নির্বাচনের আগেই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার-সন্ত্রাসী-জঙ্গি দমনে বিশেষ অভিযান

প্রকাশিত: ৯:২০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৬, ২০২৩

Newspostbd 

এসএম দেলোয়ার হোসেন:
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও ভাড়াটে পেশাদার সন্ত্রাসীদের ধরতে শিগগিরই দেশব্যাপি চালানো হবে বিশেষ অভিযান। এছাড়া নির্বাচনের আগে জঙ্গি দমনসহ যে কোন ধরনের সহিংসতা রোধেও নেওয়া হয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা। অপরদিকে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়া নির্দেশনাও আসছে। পাশাপাশি সীমান্তে অস্ত্র চোরাচালান রোধেও বিশেষ নজরদারি চালানো হবে। আজ রোববার (৬ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ইসিসহ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিবারই জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা ভোটারদের নিজেদের অনুসারি করতে নানা কৌশলে পেশীশক্তি বা অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার করে থাকে। সাধারণ ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শণেও বহিরাগত ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় সশস্ত্র মহড়াও দেয়। এসব কিছু মাথায় রেখে নির্বাচন কমিশন দেশবাসীকে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে নানা কুট-কৌশল অবলম্বন করে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে থাকে। (Newspostbd )তারই ধারাবাহিকতায় এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটাররা যাতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে কেন্দ্রে গিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের প্রতি ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সে লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনও নানামূখী তৎপরতা শুরু করেছে। এবারের নির্বাচনে পেশীশক্তি, জাঙ্গিবাদের উত্থান বা অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ঠেকাতে ইতোমধ্যেই সরকার তথা নির্বাচন কমিশন নানান পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। নির্বাচনের আগেই যে কোনো ধরণের সহিংসতা ঠেকাতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দমন করতে দেশব্যাপি বিশেষ অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে। একইসঙ্গে বৈধ অস্ত্রগুলোর অবৈধ ব্যবহার রোধে তা জমাদানের নির্দেশনাও দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে সাধারণ ভোটাররা যাতে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বিঘেœ কেন্দ্রে প্রবেশ করে ভোট প্রদান করতে পারে সে লক্ষ্যেও কাজ করছে সরকার তথা নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচনের আগেই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার-সন্ত্রাসী-জঙ্গি

দমনে বিশেষ অভিযান

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, নির্বাচনের আগে আমাদের বিশেষ অভিযানের পরিকল্পনা রয়েছে। ওই সময় বৈধ অস্ত্রগুলো কোথায় আছে তার হিসাব মেলানো হবে। এবং জমা দেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হবে। পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে জোর অভিযান সব সময়ই চলে আসছে। প্রতি মাসের ক্রাইম কনফারেন্সে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের প্রতি ইউনিটগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

নির্বাচনের আগেই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার-সন্ত্রাসী-জঙ্গি

দমনে বিশেষ অভিযান

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সম্প্রতি দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে গেছে। এই সুযোগে একটি মহল দেশে সহিংসতা করে ফায়দা লুটতে চাচ্ছে। ওই মহলটি সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র আনছে বলে পুলিশের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সম্প্রতি সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র আনা হচ্ছে মর্মে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মুখ থেকেও একটি বক্তব্যে বের হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেন গোয়েন্দারা। তারা ব্যাপক অনুসন্ধান করে এর সত্যতা পান। এরই প্রেক্ষিতে পুলিশের গোয়েন্দারা বিশেষ অভিযানের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে সরকারের ঊর্দ্ধতনদের জানান। বিষয়টি যাচাই-বাছাই শেষে সেপ্টেম্বর মাসে এই বিশেষ অভিযান চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। যদিও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি মন্ত্রনালয় ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা

নির্বাচনের আগেই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার-সন্ত্রাসী-জঙ্গি

দমনে বিশেষ অভিযান

এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা, রাজধানী ও চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনা বেড়ে গেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অস্ত্র উদ্ধারের চলমান অভিযানকে সফলতা বলা হলেও গোয়েন্দারা মনে করছে, এর বাইরে আরো অনেক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দেশে প্রবেশ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত ৩০ জুলাই রাজধানীর শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ইসমাইল হোসেন ওরফে বাচ্চুুর ব্যক্তিগত সহকারী মানিক গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনায় তাদের দুজনকেই গ্রেফতার করে গোয়েন্দারা। প্রথমে বিষয়টি ছিনতাইকারীর হাতে গুলিবিদ্ধ বলে প্রচারণা চালানো হলেও পরে একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় বাচ্চুর ব্যাক্তিগত অস্ত্র থেকেই গুলিটি বের হয়। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, ইসমাইল হোসেন নিজেই তার অস্ত্র দিয়ে তার ব্যক্তিগত সহকারী মানিককে গুলি করতে পারেন। তারপর ছিনতাইয়ের ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। এ কারণে নির্বাচনের আগেই বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশনা আসছে।

