যে কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বারবার সৃষ্টি হচ্ছে যানজট
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
ঢাকা প্রতিনিধি:
মাত্র ৮ বছর আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটিকে দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করা হলে মহাসড়ক থেকে যানজট অনেকটাই দূর হয়ে যায়। তবে গত দুই মাস ধরে প্রায় সময় মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। যে যানজট মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে সোনারগাঁয়ের মোঘরাপাড়া এলাকা ছাড়িয়ে যায়। এর ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রী ও বাসচালকদের।
মহাসড়কটি বর্তমানে চার লেনে থাকার পাশাপাশি এর দুইপাশে আরও দুই লেন নির্মিত হয়েছে আঞ্চলিক যানবাহন চলাচলের জন্য। তবুও হঠাৎ করে কেন বারবার যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এ নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে নানা কারণ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৫ আগস্টের পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে সারাদেশে পুরোদমে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে পুলিশ। এর ফলে পুলিশের অনুপস্থিতিতে যানবাহন চালকরা কোনো ট্রাফিক নিয়ম না মেনেই চলাচল করে আসছে। পাশাপাশি উল্টোপথে যানবাহন চলাচল, সড়কের মাঝখানে যাত্রী ওঠানামা করা, মহাসড়কে গাড়ি পার্কিং করে রাখা, টিকিট কাউন্টার ঘিরে বাসের জটলাতো আছেই। বর্তমানে সারাদেশের মতো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও পুলিশ কাজ করা শুরু করলেও সবার মধ্যে ট্রাফিক নিয়ম মানার প্রতি অনীহা লক্ষ্য করা গেছে।
এদিকে জনবল সংকট থাকার পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশে বড় একটি অংশে রদবদল চলমান থাকায় পূর্বের মতো মহাসড়কে নিরবচ্ছিন্ন কাজ করতে পারছে না হাইওয়ে পুলিশ। এর ফলে ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গ করা যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ, মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা আন্দোলন করলে তা নিষ্ক্রিয় করাসহ যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হাইওয়ে পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বিভিন্ন তথ্যমতে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন। বৈদেশিক বাণিজ্যের অধিকাংশই নির্ভর করে এ মহাসড়কের ওপর। বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে দিনে ছোট বড় মিলিয়ে ৩০-৪০ হাজার যানবাহন আসা যাওয়া করে থাকে। বিভিন্ন উৎসব কিংবা ছুটিকে কেন্দ্র করে যানবাহনের চাপ আরও বেড়ে যায়। এর ফলে মহাসড়কের কোথাও কোনো যানবাহন বিকল হয়ে গেলে কিংবা সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে যানজট বড় আকার ধারণ করে।
মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও মহাসড়কে অবাধে চলছে তিন চাকার বিভিন্ন যানবাহন। কাঁচপুর হাইওয়ে থানার সামনেই কোনো বাধা ছাড়াই এইসব যানবাহন চলাচল করছে। এছাড়া কাঁচপুর ব্রিজের নিচে অটোরিকশা, ইজিবাইকের স্ট্যান্ড বানিয়ে রাখা হয়েছে। এইসব তিন চাকার যানবাহনগুলো মহাসড়কে উল্টোপাশে চলাচলের পাশাপাশি দূরপাল্লার যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘটাচ্ছে নানা দুর্ঘটনা।
এছাড়া কাঁচপুর ব্রিজের নিচে এবং সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে অবাধে অটোরিকশা থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানোর ফলে সার্ভিস লেনে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি দূরপাল্লার যানবাহন থেকে শুরু করে আঞ্চলিক যানবাহনগুলো ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
সামগ্রিক বিষয়ে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার শিমরাইল ক্যাম্পের টিআই আবু নাঈম সিদ্দিকী বলেন, মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ নিয়মিত কাজ করছে। আমাদের একাধিক টিম শিমরাইল, সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন স্থানে টহল অবস্থায় থাকে। আমাদের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জ অংশে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কও দেখতে হয়। বর্তমানে ওই মহাসড়কে যানজট বেশি সৃষ্টি হওয়ায় আমাদের অধিকাংশ টিম সিলেট মহাসড়কে মোতায়েন থাকে। দুদিন আগে কাঁচপুরে মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা আন্দোলন করলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এখানে তো পুলিশের কোনো দোষ নেই। বর্তমানে আমাদের কিছুটা জনবল সংকট রয়েছে। সেই সঙ্গে অধিকাংশ পুলিশ নতুন করে বদলি হওয়ায় কাজে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে।
তিনি আরও বলেন, টানা বৃষ্টিতে মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে সোনারগাঁ অংশে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কিংবা কোনো যানবাহন যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে ওই যানজট আমার অংশে চলে আসে। বর্তমানে অধিকাংশই মানুষই ট্রাফিক আইন মানেন না। এছাড়া ঢাকার মাতুয়াইল অংশে ভারী যানবাহন আটক করলে তখন উল্টোপথে কিছু যানবাহন ঢাকার দিকে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। এর ফলে ঢাকায় সৃষ্ট যানজট সাইনবোর্ডে চলে আসে। তবে আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই সবকিছু শৃঙ্খলার মধ্যে চলে আসবে। পাশাপাশি আমরা চেষ্টা করছি অচিরেই সব সমস্যা দূর করার।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াহিদ মোর্শেদ বলেন, উল্টোপথে গাড়ি চলাচল করা, আঞ্চলিক পরিবহনগুলোর চালকরা মহাসড়কে দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করার পাশাপাশি মহাসড়কের কিছু অংশে ভাঙাচোরা থাকার কারণে এই যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে পূজাকে ঘিরে আজ এবং আগামীকাল মহাসড়কে বাড়তি জনবল মোতায়েন করেছি। আর আমাদের বর্তমানে জনবল সংকট রয়েছে। এই সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে আশা করি আর যানজট থাকবে না।
মহাসড়কে সংস্কারের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, টানা বৃষ্টিতে মহাসড়কের কয়েক স্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা এরইমধ্যে তা সংস্কার করেছি। পাশাপাশি কোথাও কোনো গর্তের সৃষ্টি হলে কিংবা ভেঙে গেলে তা মেরামত করার জন্য আমরা সার্বক্ষণিক সজাগ রয়েছি। এছাড়া মহাসড়কের শিমরাইল মোড়ে আমাদের কিছু কাজ বাকি রয়েছে, এর কাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে।