লালন মেলায় ভক্ত-দর্শনার্থীদের ভিড়, শৌচাগার সংকটে ভোগান্তি
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ায় আধ্যাত্মিক সাধক ফকির লালন শাহের ১৩৪তম তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে তিন দিন ব্যাপী লালন মেলা চলছে। লালন মেলায় হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে। বিপুল মানুষের জন্য শৌচাগারের সংখ্যা খুবই অপর্যাপ্ত। মেলায় এসে প্রয়োজনে টয়লেট ব্যবহার রীতিমতো বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। টয়লেট ব্যবহার করতে ১০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে লালন ভক্ত, অনুসারী ও দর্শনার্থীদের। অনেকে যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করছেন। এতে আরও ভোগান্তিতে পড়েছেন দর্শনার্থীরা।
অপরিচ্ছন্ন এসব টয়লেটের মেঝে পানি জমে স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে। দুর্গন্ধযুক্ত এসব টয়লেট ব্যবহার করতে হচ্ছে অনেকটা বাধ্য হয়ে। নাকমুখ চেপে ধরে নিতান্ত বিপদে পড়ে শুধু পুরুষেরা এসব গণশৌচাগার ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। আর নারীদের কথা না বলাই ভালো। প্রতিবার মেলার সময় এই ভোগান্তি তৈরি হয়। দীর্ঘদিনের এ সমস্যা সুরাহার জন্য শৌচাগার চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
মেলায় আসা লালন ভক্ত, অনুসারী ও দর্শনার্থীরা বলেন, আমরা লালন মেলায় এসে মুগ্ধ হয়েছি, আনন্দিত হয়েছি। কিন্তু মেলার টয়লেটের সংখ্যা খুবই অপর্যাপ্ত ও ব্যবহারের অনুপযোগী। প্রতিবার এই সমস্যা তৈরি হয়। লালন মেলার টয়লেট ব্যবহার করতে ১০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। লালন ভক্ত, অনুসারী ও দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্যও এই সমস্যার সমাধান করা হয়নি। খুব ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অপর্যাপ্ত টয়লেট ও টাকা নেয়ার কারণে অনেকে যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করছেন। এতে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিনের এই সমস্যার সমাধান চান তারা।
ফকির লালন শাহের ১৩৪তম তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া লালন আখড়াবাড়িতে তিন দিনব্যাপী লালন মেলা শুরু হয়েছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং লালন অ্যাকাডেমির আয়োজনে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত লালন মেলা চলবে।
মেলাকে ঘিরে লালন শাহের মাজার প্রাঙ্গণ, মাঠ, কালি নদীর পাড় ঘেঁষে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভক্ত-অনুসারীরা জড়ো হয়েছেন। আখড়াবাড়ি চত্বরে তিল পরিমাণ জায়গা ফাঁকা নেই। চত্বরের এক কিলোমিটার আগে থেকে সাধু, ভক্ত ও অনুসারীদের ঢল নেমেছে। লালন মেলা পরিণত হয়েছে হাজার-হাজার মানুষের মিলন মেলায়।
বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসছেন। এদের মধ্যে অনেকেই মেলার বিভিন্ন স্টল থেকে কেনাকাটা করেছেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা দেশি-বিদেশি ভক্ত-অনুসারীরা দলবদ্ধ হয়ে লালন ফকিরের গান গাইছেন। দিনরাত গান ছাড়াও তারা লালন ফকিরের বাণী নিয়ে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করছেন। অনেকে আবার লালনের মত ও পথের দীক্ষা নিচ্ছেন।
লালন ভক্ত ও অনুসারীরা জানান, লালন মেলা হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখরিত। এখানে মানুষের ঢল নেমেছে। দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত আসছেন। যতই সময় পার হচ্ছে ততই ভিড় বাড়ছে। লালন ফকিরের গানে গানে এখন মুখরিত এই এলাকা।
কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি শারমিন আখতার বলেন, টয়লেটের সমস্যা সমাধান করা হবে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। লালন মেলার সার্বিক কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলছে। মাজার প্রাঙ্গণ ও তার আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।
প্রসঙ্গত, ১২৯৭ বঙ্গাব্দের ১ কার্তিক উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের মৃত্যুর পর থেকে তার স্মরণে লালন একাডেমি ও জেলা প্রশাসন এই স্মরণোৎসব চালিয়ে আসছে। প্রতিবছর ১ কার্তিক আড়ম্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ফকির লালন শাহের তিরোধান দিবস পালন করা হয়।