নির্বাচনের আগেই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার-সন্ত্রাসী-জঙ্গি

দমনে বিশেষ অভিযান

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দেওয়া তথ্যমতে, জুলাই মাসে ১ টি পিস্তল, ১ টি এয়ার পিস্তল, ১ টি বন্দুক, ৯৫ কেজি সালফার ও ৪৩৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে। জুন মাসে ১ টি পিস্তল, ২ টি ম্যাগজিন, ১ টি মর্টার শেল, ১৬ রাউন্ড গুলি ও ১০ কেজি পেট্রল বোমা তৈরির পাউডার উদ্ধার হয়েছে। গত মে মাসে সীমান্ত এলাকায় চলতি বছরের সর্বোচ্চ আটটি পিস্তল জব্দ করা হয়। সাথে ছিলো ৪০ রাউন্ড গুলি ও আটটি ম্যাগাজিন। যা গত কয়েক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ছাড়াও উদ্ধার করা হয়েছে ১০০ কেজি সালফার, সাতটি ডেটোনেটর ও চারটি বিস্ফোরক স্টিক। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে সীমান্তে ৬২টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে একটি সাবমেশিনগানও (এসএমজি) রয়েছে। এর আগের ১০ বছরে মাত্র একটি এসএমজি উদ্ধার হয়েছিল। এ বছর এখন পর্যন্ত ৬৯৫ রাউন্ড গোলাবারুদ ও ২০টি ম্যাগজিন উদ্ধার করেছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী। চলতি বছরের প্রথম সাত মাস ও আগের ১০ বছরে মোট ১ হাজার ২৭৩টি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করেছে বিজিবি। এরমধ্যে পিস্তল ৫৭৯, রিভলবার ৫১, রাইফেল ১৬, দুটি এসএমজি ও বিভিন্ন ধরনের ৬২৫টি বন্দুক রয়েছে। এ ছাড়া বিপুল গোলাবারুদ জব্দ করা হয়েছে।
গোয়েন্দাদের ধারণা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সীমান্ত দিয়ে দেশে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ আনা হচ্ছে।(Newspostbd ) আর এসব অস্ত্র বাহকদের বেশিরভাগই স্থানীয় সাধারণ মানুষ। আর বড় অংশই হাতবদল হয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সেগুলোর কোনোটি আবার বিক্রির সময় বা বিভিন্ন অপরাধ সংঘটনের আগে পরে জব্দ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তাদের দেওয়া তথ্যমতে এসব অস্ত্রের গন্তব্য ছিলো ঢাকা ও দেশের বিভাগীয় শহরে।

নির্বাচনের আগেই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার-সন্ত্রাসী-জঙ্গি

দমনে বিশেষ অভিযান

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত এলাকা থেকে অবৈধ অস্ত্র রাজধানীতে প্রবেশ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকজনকে গ্রেফতারের পর এমনই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, নির্বাচন ঘিরে সহিংসতার শঙ্কা থাকে। বড় দলের প্রার্থীরা মাঠ দখলে রাখতে চান।(Newspostbd )কেন্দ্র দখল করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার প্রবণতা থাকে। সেক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারের বড় উপায় অবৈধ অস্ত্র। এ কারণে নির্বাচনের আগে অস্ত্রের চোরাচালান বেড়ে যায়। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব চালান ধরতে পারে না। ফলে নানা কৌশলে তা অপরাধীদের কাছে পৌঁছে যায়।
তিনি বলেন, অস্ত্র কারা আনছে, কারা ব্যবহার করছে, যোগানদাতা কারা সেসব খুঁজে বের করতে হবে। সীমান্তপথে এক পক্ষ অস্ত্র হস্তান্তর করছে, আরেকপক্ষ গ্রহণ করছে, সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। শুধু সমতল নয়, পাহাড়েও এখন সন্ত্রাসী ও জঙ্গিগোষ্ঠীর কাছে অস্ত্র পৌঁছে যাচ্ছে। তারা এসব অস্ত্র দিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এই প্রশিক্ষিত জঙ্গিরা যে আগামী নির্বাচনী কোনো পক্ষের হয়ে ব্যবহৃত হবে না, সেটাও বলা যায় না। তাই অবৈধ অস্ত্রের কারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

নির্বাচনের আগেই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার-সন্ত্রাসী-জঙ্গি

দমনে বিশেষ অভিযান

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার রোধে এবং সন্ত্রাসী ও জঙ্গিগোষ্ঠীর অপতৎপরতা রোধে সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। সীমান্ত দিয়ে যাতে সহসাই অস্ত্র প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে নজরদারির পাশাপাশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো এমনকি গ্রামের স্পর্শকাতর প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সন্দেহভাজনদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যে কোনো ধরণের পেশীশক্তি ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন বলেও জানিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা


newsInBangla    LatestNewsBd    Newspostbd  News bd

ক্যাম্পাস       অর্থনীতি      শিক্ষা      মতামত       দূর্ঘটন     রাজধানী