুদামের চাল রয়েছে। অপর একটি গুদামে বিপুল পরিমাণ টিসিবির চিনি পাওয়া যায়। একটি গুদামে ‘ওএমএস’ লেখা শতাধিক বস্তা আটা দেখা যায়, যার মেয়াদ নেই।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, বিষয়টি জেনেছি। কয়েকটি গুদাম সিলগালা করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই ব্যবসায়ীর কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।