অপকর্মে বরখাস্ত হয়ে ফেসবুকে মিথ্যাচার করেন মাফতুল হোসেন

প্রকাশিত: ১:৩৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চাকরিতে যোগদানের পর থেকেই উশৃঙ্খল ও অনিয়মিত কর্মচারী হিসেবে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বরখাস্ত হওয়া অফিস সহকারী মাফতুল হোসেন। তাকে বহুবার কারণ দর্শানোসহ দুইবার সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এরপরও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন সময়ে তর্কে লিপ্ত হওয়া, হাতাহাতি করতে উদ্যত হওয়া, আগত সেবা প্রার্থিদের সঙ্গে খারাপ আচরণসহ মারধরের ঘটনা ঘটানো, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপরে আদেশ অমান্য করাসহ প্রায়শই অনুমতি ব্যতীত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা এবং দায়িত্বে অবহেলার মতো ঘটনা ঘটান।

সবশেষ বিনা কারণে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অপরাধে তাকে বরখাস্ত করা হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের লাইভে গিয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মো. নূরুল আনোয়ারসহ অন্য একজন কর্মকর্তাকে নিয়ে মিথ্যাচার করেন। যা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নজরে আসে এবং বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা মাফতুলের এ কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
সোমবার সন্ধ্যায় অধিদপ্তরের কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মলনে লিখিত বক্তব্যে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পাসপোর্ট, ভিসা ও ইমিগ্রেশন) সেলিনা বানু এসব অভিযোগ করেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক এ. টি. এম আবু আসাদ, পরিচালক (অর্থ) শিহাব উদ্দিন খান, পরিচালক (পাসপোর্ট ও পরিকল্পনা) মাজহারুল ইসলাম, পরিচালক (পাসপোর্ট ও ভিসা) নাদিরা আক্তার প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বরখাস্ত হওয়া অফিস সহকারী (কাম-কম্পিউটার মুদ্রারিক) মাফতুল হোসেনের চাকরি স্থায়ীকরণের আগে থেকেই শৃঙ্খলা বিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ বিষয়ে কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গেলে নানাভাবে কর্তৃপক্ষকে রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা তার নিত্তনৈমিত্তিক অপকর্মের অংশ ছিল। সে ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি এক সহকর্মীকে মারধর করে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন। ২০১৮ সালে তাকে চাঁদপুর থেকে ঢাকায় বদলি করা হয়। তখন তাকে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের জন্য অব্যাহতি দেওয়ার ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও যোগদান করেননি। ২০২১ সালের ২৪ জুলাই থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত ১৮ দিন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে অনুপস্থিত থাকেন। একই বছরের এক সেপ্টেম্বর নূরনবী নামে এক পাসপোর্ট আবেদনকারীকে ফেনী অফিসে মারধর করেন। সে সময় প্রশাসনিক শাখা থেকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হলে তা তিনি ছিড়ে ফেলেন এবং ফেনীর অফিস প্রধানের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। বিভিন্ন সময়ে তাকে বদলি করা হলে বদলিকৃত কর্মস্থল তার কাঙ্ক্ষিত না হলে তিনি সেখানে যোগদান করতেন না বরং বদলি আদেশ স্থগিতের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে তদবির করতেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সর্বশেষ মাফতুল হোসেনকে ফেনী থেকে প্রধান কার্যালয়ে বদলি করা হলে তিনি যথাসময়ে যোগদান করেননি। প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ১২৯ কর্মদিবসের মধ্যে ৮৪ দিন অনুপস্থিত থাকেন। যে কারণে আভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বিনষ্ট ও অসদাচরণের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে পুনরায় তদন্ত পূর্বক বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয় এবং পরবর্তীতে বিধি অনুযায়ী তাকে বরখাস্ত করা হয়। অথচ ফেসবুক লাইভে মাফতুল হোসেন উল্লেখ করেন যে, অসুস্থতার কারণে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন, এ বিষয়েটি মানবিকভাবে বিবেচনা না করে উল্টো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- যা একেবারেই অবান্তর, অযৌক্তিক এবং অসত্য একটি বক্তব্য। নতুন ডিজি অধিদপ্তরে যোগদানের পর মাফতুল হোসেনের মতো উশৃংখল ও দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। যাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন মাফতুল হোসেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে অফিস থেকে সংগ্রহ করা মাফতুলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিক বার কল দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।