গৃহকর্মীর ছদ্মবেশে বিলকিস লুট করতেন স্বর্ণালঙ্কার-টাকা

প্রকাশিত: ৯:০১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩, ২০২৩

Newspostbd

সাইফুল ইসলাম:
রাজধানীর হাতিরঝিল থানাধীন নিউ ইস্কাটন দিলু রোডের নিজের বাসায় মাসে ছয় হাজার টাকা বেতনে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর গৃহকর্মী নিয়োগ দেন বাসার মালিক মনোয়ার আলী (৬৬)। নিয়োগের দুদিন পর ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় তিনি স্ত্রী ও গৃহকর্মীকে বাসায় রেখে যথারীতি অফিসে যান। তখন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মেয়ে ফোন করে মনোয়ারকে জানান, তার মা ফোন রিসিভ করছেন না। এরপর বাসায় ফিরে স্ত্রীকে অজ্ঞান অবস্থায় পান মনোয়ার। নূরজাহান নামের ওই গৃহকর্মীকেও বাসায় পাওয়া যায়নি। স্ত্রীকে মগবাজার ইনসাফ বারাকা হাসপাতালে নিয়ে যান। স্ত্রী সুস্থ হলে তিনি হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা করেন। শুরুতে থানা পুলিশ এবং পরে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পড়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ওপর। তদন্তের একপর্যায়ে খোঁজ মেলে ছদ্মবেশী গৃহকর্মী নূরজাহানের। জানা যায়, ওই গৃহকর্মীর আসল নাম বিলকিস। তাকে গ্রেফতারের পর পিবিআই জানায়, বিলকিস পেশাদার লুটপাটকারী চক্রের সদস্য। একেক বাসায় একেক নামে গৃহকর্মীর কাজ নিতেন। এরপর সুযোগ বুঝে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে পালাতেন। আজ বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ৬০ ফিট এলাকায় পিবিআই (ঢাকা মেট্রো-উত্তর) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম।

তিনি জানান, ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সোয়া ১১টার মধ্যে স্ত্রী রেজিনা রহমানকে (৫৫) বাসায় একা পেয়ে নুরজাহান (ছদ্মনাম) ও অজ্ঞাত আরও একজন মিলে কৌশলে তাকে অজ্ঞান করে বাসায় থাকা নগদ সাড়ে ৪ লাখ টাকা ও একটি স্বর্ণের বালা ও একটি স্বর্ণের চামচ নিয়ে পালিয়ে যায়।
গৃহকর্মীর বিষয়ে পিবিআই কর্মকর্তা বলেন, গৃহকর্মী সেজে বাসায় কাজ নিয়ে সুযোগ বুঝে কৌশলে গৃহকর্ত্রীকে অজ্ঞান করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেওয়া চক্রের সক্রিয় সদস্য নূরজাহান। তিনি বিভিন্ন সময় মোসাম্মৎ বিলকিস বেগম, কনা, রোজিনা ও নূরজাহান (৪০) নামে বাসাবাড়িতে চুরি বা লুটপাট করেছেন। গতকাল বুধবার (২ আগস্ট) রাজধানীর কোতোয়ালী থানা এলাকা থেকে বিলকিসকে গ্রেফতার করে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) একটি বিশেষ দল। তার স্বামীর বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় হলেও এখনো তিনি বাবার বাড়ি জামালপুর মেলান্দহ রুকনাই গ্রামকেস্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করেন।
বিশেষ পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পাশের বাসার দারোয়ান গোলাম মোস্তফার সহযোগিতায় ২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী মনোয়ারের নিউ ইস্কাটনের বাসায় কাজের সুযোগ নেয় নূরজাহান। মামলার বাদী সরল বিশ্বাসে ধূর্ত নূরজাহানকে তার বাসায় কাজ করার জন্য প্রতি মাসে ছয় হাজার টাকা বেতনে নিয়োগ দেন। এর দুদিন পরই ঘটে চুরির ঘটনা।

গৃহকর্মীর ছদ্মবেশে বিলকিস লুট করতেন

স্বর্ণালঙ্কার-টাকা

 

মামলা নথিভুক্ত হওয়ার পর হাতিরঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রহমত উল¬াহ রনি তদন্তের দায়িত্ব পান। তিনি তদন্ত শেষে মামলার ঘটনায় আদালতে চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। হাতিরঝিল থানা পুলিশের দাখিল করা প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বাদীর না-রাজির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। এরপর ওই মামলা তদন্ত করছিল ঢাকা মেট্রো (উত্তর)। পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রবিউল ইসলাম মামলার মূল রহস্য উদঘাটন, বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গৃহকর্মী সেজে কৌশলে বাসার লোকজনকে অজ্ঞান করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেওয়া চক্রের সদস্যদের শনাক্তকরণসহ গ্রেফতারে একটি টিম গঠন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার গ্রেফতার হন নূরজাহান।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর বলেন, নূরজাহান ঢাকা শহরের বিভিন্ন বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে ভিন্ন নাম-ঠিকানা ব্যবহার করতেন। জিজ্ঞাসাবাদে নূরজাহান ওই বাসায় লুটপাটের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি হাতিয়ে নেওয়া স্বর্ণালংকার ডিএমপি ঢাকার খিলক্ষেত থানা এলাকা এবং জামালপুরের ইসলামপুর থানা এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির করার কথা জানিয়েছেন।(Newspostbd)
পিবিআইপ্রধান (ঢাকা মেট্রো-উত্তর) বলেন, ঢাকা মহানগর এলাকার বিভিন্ন বাসায় একই কৌশলে ভিন্ন নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কথাও স্বীকার করেছেন নূরজাহান। পিবিআই অনুসন্ধানে জানতে পেরেছে, নূরজাহানের নামে রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানা, ভাটারা থানা, উত্তরা পশ্চিম থানায় মোট চারটি চুরির মামলা রয়েছে

Newspostbd

শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় আসামি বিলকিস নামে সোহেলের বাসা থেকে ৪০ হাজার টাকা, ভাটারা থানার মামলায় রোজিনা (৩৮) নামে ভুক্তভোগী সিদ্দিকুর রহমানের বাসা থেকে নগদ ১০ লাখ টাকা ও প্রায় তিন ভরি ওজনের বিভিন্ন প্রকারের স্বর্ণালংকার লুট করেন। উত্তরা পশ্চিম থানার মামলায় কনা নামে ভুক্তভোগী মুশফিক ইসলামের বাসা থেকে নগদ দেড় লাখ টাকা ও সোয়া পাঁচ লাখ মূল্যের স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান। এ তিন থানার মামলার ঘটনায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ, যা বর্তমানে বিচারাধীন। এই চোর চক্রটির নেপথ্যে আরও কেউ আছে কি না- জানতে চাইলে পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর বলেন, নূরজাহানের সঙ্গে আর কারও যোগসাজশ রয়েছে কি না তা জানতে রিমান্ড চেয়ে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।


newsInBangla    LatestNewsBd    Newspostbd

ক্যাম্পাস       অর্থনীতি      শিক্ষা      মতামত       দূর্ঘটন     রাজধানী