একটি ব্যাগেই বেরিয়ে এলো মেছের আলী হত্যার রহস্য

প্রকাশিত: ২:০৩ পূর্বাহ্ণ, জুন ৬, ২০২৩

এসএম দেলোয়ার হোসেন:
রাস্তায় ফেলে যাওয়া একটি ব্যাগের সূত্র ধরেই বেরিয়ে এসেছে মেছের আলী হত্যার রহস্য। এ ঘটনায় জড়িত মো. রমজান আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত রোববার (৪ জুন) রাতে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার মাওনা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির খিলক্ষেত থানা পুলিশের একটি দল। গতকাল সোমবার (৫ জুন) রাতে অনলাইন বাংলা নিউজ পোর্টাল নিউজ পোস্ট বিডি ডটকমকে এ তথ্য জানান গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম।
তিনি বলেন, গত ২৩ মে বিকেলে খিলক্ষেত থানার বরুয়ার বোয়ালিয়া খাল সংলগ্ন আশিয়ান হাউজিং প্রজেক্টের বালুর চরে মেছের আলীর মৃতদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় খিলক্ষেত থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়। মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলে একটি ব্যাগ পাওয়া যায়। সেই ব্যাগ থেকে লোহার কাচি, কম্বলসহ কিছু নতুন-পুরনো কাপড় ও মিনা নামে একজনের জন্ম নিবন্ধন ও টিকা কার্ড পাওয়া যায়।
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, প্রাপ্ত ব্যাগ ও ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়। জন্মসনদের প্রেক্ষিতে মিনাকে ও তার স্বামী শাহাবুদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মিনা ও তার স্বামী শাহাবুদ্দিন পুলিশকে জানায়, পবিত্র ঈদুল ফিতরের কয়েক দিন পূর্বে শাহাবুদ্দিন তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায় যাওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ থেকে কমলাপুর রেল স্টেশনে উপস্থিত হন। সে সময় রমজান আলী নামে এক বয়ষ্ক লোক তাকে একসঙ্গে নেত্রকোনায় যাওয়ার কথা বলে। রমজান আলী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা না করে কারওয়ান বাজার থেকে বাসে করে বিকল্প রাস্তায় যাওয়ার কথা বলে। শাহাবুদ্দিন সরল বিশ্বাসে রমজান আলীর সাথে কারওয়ান বাজার যায়। সেখানে গিয়ে রমজান আলী চা পান করার কথা বলে শাহাবুদ্দিনকে। রজমান আলী চা পান করার পর শাহাবুদ্দিনকে তার কাছে থাকা ব্যাগ ও টাকা তাকে দিতে বলে। শাহাবুদ্দিন চারশত টাকা ও তার ব্যাগটি রমজান আলীর কাছে দেয়। রমজান আলীর মোবাইল ফোন থেকে শাহাবুদ্দিন তার স্ত্রীকে জানায়, সে রমজান আলীর সাথে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে, সে একই এলাকায় যাবে। শাহাবুদ্দিন চা পান করার ফলে তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে রমজান আলী ব্যাগ ও টাকা নিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলে প্রাপ্ত ব্যাগটি শাহাবুদ্দিনকে দেখানো হলে সে তার ব্যাগটি সনাক্ত করে।
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, গত ২০ মে মেছের আলী বাসা থেকে বের হলে ওই দিন রাতে বিমানবন্দর রেলস্টেশনে রমজান আলীর সাথে পরিচয় হয়। অটোরিকসাযোগে রমজান আলী ও মেছের আলী, বড়–য়া রেলগেট এলাকায় আসে। তখন রমজান আলীর পিছনে একটি ব্যাগ ঝুলানো ছিল। ঐ ব্যাগের ভিতরেই শাহাবুদ্দিনের নিকট হতে নেওয়া ব্যাগটি ছিল। মেছের আলীকে নিয়ে রমজান আলী রেলগেটের সামনের এক দোকানে চা পান করে। চা পান করার সময় মেছের আলীর নিকট ৪ হাজার টাকা রমজান আলী দেখতে পায়। এরপর রমজান আলী কৌশলে মেছের আলীর চায়ের মধ্যে চেতনানাশক ঔষধ মিশিয়ে দেয়।
ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, নিহত মেছের আলীর কাছে থাকা ৪ হাজার টাকা নেয়াই রমজান আলীর মূল উদ্দেশ্য ছিল। মেছের আলী ও রমজান আলী চা পান করার পর বরুয়ার বোয়ালিয়া খাল সংলগ্ন আশিয়ান হাউজিং প্রজেক্টের বালুর চরে উপস্থিত হয়। কিছুক্ষণ পর মেছের আলী অজ্ঞান হয়ে গেলে রমজান আলী মেছের আলীকে একটু দূরে বড় বড় ঘাসযুক্ত জায়গায় রেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। রমজান আলী মনের অজান্তে ব্যাগটি ঘটনাস্থলে রেখে চলে যায়। এই ব্যাগের সূত্র ধরেই অপরাধীকে সনাক্ত করা হয়। খিলক্ষেত থানায় রুজুকৃত হত্যা মামলায় সোমবার দুপুরে গ্রেফতারকৃত রমজান আলীকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করলে সে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেছে বলে জানান পুলিশের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা।