বিদেশে থেকেও বিএনপিকর্মী হত্যার আসামি সাবেক মেয়র

প্রকাশিত: ১১:৪৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৯, ২০২৪

নোয়াখালী প্রতিনিধি:

নোয়াখালীর চাটখিলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বিএনপিকর্মী আলমগীর হোসেন আগুনের (৪০) মৃত্যুর ৮ বছর পর সাবেক এমপি এইচ এম ইব্রাহিমসহ আওয়ামী লীগের ২৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে। মামলায় বিদেশে থেকেও ৫নং আসামি হয়েছেন চাটখিল পৌরসভার সাবেক মেয়র ভিপি নিজাম উদ্দিন।

১৫ অক্টোবর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভুক্তভোগীর ভাই গোলাম মাওলা বাদী হয়ে নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন।

বাদী পক্ষের আইনজীবী হুমায়ুন কবির শিশির  বলেন, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আমলি আদালত-৭ এর বিজ্ঞ বিচারক নুরজাহান বেগম মামলাটি গ্রহণ করেন। মামলায় এইচ এম ইব্রাহিমসহ ২৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। বিচারক এরপর চাটখিল থানায় পূর্বে এ সংক্রান্ত কোনো মামলা হয়েছে কি না তা আগামী ২২ অক্টোবরের ভেতর রিপোর্ট জমা দিতে বলেন।

জানা যায়, নিজাম উদ্দিন ১৯৮৩ সালে চাটখিল ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তারপর ৮৭ সালে চাটখিল সরকারি কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯৩ সালে ভাগ্য পরিবর্তনে পাড়ি জমান সৌদিতে। যোগদান করেন সৌদিয়া ক্যাটারিং সার্ভিসে। দীর্ঘ ২১ বছরের প্রবাস জীবন শেষে ২০১৭ সালের ২১ জুন ডিসেম্বরে দেশে আসেন। ২০২১ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মেয়র পদে চাটখিল পৌরসভার মেয়র হিসাবে নির্বাচিত হন।

ভিপি নিজাম উদ্দিনের বিদেশে থাকার কাগজপত্র হাতে আসে  প্রতিবেদকের কাছে। এতে দেখা যায়, ২০১৫ সালের ১৯ আগস্ট পাসপোর্ট নবায়ন করেন নিজাম উদ্দিন। তারপর একেবারেই ২০১৭ সালের ২১ জুন ডিসেম্বরে দেশে এসে প্রবাস জীবনের ইতি টানেন। কিন্তু বিএনপিকর্মী আলমগীর হোসেন আগুন মারা যান ২০১৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। তখন নিজাম উদ্দিন সৌদিয়া ক্যাটারিং সার্ভিসে কর্মরত ছিলেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চাটখিল থেকে মোটরসাইকেলে বাড়ি যাওয়ার পথে ১১নং পোল নামক স্থানে অজ্ঞাতনামা গাড়ির সঙ্গে দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন। স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এঘটনায় ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ বাদী হয়ে একটি ইউডি মামলা করেন। পরে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ। তবে কোথাও তাকে হত্যার ঘটনা প্রমাণিত হয়নি।

এদিকে মামলার আবেদনে ভুক্তভোগীর ভাই গোলাম মাওলা উল্লেখ করেন, আলমগীর হোসেন আগুন ২০১৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে দলীয় কর্মসূচি পালনের জন্য শহীদ মিনারে ফুলের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বাড়ি হতে চাটখিল বাজার আসার সময়ে ১১নং পোলের পশ্চিম পাশে পৌঁছালে সাবেক এমপি এইচ এম ইব্রাহিম ও সাবেক মেয়র মোহাম্মদ উল্যার হুকুমে আওয়ামী লীগ নেতা বেলায়েত হোসেন ও নাজমুল হুদা শাকিল মোটরসাইকেলের গতিরোধ করেন। এ সময় তাদের হাতে থাকা দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে আমার ভাইয়ের সারা শরীর জখম করে। আসামিদের উপর্যুপরি আঘাতে রক্তপাত হতে হতে ভুক্তভোগী রাস্তার ওপর ঢলে পড়লে সব আসামি একসঙ্গে তার হাত-পা ও গলায় চাপ দিয়ে হত্যা করার উদ্দেশ্যে গলা কাটতে গেলে সে বাঁচার জন্য চেষ্টা করে। কিন্তু তারা ছুরি দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে স্থান ত্যাগ করে।

মামলার ৩ নম্বর আসামি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বেলায়েত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটি সড়ক দুর্ঘটনাকে হত্যা মামলা বলে দীর্ঘ আট বছর পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। প্রবাসীকেও এমন হয়রানি থেকে বাদ দেয়নি। মিথ্যা ঘটনা বর্ণনা দিয়ে নাটক সাজিয়েছে তারা। স্থানীয়রা বলছে সড়ক দুর্ঘটনা অথচ তার ভাই ৮ বছর পর বলছে হত্যাকাণ্ড। মামলায় তারা বলছে চাটখিল যাওয়ার পথে অথচ পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে চাটখিল থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে। তার ভাই বলছে জবাই করে হত্যা অথচ ময়নাতদন্তে এমন কোনো আলামতই পায়নি। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অপমৃত্যুর মামলা করেছে, যা নিষ্পত্তিও হয়েছে। থানা পুলিশের কাছে সকল প্রমাণাদি আছে। আশা করি আমরা ন্যায় বিচার পাবো।

প্রবাসে থেকেও হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে মর্মাহত হয়েছেন চাটখিল পৌরসভার সাবেক মেয়র ভিপি নিজাম উদ্দিন। তিনি  বলেন, আমি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলাম। থানা সভাপতি ও কলেজের ভিপি নির্বাচিত হয়েছি। তারপর ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য দীর্ঘ ২১ বছর প্রবাস ছিলাম। এরমধ্যে ৩/৫ বছর পর পর দেশে আসতাম। ২০১৫ সালে পাসপোর্ট নবায়নের পর ২০১৭ সালে আমি দেশে আসি। অথচ প্রবাসে থাকা অবস্থায় ২০১৬ সালের বিএনপির কর্মীর নিহতের ঘটনায় আমাকে ৫ নং আসামি করা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমি দীর্ঘদিন মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছি। আমার মাধ্যমে কেউ কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। সুপরিকল্পিতভাবে আমাকে আসামি করা হয়েছে।

এবিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী হুমায়ুন কবির শিশির বলেন, মামলার আবেদন করা হয়েছে। ২২ তারিখের মধ্যে থানাকে পূর্বে মামলা আছে কি না তা জানাতে বলেছে। আদালত ২২ তারিখ এবিষয়ে আদেশ দেবেন। তবে যদি প্রবাস থাকাকালীন সময়ের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে বিষয়টি তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখে তারপর নাম বাদ দিতে পারবেন।