মুন্সীগঞ্জে সরকারি টিকা সংকট, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিশুরা
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:
মুন্সীগঞ্জে গত এক মাস ধরে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) টিকা সরবরাহ বন্ধ থাকায় সময়মতো টিকা দেওয়া যাচ্ছে না হাজারো নবজাতক শিশুকে। এতে শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বলে জানালেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দ্রুত টিকার সংকট সমাধান না হলে পোলিও, রুবেলা, ডিপথেরিয়া, নিউমোনিয়া, কাশি, ধনুষ্টঙ্কার বা টিটেনাস ও জন্ডিসের মতো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা।
২৫০ শয্যার মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরবরাহ বন্ধ থাকায় সময়মতো টিকা দেওয়া যাচ্ছে না সদরের দুই হাজার ৭০০ শিশুকে। অভিভাবকরা তাদের নবজাতকদের নিয়ে বারবার হাসপাতাল ও টিকাকেন্দ্রে গিয়ে খালি হাতে ফিরছেন। কবে টিকা পাবেন, তাও নিশ্চিত করে জানানো হচ্ছে না তাদের। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন শিশুদের অভিভাবকরা।
হাসপাতালের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত এক মাস ধরে পোলিও, রুবেলা, ডিপথেরিয়া, নিউমোনিয়া, কাশি, ধনুষ্টঙ্কার বা টিটেনাস ও জন্ডিসের টিকার সরবরাহ বন্ধ আছে। এককথায় ইপিআই কর্মসূচির কোনও টিকার সরবরাহ নেই বলে জানালেন হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
শহরের দক্ষিণ ইসলামপুরের বাসিন্দা রুবিনা খাতুন বলেন, আমার সন্তানের বয়স চার মাস। এর মধ্যে একবার টিকা দিয়েছি। গত এক মাস ধরে দ্বিতীয় টিকা দেওয়ার জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে যাচ্ছি। কিন্তু টিকা না দিয়েই ফিরতে হচ্ছে। কবে নাগাদ দেবে তাও বলতে পারছেন না স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। গেলেই বলে এখনও টিকা আসেনি। এলে জানানো হবে।
শহরের মহাকালী এলাকার বাসিন্দা মো. রতন মিয়া বলেন, গত দেড় মাসে তিন দিন হাসপাতাল ও পৌরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তানকে টিকা দেওয়ার জন্য নিয়ে গেছি। কোথাও টিকা নেই। কবে আসবে তাও বলতে পারছেন না স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। গেলেই ফেরত পাঠাচ্ছেন। কবে টিকা পাবো, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
একই ভোগান্তির কথা জানালেন শহরের খালইস্ট এলাকার ময়না বেগম। তিনি বলেন, গত এক মাসে চারবার গেছি টিকার জন্য। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন আগামী মাসের ২-৩ তারিখে যেতে, তাও পাবো কিনা নিশ্চিত না। প্রতিবার হাসপাতালে যেতে আমাদের অনেক টাকা খরচ হয়। ভোগান্তি পোহাতে হয়। আমার শিশুর বয়স তিন মাস। প্রথম টিকা দিলেও এখনও দ্বিতীয়টি দিতে পারিনি। ইতিমধ্যে মাস পার হয়ে গেছে।
সময়মতো টিকা না দিলে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে জানিয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু বিশেষজ্ঞ) ফায়েকা হাফিজ বলেন,‘অনেক জায়গায় এই টিকাগুলোর সংকট আছে। এতে শিশুরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। যেসব রোগের জন্য এসব টিকা দেওয়া হয়, সেসব রোগ কিন্তু আবার বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে শিশুদের শরীরে আসতে পারে। সেজন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করবো, দ্রুত সময়ে টিকাগুলোর সরবরাহ নিশ্চিত করার।
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের টিকাদানকারী মো. মাসুদ পারভেজ নাহিদ বলেন, আমাদের এখানে গত দেড় মাস ধরে ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন (ওপিভি), পেন্টালেন্ট, পিসিভি, টিটি টিকাসহ ইপিআইয়ের কোনও টিকার সরবরাহ নেই। আগেও সংকট দেখা দিতো। চাহিদাপত্র পাঠালে পাওয়া যেতো। তবে এবারের মতো দীর্ঘ সময়ের সংকট দেখা দেয়নি। আগে টিকাগুলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ফ্রি দিতো। এখন কিনে আনতে হয়। ফলে সময়মতো আসছে না। সেজন্য শিশুদের দিতে সমস্যা হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জ সদরে দুই হাজার ৭০০ শিশু টিকার আওতায় আছে। আশা করছি, সংকট দ্রুত কেটে যাবে।
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার স্বাস্থ্য সহকারী অলিভিয়া আক্তার বলেন, শিশুদের এসব টিকা দিলে পোলিও, রুবেলা, ডিপথেরিয়া, নিউমোনিয়া, কাশি, ধনুষ্টঙ্কার ও জন্ডিসসহ কয়েকটি রোগ থেকে নিরাপদ থাকে। তবে এটি এমন নয় যে, এখনই টিকা না দিলে তাদের এই রোগ দেখা দেবে। হয়তো কিছুদিনের মধ্যে টিকাগুলো চলে আসবে। যতগুলো শিশু টিকা পায়নি তাদের সবাইকে আমরা ডেকে এনে টিকাগুলো দিয়ে দেবো।
কেন টিকার সংকট জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুরুল আলম বলেন, শুধু মুন্সীগঞ্জে নয়, সারা দেশে এসব টিকার সংকট দেখা দিয়েছে। মহাখালী থেকে এগুলো সরবরাহ করা হয়। আমাদের চাহিদা তাদের জানিয়েছি। প্রতিদিন তাদের সঙ্গে কথা বলছি। তবে দুই সপ্তাহ হয়েছে আমরা কোনও টিকা পাইনি। তারা আমাদের বলেছেন আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে। কারণ সরবরাহ বন্ধ আছে। টিকাগুলো আসার পর যদি শিশুদের এক বছরের মধ্যেও দিতে পারি তাহলে কোনও সমস্যা হবে না। যদি তারও বেশি সময় লাগে তখন স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকবে। তবে অচিরেই সব টিকা পাবো বলে আশা করছি আমরা।