ইসলামের দৃষ্টিতে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ও সম্পদ হলো আমানত
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
Latest News Bd
ড. এস এম জাহাঙ্গীর আলম:
রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ও সম্পদ হলো আমানত। এই আমানত সোপর্দ করার মূলনীতি ইসলামি শরিয়া স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে। ইসলামি শিক্ষামতে পদ সোপর্দ করার মানদণ্ড হলো যোগ্যতা। যার মধ্যে যোগ্যতা রয়েছে, সেই ব্যক্তিই ঐ কাজের জন্য উপযুক্ত। এজন্য বিভিন্ন বিভাগে কর্মী নিয়োগের সময় অঞ্চলভিত্তিক, সংখ্যালঘু হিসেবে, নারী অথবা মৃত চাকরিজীবীর সন্তানদের জন্য যে কোটাপ্রথা রয়েছে, তা সুন্নাহর আলোকে তখনই বৈধ হবে, যখন এই গুরুদায়িত্ব আঞ্জাম দেওয়ার জন্য উপযুক্ত যোগ্যতা তাদের মধ্যে থাকবে। যোগ্যতাশূন্য অবস্থায় কোটাপ্রথার ব্যবহার জায়েজ নেই। হাদিস শরিফে রয়েছে :যখন কাজের দায়িত্ব অনুপযুক্ত ব্যক্তিকে সোপর্দ করা হয়, তখন কেয়ামতের অপেক্ষা করো।
তাকওয়া অর্থ খোদাভীতি ও পরহেজগারি। তাকওয়ার অপরিহার্য দাবি হলো দায়িত্ববোধ। অর্থাত, প্রত্যেক কর্তা ও দায়িত্বশীল ব্যক্তির নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পরিপূর্ণ আঞ্জাম দেওয়ার অনুভূতি থাকা। যখন পদের অধিকারীদের মধ্যে তাকওয়া পয়দা হবে, তখন তারা দুনিয়া ও পার্থিব সমুদয় বস্তু থেকে বিমুখ হয়ে কর্তব্য আঞ্জাম দেওয়ার মধ্যে পরিপূর্ণ সময় ব্যয় করতে ব্যস্ত থাকবেন। সরকারি চাকরিজীবী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের জন্য যত কঠিন থেকে কঠিনতর আইন করা হোক না কেন, তাকওয়া অর্জন না করা পর্যন্ত তাদের মধ্যে সুচারুরূপে দায়িত্ব পালন করার মানসিকতা তৈরি হবে না। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,সবচেয়ে উত্তম পাথেয় হলো তাকওয়া। আর হে জ্ঞানীগণ! তোমরা আমাকে ভয় করো। উমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.) অধিকাংশ সময় কাঁদতেন। তার স্ত্রী জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, যখন আমি নিজের বিষয়ে চিন্তা করি, এই উম্মতের ছোট-বড়, সাদা-কালো সবার বিষয়ে আমি দায়িত্বশীল। দরিদ্র, অসহায়, বন্দি, হারিয়ে যাওয়া মুসাফিরসহ রাষ্ট্রের অন্য সবার দায়িত্ব আমার কাঁধে। এটা তো নিশ্চিত, আল্লাহ তাদের সবার বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করবেন। যদি আমি আল্লাহ ও তার রসুল (স.)কে উত্তর না দিতে পারি…? এই চিন্তা আমার মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে; ফলে আমি কান্না শুরু করি।’
ইসলামের দৃষ্টিতে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ও সম্পদ
হলো আমানত
স্বজনপ্রীতি বর্তমান সময়ের দুর্নীতির অন্যতম কারণ। সরকারি পদাধিকারী ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের রক্ষক নিজের আত্মীয়স্বজনকে প্রাধান্য দেওয়ায় সমাজ ও রাষ্ট্রে নানাবিধ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। ইসলাম বিচারসহ সর্বক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি থেকে দূরে থেকে ন্যায়কে গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন :হে ইমানদারগণ। তোমরা ন্যায়বিচারে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর সাক্ষীস্বরূপ; যদিও তা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে হয় (৪:১৩৫)। এই আয়াত থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়—হক ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে স্বজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অবশ্যক। ইসলামি রাষ্ট্রে কর্মরত সব অফিসার কর্মকর্তা এবং ছোট-বড় দায়িত্বশীলদের যোগ্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে আফসোসে হূদ্যতা ও স্নেহের আচরণ থাকা জরুরি। উচ্চপদস্থদের কর্তব্য হলো অধীনস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সদাচরণ করা। যদি অফিসারগণ অধীনস্থদের সঙ্গে সদাচরণ করেন, তাহলে অধীনস্থরাও নিজ নিজ কর্তব্য ও দায়িত্ব ভালোভাবে আঞ্জাম দেবে। সুন্নাহর আলোকে উচ্চপদস্থ অফিসার ও রাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সীমাতিরিক্ত আড়ম্বরতা ও জাঁকজমক প্রদর্শনের কোনো সুযোগ নেই। এ কারণে রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন :হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোনো দায়িত্ব লাভ করে, এরপর তাদের সঙ্গে কঠোরতা করে, আপনি তার প্রতিও কঠোরতা করুন। আর যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোনো দায়িত্ব লাভের পর তাদের প্রতি সদয় হয়, আপনিও তার প্রতি সদয় হোন। ইসলাম সরকারি পদ ও সম্পদের যথাযথ ও দায়িত্বপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করেছে।
Latest News Bd
রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ও সম্পদের দায়িত্বশীলদের জন্য আবশ্যক হলো, সর্বাবস্থায় তারা রাষ্ট্রের উপকার ও স্বার্থের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখবেন। সব ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি ও ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালন করবেন, এমনকি যে বিষয়গুলো আংশিক বা পরিপূর্ণভাবে রাষ্ট্রের উপকার সাধন করে, সেই সব ক্ষেত্রেও। এ প্রসঙ্গে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন :শ্রেষ্ঠতম উপার্জন হলো শ্রমিকের নিজ হাতের উপার্জন, যখন সে কল্যাণকামী হয়। এই হাদিস অনুসারে নিজ হাতে উপার্জনকারীর উপার্জনকে শ্রেষ্ঠ সাব্যস্ত করা হয়েছে কল্যাণকামী হওয়ার শর্তে। সরকারি কর্মকর্তার জন্য রাষ্ট্রের প্রতি কল্যাণকামী হওয়ার অর্থ হলো, সে সর্ববিষয়ে উপকারের দিককে প্রাধান্য দেবে। প্রত্যেক দায়িত্ব বা পদে কর্মরত ব্যক্তির সঙ্গে প্রথমে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের ও কর্মকর্তার মধ্যে একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়। এটিকে কর্মের চুক্তিপত্র বলা হয়ে থাকে। যে শর্তগুলোর ভিত্তিতে এই দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি সম্পন্ন হয়, সেই শর্তগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে আদায় করা সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কর্তব্য।
লেখক :বীর মুক্তিযোদ্ধা, পরিচালক :বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কো. লি. ও ইসলামি গবেষক
Latest News Bd
newsInBangla Latest News Bd Newspostbd
ক্যাম্পাস অর্থনীতি শিক্ষা মতামত দূর্ঘটন রাজধানী