চুয়াডাঙ্গায় বাড়ছে নিউমোনিয়া, হাসপাতালের মেঝেতে চলছে চিকিৎসা

প্রকাশিত: ১২:১৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৫, ২০২৪

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:

চুয়াডাঙ্গায় আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। এর মধ্যে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা।
এর ফলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালেও প্রতিদিন অসংখ্য হারে ভর্তি হচ্ছে রোগী, শিশু ওয়ার্ডে তিল পরিমাণ জায়গা নেই। অন্যদিকে চাপ রয়েছে হাসপাতালের বহিঃবিভাগেও। প্রতিদিন জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি আক্রান্ত হয়ে ৫০০-১ হাজার শিশু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন।

চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে শিশুদের অতিরিক্ত যতœ ও অভিভাবকদের সচেতনতার বিকল্প নেই।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ দিনে অর্থাৎ ৭ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত শিশু ওয়ার্ডের মোট ভর্তি হয়েছে ৪০৪ শিশু রোগী। এর মধ্যে ৫০ শতাংশই নিউমোনিয়া আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকাল ও রাতে সদর হাসপাতালের পুরোনো ভবন ঘুরে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ডে তিল পরিমাণ পা ফেলার জায়গা নেই। এমনকি পুরোনো ভবনের কপালসিবল গেট পর্যন্ত পাটি বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে শিশু রোগীরা৷ একদিকে শিশু রোগীদের যেমন চাপ, তেমনই লোকবল সংকটের কারণে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকরা৷ তবে নার্সদের অক্লান্ত পরিশ্রমে রোগীর স্বজনদের সন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ রেহেনা পারভিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে এবার অতিরিক্ত হারে শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ওয়াড়র্ে পা ফেলার জায়গা নেই। একদিকে লোকবল সংকট অপরদিকে রোগীদের চাপ সামলাতে প্রচুর বেগ পেতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদরের গাড়াবাড়িয়া গ্রামের বেল্টু নামে এক ব্যক্তি বলেন, গত চার দিন আগে হঠাৎ করেই আমার ছেলে প্রচণ্ড জ্বর ও ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হয়। বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা করেও কম না হলে দু-দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করাই। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ছেলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।

হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, আগের তুলনায় চিকিৎসা সেবা ভালো হয়েছে। বাচ্চাদের কোনো সমস্যা হলে নার্সদের ডাকার সঙ্গে সঙ্গেই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি জরুরি বিভাগের চিকিৎসককে জানানো হলে তিনিও তাৎক্ষণিক এসে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
ইখলাস নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমার নাতি জ্বর ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হয়। অবস্থা বেগতিক হলে গতকাল (সোমবার) সকালে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। ওয়ার্ডে কোনো জায়গা খালি নেই। নাতিকে নিয়ে মেঝেই চিকিৎসা দিচ্ছি।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে সদর হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে৷ এর মধ্যে ৫০ শতাংশই নিউমোনিয়া আক্রান্ত। এ সময় বাচ্চাদের সতর্ক রাখতে হবে। বাচ্চাদের মায়েদের বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে। ৬ মাসের বড় বাচ্চাদের অন্যান্য খাবার দিতে হবে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়। এ সময় শিশুদের যত্ন বা অভিভাবকরা সচেতন না হলে শিশুদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।