ক্রীড়া ডেস্ক:
কানপুরে সাকিব আল হাসান যখন বললেন, দেশে ফেরা নিয়ে সমস্যা না, খেলা শেষ করে বাইরে (বিদেশ) যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা। এর পর থেকে সাকিবের দেশে ফেরা নিয়েও দুশ্চিন্তা বেড়ে গিয়েছিল। বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছিল। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের বক্তব্য, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার প্রতিক্রিয়া বাড়িয়ে দিয়েছিল উৎকণ্ঠা। গতকাল সেসবের অবসান হলো ক্রীড়া উপদেষ্টার স্পষ্ট বক্তব্যে। তিনি জানান, সাকিবের দেশে ফেরা ও বিদেশে যাওয়াতে সমস্যা নেই। বিপিএল ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে
হোম সিরিজ আয়োজন নিয়ে বিসিবির সার্বিক প্রস্তুতি দেখতে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এসে এক ব্রিফিংয়ে সাকিবের বিদায় ইস্যুতে কথা বলেন উপদেষ্টা। এ নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিয়ে সাকিবের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে কিছু বলেননি। পরে তিনি নিজে থেকেই ক্রীড়া উপদেষ্টার বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চান। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদও স্বস্তি নিয়ে জানান, সবকিছু ভালোভাবেই হবে। সরকার থেকে সবুজ সংকেত দেওয়ায় ১৭ অক্টোবর ঢাকায় ফিরতে পারেন সাকিব। এ নিয়ে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের উপব্যবস্থাপক শাহরিয়ার নাফীকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে চলে আসবে।’
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শেষ ম্যাচ খেলে টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায় নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন সাকিব। বিসিবি সভাপতিকে নিজের ইচ্ছার কথা জানালে, নিরাপত্তা ইস্যুতে সমাধান দিতে পারবেন না বলে প্রতিক্রিয়া দেন সভাপতি ফারুক আহমেদ। ক্রীড়া উপদেষ্টাও শর্ত দিয়েছিলেন সাকিবকে রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করা এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সমর্থন না দেওয়ায় ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন। ৩৭ বছর বয়সী এ অলরাউন্ডারের স্ট্যাটাসের পরই বরফ গলার পাশাপাশি সাকিব বিরোধিতাও প্রকাশ্যে আসে। বিসিবির দেয়ালে সম্প্রতি সাকিবকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য লেখা হয়। যেটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় সাকিব সমর্থকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তারাও একাট্টা হতে থাকেন। এই বিরোধ বাড়ার সুযোগ না দিয়ে সাকিবকে বিদায়ী টেস্ট খেলার সুযোগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বাঁহাতি এ অলরাউন্ডারের নিরাপত্তা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘(সাকিবের) দেশে আসা কিংবা বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে তো কোনো বাধা থাকার কথা নয়। একজন ক্রিকেটার, তিনি খেলবেন এবং তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। আসার ব্যাপারে তো আমি কোনো বাধা দেখি না। প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ক্রিকেট দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেটা আমরা নিশ্চিত করব।’
২১ অক্টোবর থেকে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের প্রথম টেস্ট। যেটি হবে সাকিবের শেষ টেস্ট। এই ম্যাচ খেলার নিশ্চয়তার জন্য গত কয়েক দিন মরিয়া হয়ে চেষ্টা করেছিলেন বিসিবি বস ফারুক ও অলরাউন্ডার সাকিব। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব মহল রাজি হওয়ায় খেলার নিশ্চয়তা পেয়েছেন। সাকিবের বিদায় ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অনুষ্ঠেয় টেস্ট সিরিজ ঘিরে কোনো মহল যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সে দিকটা দেখছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের একাংশ। বিসিবির সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। সমন্বয়কদের থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ কেউ শেরেবাংলা স্টেডিয়াম নিয়মিত পরিদর্শন ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। বিশেষ করে দেয়াল লিখনের পর সরব হয়েছেন তারা। এই লিখন নিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এটা তো আসলে আবেগের ব্যাপার। তাদেরও ওই অধিকার আছে। গণতান্ত্রিক দেশ, সাংবিধানিক অধিকার আছে যে কোনো ধরনের আন্দোলন বা যে কোনো কিছু করার।’ তবে নিরাপত্তা ইস্যুতে অনড় অবস্থান উপদেষ্টার, ‘নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। যেহেতু এখানে দক্ষিণ আফ্রিকা আসবে, আমাদেরও পরিবেশটা ভালো রাখতে হবে। না হলে বাইরের দেশগুলো এখানে খেলতে আসার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার সমস্যা বোধ করবে।’ ক্রীড়া উপদেষ্টা সবার প্রতি আহ্বান জানান সুশৃঙ্খল থাকার জন্য, ‘কারও নিরাপত্তাই যেন হুমকির মধ্যে না পড়ে। কোনো আইনগত বিষয় থাকলে, সেটা আইনের মতো করেই চলবে। সঙ্গে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের আগের একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছেন, ‘সংশ্লিষ্টতা না থাকলে যে হত্যা মামলা হয়েছে, সেখান থেকে নাম (সাকিবের) বাদ পড়ে যাবে।’
সাকিব নিজের ভুল বুঝতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করার বিষয়টি তুলে ধরা হলে উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা বড় আন্দোলন হয়েছে এবং সাকিব আল হাসানের আগের ফ্যাসিবাদী সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল। এ ব্যাপারে তিনি তাঁর পোস্টে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তার পরও কিছু আবেগ রয়ে গেছে। তবে কোনো আইনি সমস্যা এখন পর্যন্ত নেই বলেই দেখা যাচ্ছে।’ এ ছাড়া হত্যা মামলার হুকুমের আসামি করায় সাকিবকে হয়রানির শিকার হতে হবে কিনা– জানতে চাওয়া হলে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আইন তো আইনের মতো চলে। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের মানুষ আইনের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। এটা এর আগেও প্রমাণ হয়েছে। এত বড় একটা অভ্যুত্থান হয়েছে। এ রকম অভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন দেশে যে রকম পরিস্থিতি হয়, আমাদের দেশের পরিস্থিতি কিন্তু সেদিকে যায়নি। বাংলাদেশের মানুষ তাদের এই অবস্থানটা রাখবে, এটাই আমি বিশ্বাস করি।’