বগুড়া প্রতিনিধি:
বগুড়ার আদমদীঘিতে ছাত্রীকে জড়িয়ে অপবাদ ও সাময়িক বরখাস্ত করার পর ঢাকাগামী চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে হারুনুর রশিদ (৫০) নামে এক মাদ্রাসাশিক্ষক আত্মহত্যা করেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের কাছে কলাবাড়িয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের উদ্ধৃতি দিয়ে সান্তাহার রেলওয়ে থানার এসআই আবুল বাশার জানান, মাদ্রাসার এক ছাত্রীকে জড়িয়ে অপবাদ ও সাময়িক বরখাস্ত করায় তিনি আত্মহননের পথ বেছে নেন। লাশ উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, নিহত হারুনুর রশিদ নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাহার আলী শেখের ছেলে। তিনি রাণীনগর আল-আমিন দাখিল মাদ্রাসার শরীর চর্চা শিক্ষক ছিলেন। তিনি বেশ কয়েক দিন ধরে মানসিক হতাশায় ছিলেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বগুড়ার আদমদীঘির ছাতিয়ানগ্রাম রেলস্টেশনের কলাবাড়িয়া এলাকায় গ্লাসে পানি পান করছিলেন। এ সময় ঢাকাগামী চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেন ওই এলাকা অতিক্রম করছিল। তখন শিক্ষক হারুনুর রশিদ ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন। এতে ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
নিহত শিক্ষক হারুনুর রশিদের ভাতিজা আবদুল মালেক খন্দকার দাবি করেন, প্রতিপক্ষরা মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে তাকে জড়িয়ে অপবাদ দেন। তদন্তে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। চাচা এ মিথ্যা অপবাদ সহ্য করতে না পেরে মনের দু:খে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কলাবাড়িয়া গ্রামের আজিজুল ইসলাম জানান, ওই শিক্ষক রেললাইনের পাশে ব্যাগ নিয়ে পানি পান করার সময় ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন। ফলে ট্রেনে কেটে তার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শরীর চর্চা শিক্ষক হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠে। এছাড়া ক্লাসে অমনোযোগিতা, ক্লাসে বসে মোবাইলে ভিডিও দেখা, মাদ্রাসা প্রধানের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়া, অবাধ্যতামূলক আচরণ করারও অভিযোগ ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ জুন বিকালে মাদ্রাসার সুপার শরীফ উদ্দিন মাযহারী স্বাক্ষরিত চিঠিতে শিক্ষক রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এদিকে মোবাইল ফোন বন্ধ রাখায় মাদ্রাসা সুপারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, শিক্ষকের পরিবার থেকে অভিযোগ করলে তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।